দেশে পরিবেশ বান্ধব শিল্পায়ন বাড়ানোর আহ্বান রাষ্ট্রপতির
শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রাপ্তদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে মন্তব্য করে তাদের পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের ধারায় যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার ২০১৯’ অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
দেশে বেসরকারিখাতে শিল্প স্থাপন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনীতিতে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯টি প্রতিষ্ঠানকে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার দেওয়া হয়। রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
উদ্যোক্তাদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, “গুণগতমানের শিল্প স্থাপন, পণ্য উৎপাদন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, জাতীয় আয় বৃদ্ধিসহ দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে আপনাদের পুরস্কৃত করা হচ্ছে। রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার প্রাপ্তির সাথে সাথে আপনাদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেল।”
পরিবেশবান্ধব এবং নতুন শিল্প স্থাপনের আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “গুণগত শিল্পায়নের নতুন ধারা এবং নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে আপনারা হবেন অন্যদের জন্য পথিকৃৎ।
আপনাদের অনুসরণ করে দেশে আরো দক্ষ ও তরুণ শিল্পোদ্যোক্তা তৈরি হবে। আপনারা পরিবেশবান্ধব শিল্পায়নের ধারায় নিজেদের সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশকে শিল্পসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবেন এ প্রত্যাশা করছি।”
শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “নির্দিষ্ট কোনো পণ্য বা সেবা খাতের উপর নির্ভরশীল না হয়ে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক গতিধারার সাথে তাল মিলিয়ে শিল্পোৎপাদনে বহুমুখী ধ্যান-ধারণা প্রয়োগ করতে হবে। এছাড়া শিল্পায়নের সাথে সাথে পরিবেশের ব্যাপারেও যত্নশীল হতে হবে।”
বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক দর্শনের আলোকে শিল্পায়নের ধারা এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে আব্দুল হামিদ বলেন, “শিল্প খাতে গুণগত উন্নয়ন ও পরিবর্তনের ফলে দেশে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পখাতের অবদান ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।”
তিনি বলেন, উৎপাদনশীলতা বাড়াতে শ্রমিকদের শ্রম ও দক্ষতা অপরিহার্য। সেজন্য মালিক-শ্রমিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উদ্যোক্তারা শ্রমিকের কল্যাণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেন রাষ্ট্রপতি হামিদ।
তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য ১০০টি ইকোনোমিক জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে কাজ চলছে। এর মাধ্যমে ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।
এসব ইকোনোমিক জোনের একটি বড় অংশ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ইকোনোমিক জোনে শিল্প স্থাপন করা হলে কর রেয়াতসহ বিভিন্ন প্রণোদনা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সমভাবে ভোগ করবেন।
চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বিশ্বব্যাপী নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় দেশে উৎপাদিত পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়ছে জানিয়ে পণ্যের গুণগতমান নিশ্চিত করে উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনার আহ্বান জানান তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বক্তব্য দেন।
পুরস্কার পেল যারা
বেসরকারি শিল্পখাতে অবদানের স্বীকৃতি এবং উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের জন্য ছয়টি ক্যাটাগরিতে রাষ্ট্রপতির শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার দেওয়া হয়।
এর মধ্যে বৃহৎ শিল্পে চারটি, মাঝারি শিল্পে চারটি, ক্ষুদ্র শিল্পে তিনটি, মাইক্রো শিল্পে তিনটি, কুটির শিল্পে দুইটি এবং হাইটেক শিল্পে তিনটি পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রত্যেককে একটি করে ক্রেস্ট এবং সম্মাননাপত্র দেওয়া হয়।
বৃহৎ শিল্পে যৌথভাবে প্রথম হয়েছে বিআরবি কেবল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশ কোম্পানি লিমিটেড। দ্বিতীয় মীর সিরামিক লিমিটেড। তৃতীয় হয় জাবের অ্যান্ড জোবায়ের ফেব্রিক্স লিমিটেড।
মাঝারি শিল্পে প্রথম হয়েছে বেঙ্গল পলিমার ওয়্যারস লিমিটেড। দ্বিতীয় নোমান টেরি টাওয়েল মিলস লিমিটেড। তৃতীয় হয়েছে যৌথভাবে অকো-টেক্স লিমিটেড এবং ক্রিমসন রোসেলা সি ফুড লিমিটেড।
ক্ষুদ্র শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে প্রমি এগ্রো ফুডস লিমিটেড। দ্বিতীয় হয়েছে মাধবদী ডাইং ফিনিশিং মিলস লিমিটেড এবং তৃতীয় হয় এপিএস হোল্ডিং লিমিটেড।
মাইক্রো শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে মাসকো ডেইরি এন্টারপ্রাইজ। দ্বিতীয় হয়েছে খান বেকেলাইট প্রোডাক্টস এবং তৃতীয় হয় র্যাভেন অ্যাগ্রো কেমিক্যালস লিমিটেড।
কুটির শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে কোর-দি জুট ওয়ার্কস এবং দ্বিতীয় হয়েছে সামসুন্নাহার টেক্সটাইল মিলস।
হাইটেক শিল্প ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। দ্বিতীয় হয়েছে ইনফরমেশন টেকনোলজি কনসালটেন্টস লিমিটেড এবং তৃতীয় হয়েছে সামিট কমিউনিকেশনন্স লিমিটেড।