নদী দূষণের বিরূপ প্রভাবের ফলে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য
নদীর পানি দূষণ হয় রাসায়নিক পদার্থ থেকে এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক পানিতে মিশে। এই দূষিত পানি পান করার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে প্রজননতন্ত্র পর্যন্ত ক্ষতি হয়।
নদীর পানি দূষিত হওয়ায় তা খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে চলে আসে। তখন তা শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অপুষ্টির সমস্যা তৈরি করে। তাই নদীতে পলিথিন ফেলা যাবে না, প্লাস্টিক বোতল ফেলা যাবে না, চিপসের প্যাকেট ফেলা যাবে না— এই বিষয়গুলো জনগণকে সচেতন করা প্রয়োজন।
শনিবার (৩০ জুলাই) নদীদূষণ রোধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে ‘নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শিরোনামে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ কনসোর্টিয়ামের দূষণবিরোধী ‘নদী কথন’ অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী বসিলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের উন্মুক্ত স্থানে এই নদীকথন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ-এর সমন্বয়ক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় ‘নদী দূষণের স্বাস্থ্যগত প্রভাব’ শীর্ষক এই অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন— বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসের আঞ্চলিক উপদেষ্টা (পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন) ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য বিভাগের অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর, পলিসি অ্যান্ড ফুড সিস্টেম অ্যাট গ্লোবাল অ্যালাইন্স ফর ইমপ্রুভড নিওট্রিশনের প্রকল্প পরিচালক মন্দিরা গুহ নিয়োগী, নদীপাড়ের কম্যুনিটির প্রতিনিধি মোহম্মদ মানিক হোসেন ছাড়াও নদীদূষণ রোধে কাজ করেন— এরকম স্থানীয় কমিউনিটি-ভিত্তিক সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানটিতে অংশ নেন।
শরীফ জামিল বলেন, ‘সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে— নদীকে যেমন রক্ষা করা যাবে, ঠিক তেমনই স্বাস্থ্যগত সমস্যারও সমাধান করা সম্ভব হবে।
আমাদের নদী রক্ষা না করতে পারলে আমাদের নদীমাতৃক দেশকে রক্ষা করা যাবে না। আর আমাদের দেশের প্রাণকেন্দ্র ঢাকাকে বাঁচাতে হলে বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে হবে।’
নারী মৈত্রীর শাহীনুর আক্তার বলেন, ‘নদীতে পলিথিন ফেলা যাবে না, প্লাস্টিক বোতল ফেলা যাবে না, চিপসের প্যাকেট ফেলা যাবে না— এই বিষয়গুলো জনগণকে জানানো অত্যন্ত প্রয়োজন।’
অধ্যাপক হাসনাত এম আলমগীর বলেন, ‘দূষণ বিরোধী চলমান যে কার্যক্রম আছে, সেগুলো জোরালোভাবে পরিবীক্ষণ করা হলে নদী দূষণ রোধ করা সম্ভব হবে।’
ডা. আবু মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘নদী দূষণ, অর্থাৎ নদীর পানি দূষণ হয় রাসায়নিক পদার্থ থেকে এবং কৃষিকাজে ব্যবহৃত কীটনাশক পানিতে মিশে, এই দূষিত পানি পান করার ফলে মানুষের মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে প্রজননতন্ত্র পর্যন্ত ক্ষতি হয়।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় কিডনি এবং যকৃৎ। শিশুদের হাঁপানি, হৃদপিণ্ড, শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অন্যান্য পানিবাহিত রোগ হয়।’
মন্দিরা গুহ নিয়োগী বলেন, ‘নদীর পানি দূষিত হওয়ায় তা খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারে চলে আসে, তখন তা শিশুদের শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এবং অপুষ্টির সমস্যা তৈরি করে। তাই নদী দূষণ রোধে জনসচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।’