34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:৫৮ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
দিন দিন বিলীন হচ্ছে সুন্দরবনের সুন্দরী বৃক্ষ
প্রাকৃতিক পরিবেশ

দিন দিন বিলীন হচ্ছে সুন্দরবনের সুন্দরী বৃক্ষ

দিন দিন বিলীন হচ্ছে সুন্দরবনের সুন্দরী বৃক্ষ

সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী এবং গেওয়া হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক গবেষণা আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উজান থেকে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনে লবণাক্ততা ক্রমে বাড়ছে। এতে করে সুন্দরী গাছের বিস্তার হওয়াতো দূরের কথা। দিন দিন বিলীন হচ্ছে সুন্দরী বৃক্ষ।

দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ আগে সুন্দরী গাছ দিয়ে নৌকা এবং ঘর নির্মাণ করতো। কারখানায় সুন্দরী গাছ ব্যবহার করে হার্ডবোর্ড বানানো হতো। কিন্তু সুন্দরী গাছের পরিমাণ কমে যাওয়ায় সুন্দরবনের কাঠ কাটার ওপর সরকারের পক্ষ থেকে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়।

এতে মানুষের বাণিজ্যিক থাবার হাত থেকে সুন্দরী গাছ রক্ষা পেলেও প্রকৃতির হেয়ালি আচরণে সুন্দরবনের প্রধান বৃক্ষ সুন্দরী হুমকির মুখে পড়েছে। গবেষণা বলছে, সুন্দরীর বদলে সেসব জায়গা দখল করে নিচ্ছে অপেক্ষাকৃত খর্বকায় ‘কাকড়া’ জাতীয় উদ্ভিদ।



সুন্দরবনের মিঠাপানির প্রবাহ কমে যাওয়া ও সুন্দরীসহ প্রধান গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘এই পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি।

দক্ষিণ- পশ্চিমাঞ্চলের যেসব নদী সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে. সেগুলোর পানির প্রবাহ বাঁধাগ্রস্ত হলে সুন্দরবন সেটি কতটা সহ্য করতে পারবে, আমাদের আগেই বিবেচনা করা উচিত ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের কোনও সরকারই প্রকৃতি রক্ষায় গবেষণাধর্মী কোনও কাজ করেনি।’

বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) সম্প্রতি এক গবেষণায় বলছে, সুন্দরী গাছের পরিমাণ কমেছে ৭৯ ভাগ, আর কাকড়াজাতীয় গাছের পরিমাণ বেড়েছে ১৩৮১ শতাংশ। এতে স্পষ্টভাবে বোঝা যাচ্ছে— সুন্দরবনে বড় গাছের জায়গা দখল করছে ছোট গাছ। এতে করে সুন্দবনের প্রাণ প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যে ব্যাপক প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

স্পারসো এই গবেষণার জন্য সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের উত্তর-পূর্বাংশের ২৭২ বর্গকিলোমিটার এলাকাকে বেছে নেয়। মূলত ১৯৮৮ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময়ে স্যাটেলাইট ইমেজ বিশ্লেষণ করা হয়।

গবেষণায় ১৯৮৯, ২০০০ ও ২০১০ সালের ইমেজগুলোও পর্যালোচনা করে স্পারসো বলছে,১৯৮৮ সালে সুন্দরবনে চাঁদপাই রেঞ্জের দিকে কাঁকড়া গাছের বিস্তৃতি ছিল ১৬৫ হেক্টর, যা ২০২২ সালে এসে ১৩৮২ শতাংশ বেড়েছে। এখন এই এলাকায় কাকড়া গাছের বিস্তার ২২৭৯ হেক্টরে।

অপরদিকে সুন্দরবনের প্রধান গাছ সুন্দরী এবং গেওয়া গাছ ছিল ১৫ হাজার ৯৬৯ হেক্টরে, ২০২২ সালে এসে যা কমে হয়েছে ১২ হাজার ৫৮৩ হেক্টর। অর্থাৎ প্রধান দুই গাছ কমেছে ৭৯ শতাংশ।



উদ্ভিদ বিজ্ঞান বলা হয়, সুন্দরী এবং গেওয়া মূলত লবণাক্ত এলাকার গাছ। গাছের ফল পরিপক্ক হলে আপনা-আপনি কাঁদা মাটিতে পড়ে বীজ ফেটে চারা গজায়। কিন্তু পানি এবং কাঁদায় লবণের পরিমাণ বেশি হলে গাছের শেকড় চারা অবস্থায় মাটির খুব গভীরে যেতে পারে না।

এতে চারা গজানোর হার কমে যায়। যেহেতু বিশ্বের বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ বনের পুরোটাই প্রকৃতির সৃষ্টি, তাই প্রকৃতি যাতে বিনষ্ট না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফারাক্কার কারণে উজানের পানি প্রবাহ কমে যাওয়াতে সুন্দরবনে দিন দিন লবণাক্ততা বাড়ছে।

এ বিষয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘উজানের পানি আসা কমে যাওয়া এবং নানা জায়গায় বাঁধ দেওয়ায় পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ কমে এসেছে।

ফলে সুন্দরীসহ সুন্দরবনের প্রধান গাছগুলো হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে মিঠা পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় সুন্দরবনের পুরো ইকোসিস্টেমের ওপরে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে করে পুরো সুন্দরবন আজ হুমকির মুখে পড়েছে।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সবার আগে উজান থেকে পানির প্রবাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি যেসব বাঁধ সুন্দরবনের পানির প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করছে, চিহ্নিত করে সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত