নদী কীর্তিনাশার ইতিহাস
জলের অমন প্রবল ধারাটি বিক্রমপুরের যে অংশ ভেদ করে পদ্মা মেঘনাদের সাথে মিলিত হয়েছে, অনেকের মতে পদ্মার গতি বিক্রমপুরের পশ্চিম দিক ছেড়ে মরা—পদ্মা নামে এক প্রবলাংশ যা প্রায় শত বৎসর মধ্যে উদ্ভব হয়ে প্রাচীন কালীগঙ্গা নদীর বিলোপ সাধন করেছে, আর সেটাই কীর্তিনাশা নামে পরিচিত।
১৭৮১ খ্রি. মেজর রেনেলের মানচিত্র হতে দেখা যায়, পূর্বে পদ্মা নদী বিক্রমপুরের অনেকটা পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভূবনেশ্বরের সাথে মিলিত ছিল। সে সময়ে কীর্তিনাশা বা নয়া ভাংগনী নামে কোনও নদী ছিল না। বিক্রমপুরের রাজানগর ও ভদ্রেশ্বর গ্রামের মধ্যে একটি অপ্রশস্ত জলপ্রণালি ছিল।
১৭৮৭ খ্রীষ্টাব্দের প্রবল বন্যার জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহের পরিবর্তন হয়। ১৭৬৪ খ্রি. মেজর রেনেল ঢাকার উত্তরাংশেই ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনাদ নদের সম্মেনলন দর্শন করেছিলেন। আইন-ই-আকবরি গ্রন্থ পাঠে অবগত হওয়া যায় যে, ষোড়শ শতাব্দীতে সেটাই ব্রহ্মপুত্রের প্রধান স্রোত ছিল।
রেনেলের জরিপে প্রায় অর্ধ শতাব্দীকালমধ্যে ব্রহ্মপুত্রের প্রধান স্রোত ঢাকার পশ্চিম দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জাফরগঞ্জের কাছে গঙ্গার সহিত মিলিত হয়েছিল। এই সম্মিলিত প্রবাহ রেনেলের উল্লেখিত নালা ও ফরিদপুরের অন্তর্গত পাচ্চরের মধ্যস্থিত পদ্মার প্রাচীন খাত পরিত্যাগ করিয়া ইতিহাস—প্রসিদ্ধ রাজাবাড়ি মঠের কিঞ্চিৎ দক্ষিণে মেঘনাদের সাথে মিলিত ছিল। ১৮০০ খ্রি.-এর পূর্বে ওটা মেঘনা থেকে উৎপন্ন হয়ে পদ্মার প্রাচীন প্রবাহ-মধ্যে এসে পতিত হয়েছে।
রাজানগর পরগনা সাধারণত পদ্মা ও কালীগঙ্গা নদীর সঙ্গমস্থলের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত ছিল। এই কালীগঙ্গা নদী খুলে যাওয়ায় ১৮১৮ খ্রি. মধ্যের পদ্মা নদী মেঘনা নদে প্রবেশ লাভ করবার আভিনব পথ প্রাপ্ত হয়েছিল। বলা বাহুল্য যে, এই অভিনব পথটিই স্বনামধন্য কীর্তিনাশা।
১৮৬৬ খ্রি. কীর্তিনাশা রাজনগরের পূর্বদিকস্থ পথে প্রবাহিত হয়। ১৮৭১ খ্রি. রাজনগরের সমস্ত কীর্তি নদিগর্ভে বিলুপ্ত হয়। এই নদী প্রথমে রথখোলা, পরে ব্রহ্মবধিয়া, পরে কাথারিয়া এবং সর্বশেষে কীর্তিনাশা নামে পরিচিত হয়ে আসছে। এই কীর্তিনাশার প্রভাবেই এখন উত্তর ও দক্ষিণ বিক্রমপুর দুই ভাগে বিভক্ত।