ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছে ওজোন স্তর
ওজোন স্তরের ক্ষয় অনেক বছর ধরেই গোটা উদ্বেগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক দশক ধরে ওজোন স্তর রক্ষায় স্বাক্ষরিত হয়েছে বহু চুক্তি, জারি হয়েছে নানা প্রোটোকল ও নিষেধাজ্ঞা।
তবে সম্প্রতি জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সংস্থাগুলোর যৌথভাবে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন এ নিয়ে মানুষের উদ্বেগ অনেকটা কমিয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ধীরে-ধীরে সেরে উঠছে ওজোন স্তর। পুরোপুরি সেরে উঠতে লাগবে আর মাত্র চার দশক।
১৯৮৫ সালে বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছিলেন, অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপরের ওজোন স্তর এতই পাতলা হয়েছে যে এতে একটি গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে, গবেষণায় দেখা যায় যে এই গর্তের জন্য দায়ী রাসায়নিক পদার্থ—ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (সিএফসি)।
সিএফসি হলো এক ধরনের অ-বিষাক্ত, অদাহ্য রাসায়নিক পদার্থ যেটি কার্বন, ক্লোরিন এবং ফ্লোরিনের যৌগ। এই যৌগটি অ্যারোসল স্প্রে, ফোম, প্যাকেজিং এবং রেফ্রিজারেটরে ব্যবহার করা হতো।
সিএফসির কারণেই মূলত ওজোন স্তরের ক্ষতি হয়। মূলত তিনটি অক্সিজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে ওজন অণু তৈরি করে। বায়ুমণ্ডলের দ্বিতীয় স্তর স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিচের অংশে ওজন স্তরের অবস্থান।
স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ভূপৃষ্ঠের ওপর প্রায় ১৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত। আর ওজন স্তর প্রায় ১৫ থেকে ৩৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
ওজন স্তর সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মির অধিকাংশ শোষণ করে পৃথিবীর জীবজগতকে এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। অতিবেগুনি রশ্মি প্রাণীর ডিএনএকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এ ছাড়া, ত্বকের ক্যানসারের মতো সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি বাড়ায়। ওজন স্তরের কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
যেসব পদার্থ ওজোন স্তরের ক্ষয় সাধন করে, সেসবের উৎপাদন ধীরে ধীরে কমিয়ে একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য ১৯৮৭ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর মন্ট্রিল প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়। মোট ৪৬টি দেশ এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
২০০০ সাল থেকে এই গর্ত ছোট হতে শুরু করে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০৬৬ সালের মধ্যে সম্পূর্ণ সেরে যাবে এই গর্ত।
মন্ট্রিল প্রোটোকলের মাধ্যমে নিষিদ্ধ করা পদার্থের ৯৯ শতাংশ এখন আর বায়ুমণ্ডলে নির্গমন করা হচ্ছে না। এ কারণেই সময়ের সঙ্গে ওজোন স্তরের গর্তের দ্রুত পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে।
আশা করা হচ্ছে, মন্ট্রিল প্রটোকল নীতি দেশগুলো মেনে চলতে থাকলে আগামী কয়েক দশকে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হবে।
ওজোন স্তরের গর্ত কমে এলে এটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন প্রতিরোধেও সাহায্য করবে।