থামছে না বাঁকখালীর প্যারাবন ধ্বংস
থামছে না কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট এলাকায় প্যারাবন (ম্যানগ্রোভ) ধ্বংস করে শতাধিক ঘরবাড়িসহ অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ। গত আড়াই মাসে অন্তত ৩০০ একর প্যারাবন উজাড় করা হয়েছে।
এ কাজে জড়িত ৫৯ জন দখলদারের বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় দুটি মামলা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মাত্র একজনকে। বাকি ৫৮ জন আসামিই ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আসামিদের গ্রেপ্তার করতে না পারার বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, তাঁদের জনবলসংকট রয়েছে। এ ছাড়া মামলা দুটি পরিবেশ অধিদপ্তর তদন্ত করলেও আসামি ধরার কথা পুলিশের।
তবে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস। তিনি বলেন, মামলার তদন্তকারী সংস্থা যেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তর, সেহেতু আসামি ধরার কাজটাও তাঁদের। এ ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর চাইলে পুলিশ সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে পরিবেশবিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’। সংগঠনটির প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, দুই মামলার আসামিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় আরও বিপুল পরিমাণ প্যারাবন বেদখলে চলে যাচ্ছে।
প্যারাবন উজাড়ের পর জলাশয় ভরাট করে ঘরবাড়ি তৈরি হওয়ায় নদীর গতিপথ সংকুচিত হয়ে পড়েছে। প্যারাবনের অন্তত ৪০ হাজার বাইন ও কেউড়াগাছ উজাড় হওয়ায় ২০৫ প্রজাতির পাখির আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়েছে।
অথচ মডেল থানা থেকে কস্তুরাঘাটের দূরত্ব প্রায় ৫০০ মিটার। একসময় কস্তুরাঘাট ছিল শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র। দখল-দূষণে এখন তা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে, কোথাও জনবসতি গড়ে উঠেছে।
কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার জঙ্গল, বনভূমি, সমুদ্রসৈকত, খাড়ি, বালিয়াড়ি, ম্যানগ্রোভ ও উপকূলীয় এলাকাকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন (ইসিএ) এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
কস্তুরাঘাট ইসিএ অন্তর্ভুক্ত। এসব এলাকায় প্রাকৃতিক বন ও গাছপালা কর্তন বা আহরণ, সব ধরনের শিকার, বন্য প্রাণী হত্যা, প্রাণী ও উদ্ভিদের আবাসস্থল ধ্বংসকারী সব কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ইসিএ এলাকায় এরূপ কার্যক্রম পরিচালনা, জলাশয় ভরাট দণ্ডনীয় অপরাধ।
২০২১ সালের ৩ ডিসেম্বর প্যারাবন ধ্বংস ও জলাশয় ভরাট করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণের অপরাধে সাতজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজারের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম। মামলা করার দিনই কস্তুরাঘাট এলাকার মো. ইব্রাহিমকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে এক মাসের মধ্যেই জামিনে মুক্তি হন তিনি। এ ছাড়া মামলাটির প্রধান আসামি মহেশখালীর রুকন উদ্দিনসহ সবাই ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্থানীয় লোকজন বলছেন, আসামিরা প্যারাবন দখলের পাশাপাশি টিনের ঘেরা দিয়ে সরকারি জমিতে প্লট–বাণিজ্য চালিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।