ধুলা আর দূষণে জনজীবন বিপর্যস্ত গাজীপুরে। দিন দিন বেড়েই চলেছে এ দূষণ। বায়ু দূষণের মাত্রা এখন রাজধানী ঢাকাকেও ছাড়িয়ে গেছে এখানে।এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী ও যানবাহনে চলাচলকারী মানুষ।নগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে কোনাবাড়ি পর্যন্ত সড়ক-মহাসড়কে প্রতিনিয়ত ধুলায় জনজীবন বিপর্যস্ত। অতিরিক্ত ধুলাবালি বাতাসে যোগ হয়ে মাঝে-মধ্যেই ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে পুরো এলাকা।
ফলে এলাকাবাসী ও পথচারীদের অনেকেই হাঁচি-কাশিসহ ব্রঙ্কাইটিসের মত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। রাজপথে ধুলা এমনভাবে বাড়ছেযে শ্বাস-প্রশ্বাসে বিশুদ্ধ বাতাস নেয়ারও সুযোগ নেই। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ছেন নগরবাসী ও যানবাহনে চলাচলকারী মানুষ। এই দূষণ রোধে পরিবেশ অধিদফতর ও সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘ কিংবা স্বল্প মেয়াদি তেমন কোনো উদ্যোগই চোখে পড়েনি নগরবাসীর।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি প্রচন্ড বায়ুদূষণ এখন নিত্য সঙ্গী। এই দুটি মহাসড়কে বিআরটি প্রকল্প, সাসেক প্রকল্প চলমান থাকায় এখানে প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে।
এ সম্পর্কে জানতে চাইলে গাজীপুর মহানগর উত্তর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার মাজহারুল ইসলাম বলেন, গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা পর্যন্ত বিআরটি প্রকল্পের চলমান কাজের কারণে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে প্রচন্ড ধুলা সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে নির্মাণ কাজের মালামাল আনা-নেয়ার সময় এমনকি রাস্তার পাশে আলগা পাথর রাখার সময় প্রচন্ড রকমের ধুলা সৃষ্টি হচ্ছে। মহাসড়কের এ অংশে দিনে দুইবার পানি ছিটানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও বিআরটি প্রকল্পের পক্ষ থেকে নিয়মিত ও পর্যাপ্ত পানি দেয়া হয় না। কোনো দিন দুইবার পানি ছিঁটালেও বেশিরভাগ সময়ই একবার পানি দেয়। এতে কিছুক্ষণের মধ্যেই পানি শুকিয়ে গিয়ে আবার ধুলার সৃষ্টি হয়। এছাড়া বিআরটি কর্তৃপক্ষ সকালে পানি দিতে দিতে বেশ বেলা হয়ে যায়। সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার সময় মানুষ যখন অফিস বা গন্তব্যে ছুটতে থাকে তখন রাস্তায় পানি ছিটায়। সচেতন পথচারীরা মহাসড়কের এ অংশ অতিক্রম করার সময় মুখে মাস্ক পড়েন। শুধু ধুলাবালিই নয় গাজীপুরের বিভিন্ন ইটভাটার ধোঁয়াও প্রতিনিয়ত গাজীপুরের বায়ুকে দূষিত করছে।
কোনাবাড়ীর বাসিন্দা সানোয়ার হোসেন বলেন, গাজীপুর মহানগরীর কড্ডা, বাইমাইল, ইসলামপুর, বাসনসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকশ’ ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার অধিকাংশের মালিকরা কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছেন না। ইচ্ছেমত গাছ পোড়াচ্ছে, নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনী ব্যবহার করছে না। কিংবা নির্দিষ্ট উচ্চতার চিমনী ব্যবহার করলেও চিমনীতে কোন ছাঁকনি ব্যবহার করা হচ্ছে না। এতে ইটভাটার কালো ধোয়া এবং কালো ছাঁই গিয়ে ইটভাটার আশপাশ এলাকা ছাড়াও কয়েক মাইল দূরে থাকা মানুষের ঘরবাড়ি এবং পাছপালার ওপর গিয়ে পড়ছে।
গাজীপুরের বায়ুদূষণ সম্পর্কে গাজীপুর-কক্সবাজার রুটে চলাচলকারী এনা পরিবহনের চালক আবুল হোসেন বলেন, গাজীপুরের মত এত বায়ুদূষণ আর কোথাও দেখা যায় না। চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত বাতাসে ধুলার পরিমাণ খুব বেশি। ভোরে ও রাতে ধুলা ও কুয়াশা মিলে এক রকমের ধোঁয়াশা সৃষ্টি করে। এতে অল্প দূরেই সামনের রাস্তায় কিছু দেখা যায় না। এ যেকোন সময় মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে হয় জানিয়ে গাজীপুর মহানগর দক্ষিণ ট্রাফিক পুলিশের সহকারী কমিশনার থোয়াই অং পরু মারমা বলেন, গাড়ি চলাচলের সময় দিন-রাত ধুলা উড়তে থাকে। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে আমাদের সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা রক্ষার কাজ করতে হচ্ছে। ধুলায় আক্রান্ত হয়ে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর শাহাদত হোসেন ও সার্জন মো. হোসেনুজ্জামানসহ অনেকেই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
বিআরটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপক মোমেনুল ইসলামের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্প এলাকায় প্রতিদিন কমপক্ষে দুইবার পানি ছিটানো হচ্ছে। তবে রোদের কারণে পানি শুকিয়ে যায়। তারপরও প্রয়োজনে কোনো কোনো এলাকায় দুইবারেরও বেশি পানি ছিটানো হয়। সড়কে গাড়ির অতিরিক্ত চাপ থাকায় অনেক সময় কাজটি করতে বেশ বেগ পেতে হয়।
এদিকে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সহকারী প্রকৌশলী (পানি) নজরুল ইসলাম জানান, ওই প্রকল্প আমাদের আওতাভুক্ত নয়। তারপরও সহযোগিতা চাইলে আমরা পানি সরবরাহ করবো। এখনও পর্যন্ত গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ওই প্রকল্পের ধুলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো হচ্ছে না।
কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এই ধুলাবালি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক। সড়ক ও জনপদ বিভাগসহ যারা সড়কে কাজ করছে তাদেরকে লিখিত ও মৌখিকভাবে বলেছি। এসবের বিরুদ্ধে অভিযানও চালাচ্ছি। এরপরও যদি পরিবেশবান্ধব করে কাজ না করেন তাহলে আরো কঠোর পদক্ষেপ নেবো।