35.8 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৮:০৬ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ

ঢাকার নিম্নাঞ্চলে ঢুকে পড়ছে  বন্যার পানি, ঘর-বাড়ি ছাড়ছেন মানুষ

বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে ঢাকার নিম্নাঞ্চলে বাসাবাড়িতে। পূর্বাঞ্চলের বালু নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। এরই মধ্যে শহরের পূর্বাঞ্চলে বসবাসরত সাধারণ মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট থেকে শুরু করে সব কিছুই পানির নিচে। ফলে নৌকা দিয়েই যোগাযোগ করতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বাসা বাড়িতে পানি উঠে যাওয়ায় ঘরের মধ্যে মাচা কিংবা নৌকায় রান্না হচ্ছে। অনেকেই বাড়ি-ঘরও ছেড়েছেন।

গত এক মাসের বেশি সময় ধরে এমন চিত্র বিরাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০, ৭১, ৭৩ ও ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডে। সদ্য যুক্ত হওয়া ওয়ার্ডগুলোর বাসিন্দাদের কাছে কোনও খাদ্য বা ত্রাণ সহায়তাও পৌঁছেনি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দেশের উত্তর ও পূর্বাঞ্চল থেকে নেমে আসা পানি জমা হচ্ছে মধ্যাঞ্চলে। যে কারণে ঢাকা ও তার আশপাশের নিম্নাঞ্চলগুলো পানিতে ডুবে গেছে। বঙ্গোপসাগরের দিকে এ পানি নামছে খুব ধীরগতিতে। যার ফলে দিন দিন নগরীর নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। খুব সহসাই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে মনে করছেন না স্থানীয় বাসিন্দারা। তারা বলছেন, পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে চলে যেতে পারে।

.ঢাকা পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বালু নদীকে ঘিরেই কয়েকটি এলাকা রয়েছে। যে এলাকাগুলো ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে নতুন যুক্ত হওয়া ৭০, ৭১, ৭৩ ও ৭৫ ওয়ার্ড। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, বর্তমানে বালু নদীতে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। নদীতে পানির সর্বোচ্চ স্তর ৭ দশমিক ১৩ মিটার। এই নদীর পানির সমতল ৫ দশমিক ৮৭ মিটার। আর ৫ দশমিক ৭৫ মিটারের ওপরে গেলে বিপৎসীমা ধরা হয়ে থাকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, এসব ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। চারদিকে পানি আর পানি। কোথাও মাটি দেখা যাচ্ছে না। মানুষের বাসাবাড়ি, রস্তাঘাট ও দোকানপাটসহ সব কিছুই পানিতে ডুবে গেছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, পানির কারণে তাদের স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে। তারা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। বাসাবাড়ির সবজি বাগান ডুবে যাওয়ায় উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। হাঁস-মুরগিসহ গবাদি পশু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকেই। যাতায়াতের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় শহরের সঙ্গেও তারা যোগাযোগ করতে পারছেন না। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশন থেকেও তারা কোনও সহযোগিতা পাচ্ছেন না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৭০ নম্বর ওয়ার্ড ডেমরা। এরই এলাকার দেইল্লা, পাইটি, কায়েতপাড়া, ঠুলঠুলিয়া, খলাপাড়া, তাম্বুরাবাদ, নলছাটা, ধীৎপুর, মেন্দিপুর, আমুলিয়া ও শূন্যা টেংরা এলাকার নিম্নাঞ্চল বালু নদের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এলাকায় বসবাসরত মানুষের বাসাবাড়িতে পুনি ঢুকে পড়েছে।

খিলগাঁও থানাধীন ডিএসসিসির ৭৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোর মধ্যে ইদারকান্দি, ফকির খালী, বালুর পাড়, বাবুর জায়গা, দাসেরকান্দি, জোড়ভিটা, ত্রিমোহনী উত্তরপাড়া, নাসিরাবাদ উত্তর পাড়া, নাসিরাবাদ টেকপাড়া, ইমামবাগের কিছু অংশ, উত্তরগাঁও, শেখের জায়গা ও নাগদারপাড়সহ বিভিন্ন এলাকায় দেড় থেকে আড়াই ফুট পানি বেড়েছে। এসব এলাকার বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে পড়েছে। তাদের নৌকায় করে পানির ভেতর দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

