ধনী দেশগুলিকে অবশ্যই ইতিহাসের আস্তাকুড়ে কয়লা বিদ্যুৎকে পাঠাতে হবে: কপ ২৬ (CoP 26) এর প্রধান অলোক শর্মা
আসন্ন জাতিসংঘের জলবায়ু বিষয়ক সম্মেলণ কপ২৬ (UN Climate Change Conference (UNFCCC COP 26)) এর সভাপতি ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার প্রতিমন্ত্রী অলোক শর্মা গত ২১ জুলাই, ২০২১ তারিখে বলেছেন যে, বৈশ্বিক উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখার লক্ষ্যে এ বছর জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আলোচনার সুফল অর্জনের লক্ষ্যে কয়লা বিদ্যুৎকে ইতিহাসের ঠিকানায় প্রেরণ করা প্রয়োজন।
ব্রিটেন আগামী নভেম্বর মাসে স্কটল্যান্ডের বন্দর নগরী গ্লাসগোতে কপ২৬ (26th Conference of the parties-COP26) নামে জাতিসংঘের পরবর্তী জলবায়ু সম্মেলন আয়োজন করতে যাচ্ছে।
এ সম্মেলনের লক্ষ্য হল ২০১৫ সালে জাতিসংঘের নেতৃত্বে জলবায়ু সংক্রান্ত প্যারিস চুক্তি (Paris Agreement) এর আওতায় দেশগুলির প্রতিশ্রুতি অনুসরণ করে আরও উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি জাগানো যাতে এ শতাব্দীতে বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যায় এবং তা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে অনেক নীচে থাকে। এ ব্যবস্থাগুলির লক্ষ্য হ’ল তাপপ্রবাহ, ঠান্ডা শীত, বন্যা এবং খরা প্রভৃতি ধ্বংসাত্মক এবং চরম আবহাওয়ার ঘটনা রোধ করা।
জলবায়ু বিষয়ক রয়টার্স এবং গ্লোবাল মিডিয়া কনসোর্টিয়ামসহ অন্যান্য অংশীদারদের সাথে সাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের অলোক শর্মা বলেন, “আমি খুব স্পষ্ট করে বলেছি যে, ”আমি COP26 কে সফল করতে চাই এবং এ লক্ষ্যে আমরা কয়লা বিদ্যুৎকে ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করতে চাই।”
কয়লা হল সবচেয়ে দূষিত শক্তির উৎস যদি না এর কার্বন নির্গমন ভূগর্ভে গৃহীত ও সঞ্চিত করার ব্যবস্থা না থাকে। যদিও সে প্রযুক্তিতে বিশ্ব এখনও পিছিয়ে আছে, বিশ্বজুড়ে বেশিরভাগ কয়লা ইউনিট কেবল কার্বন ডাই অক্সাইড, যা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী তা নির্গত দায়ী। কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রশুধু কার্বণই নির্গমনই করে না, কয়লা বিদ্যুৎ স্বাস্থ্যের জন্য নানাবিধ ক্ষতিকর দূষণকারী।
গ্রুপ অব সেভেন (Group of Seven, G-7) ভূক্ত দেশগুলি এ বছরের শেষের দিকে কয়লা বিদ্যুতের জন্য নতুন সরকারী সহায়তা বন্ধ করাসহ অনিয়ন্ত্রিত কয়লা ধারণক্ষমতা থেকে ট্রানজিশনকে ত্বরান্বিত করার প্রযুক্তি এবং নীতিগুলি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু অনেক দেশ এখনও নতুন কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে ও কয়লা উত্তোলনে অর্থায়ন এবং নির্মাণের পরিকল্পনা করছে।
জুলাই, ২০২১ এর প্রথম দিকে উত্তর-পশ্চিম ইউরোপ জুড়ে ভয়াবহ বন্যা সংগঠিত হওয়ার পর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ওরেগন জুড়ে দাবানল চলতে থাকায় ধনী ও উদীয়মান জাতির জোট গ্রুপ ২০ (G20) দেশগুলির জ্বালানি ও জলবায়ু মন্ত্রীরা জুলাইয়ের শেষের দিকে ইতালিতে বৈঠক করেছে যেখানে তারা কার্বণ নির্গমন কমানোর জন্য এবং জলবায়ু ক্ষতিপূরণের অর্থ ছাড়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
শর্মা বলেন, “আমি মনে করি G7 এগিয়ে যাওয়ার পথ দেখিয়েছে।” তিনি জানান যে, তিনি এ বছর ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের দ্বীপ দেশগুলি পরিদর্শন করেছেন, তারা G20 এর সবচেয়ে বড় কার্বণ নির্গমনকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়।
গ্রুপ ২০ (G20) গত বছর কোভিড-১৯ মহামারী শুরুর পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানী শক্তি সহায়তার জন্য কমপক্ষে ২৬ বিলিয়ন ডলার এবং পরিষ্কার শক্তির জন্য ২২৭ বিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
তিনি বলেন যে, “এই দেশগুলির মধ্যে অনেকেই জলবায়ু পরিবর্তন রোধে ইতিমধ্যে খুব উচ্চাভিলাষী। কিন্তু দেশগুলোতে বর্তমানে যে ধরণের উষ্ণায়ন আঘাত হানছে তাতে তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবচেয়ে বড় কার্বণ নির্গমনকারীদের প্রকল্পগুলি বন্ধ করা।
আসন্ন কপ ২৬(COP26) এর সভাপতি হিসাবে যুক্তরাজ্যের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলির মধ্যে একটি হল দেশগুলোকে আরো উচ্চাভিলাষী কার্বণ নির্গমন-হ্রাসের লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলির জন্য অর্থায়ন বৃদ্ধি করা।
কার্বন মার্কেট কিভাবে পরিচালনা করা উচিত এবং কার আওতায় নিয়ন্ত্রণ করা হবে- এ নিয়ে দীর্ঘদিনের মতবিরোধও কাটিয়ে উঠতে হবে। প্যারিস চুক্তির অনুচ্ছেদ ৬ এর অধীনে নিয়মগুলি অনেক দেশ জলবায়ু অর্থ সরবরাহের উপায় হিসাবে বিবেচনা করে।
এ প্রসংগে শর্মা বলেন যে, “আমি অন্যান্য দেশের মন্ত্রীদের বলেছি যে আমাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে অচল অবস্থা নিরসনে এর থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।আমাদের একটি সমাধান খুঁজে বের করতে হবে।”
Source: Down to Earth.