দেশে বিলুপ্তির পথে প্রায় ৬২ বৃক্ষ
কৃষিকাজ, পশু ও হাঁস–মুরগির খামার, বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক কাঠামো উন্নয়নসহ নানা কারণে বৃক্ষনিধন হচ্ছে।
অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া, হবিগঞ্জের রেমা কালেঙ্গা, সাতছড়ি, শেরপুরের গজনি, কক্সবাজারের খাসিয়াখালী, টেকনাফ, ইনানি, নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপ, ভোলার চর কুকরি–মুকরি ও কুমিল্লার লালমাই পাহাড়ে উদ্ভিদ নিয়ে জরিপ করেছেন।
তিনি বলেন, দেশে অনুমিত পুষ্পক উদ্ভিদের প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। কোন প্রজাতি বিলুপ্তির হুমকিতে আছে, তা নিয়ে মাঠপর্যায়ে জরিপ বা অনুসন্ধান হওয়া দরকার।
দেশে ৬৯৪ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে ৯ শতাংশ বা ৬২ প্রজাতির বৃক্ষ বিলুপ্তির হুমকিতে আছে। বৈশ্বিক বৃক্ষ পরিস্থিতি প্রতিবেদনে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর জোট (আইইউসিএন), যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান বোটানিকস গার্ডেনসহ ছয়টি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বে ৫৮ হাজার ৪৯৭ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। ইতিমধ্যে ১৪২ প্রজাতির বৃক্ষ বিলুপ্ত হয়েছে। বিলুপ্তির হুমকিতে আছে ১৭ হাজার ৫১০ প্রজাতির বৃক্ষ। বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা তালিকায় বাংলাদেশের ৬২ প্রজাতির বৃক্ষ রয়েছে।
তবে এই মূল্যায়নের সঙ্গে একমত নন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনুমিত উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা প্রায় পাঁচ হাজার। এর মধ্যে বৃক্ষ এক হাজারের বেশি। বিলুপ্তির হুমকিতে থাকা বৃক্ষের সংখ্যাও বেশি বলে এই অধ্যাপক মত দেন।
বৈশ্বিক এই প্রতিবেদনের শুরুতে বৃক্ষের একটি সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ‘বৃক্ষ হচ্ছে কাঠওয়ালা উদ্ভিদ। এর একটি কাণ্ড থাকলে কমপক্ষে এর উচ্চতা হবে দুই মিটার। একাধিক কাণ্ড হলে অন্তত একটি খাড়া কাণ্ডের উচ্চতা হবে বুকসমান ও বেড় হবে পাঁচ সেন্টিমিটার।’
বৈশ্বিক এই প্রতিবেদন তৈরির সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, তথ্য সংগ্রহের জন্য বৃক্ষ নিয়ে কাজ করে বিশ্বের এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্ক ও ব্যক্তিদের তাঁরা এই মূল্যায়নে কাজে লাগিয়েছে।
২৪১টি দেশের পরিসংখ্যান প্রতিবেদনে দেওয়া হয়েছে, সবচেয়ে বেশি প্রজাতির গাছ আছে ব্রাজিলে। প্রতিবেদন বলছে, ব্রাজিলে ৮ হাজার ৮৪৭ প্রজাতির বৃক্ষ আছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৭৮৮ প্রজাতির গাছ বিলুপ্তির হুমকিতে আছে।
বৃক্ষের একটি মাত্র প্রজাতি আছে, বিশ্বে এমন দেশ দুটি। একটি গার্নসি, অন্যটি জার্সি। দুটিই ইউরোপের দেশ। অন্যদিকে সেন্ট হেলেনায় বৃক্ষ প্রজাতির সংখ্যা ১৬টি।
এর মধ্যে ১১টি বা ৬৯ শতাংশ বিলুপ্তির হুমকিতে আছে। তুলনামূলকভাবে পরিচিত দেশের মধ্যে মাদাগাস্কারে বৃক্ষের প্রজাতি আছে ৩ হাজার ১২৯টি। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশই বিলুপ্তির হুমকিতে আছে।
প্রতিবেদন বলছে, কৃষিকাজ, গাছ কেটে কাঠ সংগ্রহে রাখা, পশু ও হাঁস–মুরগির খামার, বাসাবাড়ি ও বাণিজ্যিক কাঠামো উন্নয়ন, অগ্নিকাণ্ড, খনিজ উত্তোলন, বাণিজ্যিক বৃক্ষরোপণ, আগ্রাসী প্রজাতির বনায়ন এবং জলবায়ুর পরিবর্তন বৃক্ষের প্রজাতির জন্য হুমকি সৃষ্টি করে চলেছে।
২০২৩ সালের মধ্যে আইইউসিএন বৃক্ষের লাল তালিকা চূড়ান্ত করার যে উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিবেদনটি তারই অগ্রবর্তী উদ্যোগ। কোন দেশের কোন প্রজাতির বৃক্ষ বিলুপ্ত বা বিলুপ্তির হুমকিতে আছে, সেসব নাম প্রতিবেদনে নেই।