স্থানীয় কাউন্সিলর মো. আকবর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিন পানি বাড়ছে। রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে। মানুষের কোনও কর্মও নেই। নৌকা দিয়েই বাসাবাড়িতে যাতায়াত করতে হচ্ছে। রাস্তাঘাটে পানি উঠে গেছে। এলাকার মানুষ খুবই কষ্টে আছে। বিভিন্ন এলাকায় নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে।’

তিনি জানান, ‘তিস্তার পানির একটা অংশ ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকা হয়ে এ দিকে আসে। সেই পানির অর্ধেক অংশ ভৈরব আর অর্ধেক শীতলক্ষ্যা, তুরাগ ও বালু নদীর অববাহিকায় চলে আসে। বর্তমানে বালু নদীতে পানি বেড়েছে। তাই এর আশপাশের এলাকাগুলো তলিয়ে যাচ্ছে।’

ডিএসসিসির ৭৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণগাঁও, ভাইগদিয়া ও মানিকদিয়া খালের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার মানুষও কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। অনেকের সংসারে দেখা দিয়েছে অভাব। ঘরবাড়ি ছেড়েও কেউ কেউ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। কাজের সন্ধানে বেরিয়ে পড়েছেন অনেক পরিবারের কর্মঠ মানুষ।

চানতে চাইলে মানিকদিয়া খালপাড় এলাকার বাসিন্দা নাজমা আক্তার বলেন, ‘গত এক মাস ধরে পানিবন্দি হয়ে আছি। কেউ একটু খোঁজও নিতে আসেনি। আমরা কীভাবে থাকি, কীভাবে বাঁচি, কীভাবে খাই কেউ জানতেও চায় না। পানির কারণে বাসাবাড়ি থেকে বেরও হতে পারি না। ঘরের চৌকিতে রান্না করে ঢালভাত খেয়ে বেঁচে আছি। প্রতিদিন কতো যে কষ্ট করতে হচ্ছে সেই দুঃখের কথা কেউ শুনতেও চায় না।’

একই চিত্র দেখা গেছে, ডিএসসিসির ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের মাণ্ডা, কদমতলী, ঝিলপাড়া ও উত্তর মাণ্ডা এলাকায়। এই এলাকাগুলোতে বালু নদীর পানি অভ্যন্তরির খালগুলো দিয়ে প্রবেশ করে এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। এতে খাল তীরবর্তী বেশির ভাগ বাড়িতেই পানি ঢুকে পড়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় কাউন্সিলর মো. খাইরুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এলাকায় বন্যার পানি ঢুকে গেছে। পাঁচ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। তাদের জীবনযাপন কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে অনেক মানুষ নিচের এলাকার বাড়িঘর ছেড়ে উঁচু এলাকাগুলোতে চলে এসেছেন। সামনের মাস থেকে হয়তো আরও অনেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে আসবেন।‘

তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর সহযোগিতায় অনেক পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমেও দুর্গতদের সহযোগিতা করার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ডিএসসিসি মেয়রও খোঁজখবর নিচ্ছে কোন কোন এলাকায় পানি জমছে। তবে এখনও সিটি করপোরেশন থেকে কোনও সহযোগিতা আসেনি। হয়তো আসবে।’

এদিকে রাজধানীর সবুজবাগ, বাড্ডা, বেরাইদ, ডুমনি, সাঁতারকুল, দক্ষিণখানসহ বালু নদের তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোও প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া বালু নদ তীরবর্তী নগরীর বিভিন্ন এলাকায় শাখা নদের সংযোগ ও ছোট-বড় সংযোগ খালেও বানের পানি ঢুকেছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত