পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনে বাংলাদেশের এখন বিশ্বজোড়া স্বীকৃতি রয়েছে
বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধব কারখানার মধ্যে অর্ধেকই বাংলাদেশের। এটি বেশ আশাজাগানিয়া ও অনুপ্রেরণার। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ট্র্যাজেডির পর পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপন ও কারখানায় উন্নত কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে জোর দেওয়া হয়।
ইউএসডিবিসি নামে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান নিয়মিতভাবে পৃথিবীর সেরা পরিবেশবান্ধব কারখানার ওই তালিকা প্রকাশ করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি দুনিয়াজুড়ে পরিবেশবান্ধব কারখানার ওপর কাজ করে থাকে।
বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানাকে করছাড় দেওয়ার উদ্যোগ যেমন আছে, তেমনি পরিবেশ দূষণকারী কারখানার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধানও আছে।
পরিবেশ দূষণকারী কারখানার ওপর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আরোপ করা হয়। সেটি এ রকম, পরিবেশবান্ধব নয়, এমন কারখানার উৎপাদিত পণ্যের মোট মূল্যের ওপর ১ শতাংশ হারে সারচার্জ আদায় করা।
তখন এটি ‘সবুজ কর’ নামে পরিচিতি পায় এবং সব মহলে তা প্রশংসিতও হয়। কিন্তু পরের বছরগুলোতে আর সেই প্রশংসার রেশ ধরে রাখা যায়নি। গত সাত বছরে সব মিলিয়ে আট কোটি টাকার মতো পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আদায় করতে পেরেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। শুধু তাই নয়, পরিবেশ অধিদপ্তরও এখন পর্যন্ত কারখানার তালিকা হালনাগাদ করতে পারেনি।
এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, প্রথম বছরে (২০১৪-১৫) মোট ২৫ লাখ ৭৬ টাকা আদায় হয়েছে। এরপরে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১৯ লাখ টাকা ও ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ১৬ লাখ টাকা আদায় হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৪ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ও ২০২০–২১ অর্থবছরে প্রায় এক কোটি টাকা আদায় হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আদায়ের উদ্যোগটি বেশ ভালো।
কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ তালিকা নিয়মিত দেওয়ার কথা থাকলেও তারা সেটি কয়েক বছর আগে একবারই দিয়েছে। এরই মধ্যে অনেক কারখানা তালিকা থেকে বের হওয়ার জন্য আবেদন করেছে। আবার কিছু কারখানা পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় ঢুকতে পারে।
এসব বিবেচনায় মাঠপর্যায়ে পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আদায় করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, কোন প্রতিষ্ঠান পরিবেশ দূষণ করে আর কোনটি করে না—তা পরিবেশ অধিদপ্তরই ঠিক করে থাকে। ভ্যাট কর্মকর্তাদের পক্ষে তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়।
ভ্যাট কর্মকর্তারা বলেন, পরিবেশ দূষণ করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আরোপের মূল কারণ হলো মালিকদের বর্জ্য শোধনাগার ব্যবহারে বাধ্য করা। অর্থাৎ কারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য যেন মাটি, পানি, বাতাসসহ পরিবেশ দূষিত না করে।
এ ব্যাপারে সারচার্জ আদায় নীতিমালাও জারি করে এনবিআর। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর ২০১৫ সালে পরিবেশ দূষণকারী সাড়ে সাত শ প্রতিষ্ঠানের প্রাথমিক তালিকা দেওয়ার পর আর কাজটি করেনি।
ফলে কতটি প্রতিষ্ঠান এখন নিজেদের উন্নয়ন করেছে কিংবা নতুন করে কতটি কারখানা পরিবেশ দূষণ করছে, তা ভ্যাট কর্মকর্তারা জানতে পারছেন না। তাই পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আদায়েও কোনো গতি নেই।
পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) আবদুল হামিদ বলেন, ‘সারচার্জ আরোপের উদ্যোগটি ভালো। পরিবেশ দূষণ কমাতে এটি বেশ কার্যকর। আমি এ অধিদপ্তরে নতুন এসেছি। তাই এত দিনেও কেন পরিবেশ দূষণকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকা হালনাগাদ করা হয়নি, সেটি জেনে বলতে হবে।’
পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আদায়ের দায়িত্বে রয়েছে এনবিআরের মূসক বা ভ্যাট বিভাগ। তবে রংপুর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ঢাকা পূর্ব ভ্যাট কমিশনারেট ছাড়া অন্য কোনো ভ্যাট কমিশনারেটের অধীনে সারচার্জ আদায় হয়নি।
প্রতি মাসে ভ্যাট আদায়ের তথ্য এনবিআরের প্রদানের সময় পরিবেশ সুরক্ষা সারচার্জ আদায়ের তথ্য দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও তা নিয়ে ভ্যাট কর্মকর্তারা গড়িমসি করে বলে জানা গেছে।