দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে কোহেলিয়া নদী
কক্সবাজারের মহেশখালীর কোহেলিয়া নদীকে রক্ষার দাবি জানিয়েছেন পরিবেশ কর্মীরা। সংশ্লিষ্টরা বলছে, কথিত উন্নয়নের নামে নদী দূষিত হচ্ছে, দখল হয়ে যাচ্ছে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে কোহেলিয়া নদীকে বাঁচানো যাবে না। শনিবার সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত ‘কোহেলিয়া নদীর অধিকার’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে আলোচকেরা এসব কথা বলেন।
ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও জাতীয় নদী জোট আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কক্সবাজারের মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহে মালামাল ও পণ্য পরিবহনের উদ্দেশে মীর আক্তার হোসেন লিমিটেড ইতিমধ্যেই রাস্তা নির্মাণের জন্য কোহেলিয়া নদীর ৭ দশমিক ৪ কিলোমিটার অংশ ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করছে। এতে প্রভাব পড়ছে কোহেলিয়া নদীর দুপাশের মানুষের জীবন জীবিকায়।
লিখিত বক্তব্যে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক ও জাতীয় নদী জোটের সদস্যসচিব শরীফ জামিল বলেন, ‘কোহেলিয়া নদীকে কেন্দ্র করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে মহেশখালী ও মাতারবাড়ির কালারমারছড়া, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও হোয়ানক এই চার ইউনিয়নে বসবাসরত দরিদ্র দুই হাজারের অধিক জেলে পরিবার। রাস্তা নির্মাণ শুরুর সঙ্গে সঙ্গে উক্ত জেলে পরিবারসমূহের ওপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব শুরু হয়েছে। মহেশখালী ও মাতারবাড়ি এলাকা দেশের লবণ শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই নদী দিয়ে বছরে চার/পাঁচ মাস গড়ে দৈনিক ২০ / ২৫টি লবণের নৌকা যাতায়াত করত। অত্র এলাকায় ভারী শিল্পায়ন ও নদী ভরাটের কারণে লবণচাষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখে পড়েছে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কোহেলিয়া নদী ভরাট করে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি নাগরিকদের পক্ষ থেকে অনুসন্ধানের উদ্দেশে ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশ ও জাতীয় নদী জোটের দুটি পরিদর্শন দল নদী সংলগ্ন এলাকা পর্যবেক্ষণ করেছে। মহেশখালী-মাতারবাড়ি এলাকায় ইতিমধ্যেই কোহেলিয়া নদীর বৃহৎ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। ইউনুসখালী এলাকায় নদীর প্রায় দুই কিলোমিটার অংশও সম্পূর্ণ অংশ ভরাট করায় এই নদীর মাধ্যমে নৌ-যোগাযোগ বিঘ্নিত রয়েছে। কোনো মাছ ধরার নৌকা বা লবণ বহনকারী নৌযান এখন নদীতে চলাচল করতে পারে না, যা একসময় কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের অন্যান্য অংশের সঙ্গে যোগাযোগ ও বাণিজ্যের জন্য সুবিধাজনক ছিল। নদী ভরাটের সঙ্গেসঙ্গে সংলগ্ন প্রাকৃতিক খাল ও সুইসগেটগুলাতে ইতিমধ্যে ভরাট হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় কিছু মানুষ সব মৌসুমেই জলাবদ্ধতায় ভুগছে।’
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মুজিবুর রহমান হাওলাদার বলেন, ‘নদীকে রক্ষা করতে ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই আইন রয়েছে। স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করে সরকারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। নদী রক্ষায় হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের যে আদেশ সে অনুযায়ী আইনের প্রয়োগ করে কোহেলিয়া নদীকে রক্ষা করা জরুরি।’
মহেশখালীর কোহেলিয়া নদী রক্ষা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবু বকর বলেন, ‘আমরা কোহেলিয়া নদী রক্ষায় অনেক আন্দোলন করেছি, প্রতিবাদ করেছি। কোহেলিয়া নদীর সঙ্গে সাড়ে চার লাখ মানুষের জীবিকা জড়িত। নদী যদি ভরাট হয়ে যায়, তাহলে নদী সংশ্লিষ্টরা বিপদে পরবেন। লবণ উৎপাদনের জমি ধ্বংস হয়ে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় নদী জোটের আহ্বায়ক শারমীন মুরশিদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার এবং জাতীয় নদী জোটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাইদা রোক্সানা খান।