ঠাকুরগাঁও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবার বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনে ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছে বাদাম চাষিরা। গত মৌসুমে বাদামের ভালো দাম পাওয়ায় চাষিরা বাদাম চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
সারা দেশে যেখানে ধানের দাম নিয়ে চলছে কৃষকদের হাহাকার তখন ঠাকুরগাঁওয়ের চাষিরা বাদাম নিয়ে আশায় বুক বেঁধেছেন। কৃষকেরা বলছেন, অন্যান্য বারের তুলনায় এবার কয়েকগুণ বেশি বাদামের আবাদ হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য আবাদের তুলনায় খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ার কারণে বাদামের দিকে ঝুঁকে পড়েছেন চাষিরা।
কৃষি অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, জেলার সব উপজেলায় কমবেশি বাদামের চাষ হলেও এবার সদর উপজেলার গড়েয়া শুখানপুকুড়ি, ভুল্লী বালিয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি বাদাম চাষ হয়েছে। চলতি বছরে জেলায় রবি মৌসুমে চীনাবাদাম আবাদের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২৪ হেক্টর, আর অর্জিত হয়েছে ১৮ মেট্রিক টন। অপর দিকে খরিপ-১ মৌসুমে চীনাবাদাম আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২৬ হেক্টর আর আবাদ হয়েছে ৩৩২ হেক্টর। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাতা ধরা হয়েছে ৫৫৪ দশমিক ২০ মেট্রিক টন।
কৃষকেরা জানান, প্রতি বিঘায় বাদাম চাষ করতে খরচ হয় ৬ হাজার টাকা। ফলন ভালো হলে প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৫ মণ বাদাম ঘরে তুলবেন তারা। গত বছর প্রতি মণ বাদাম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। এবারও সেই দাম পেলে প্রতি বিঘায় প্রায় ৩০ হাজার টাকা পাবেন বলে আশা করছেন বাদাম চাষিরা। আর খরচ বাদ দিলে প্রতি বিঘায় লাভ হবে প্রায় ২৪ হাজার টাকা।
বাদামের ব্যবসা করে ভালো লাভ করছেন স্থানীয় বাদাম ব্যবসায়ীরাও। তারা বলছেন, ঠাকুরগাঁওয়ের বাদামের মান ভালো। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রপ্তানির পাশাপাশি বিদেশেও এর চাহিদা বাড়ছে। বাদাম চাষে আগ্রহ বাড়ছে এই অঞ্চলের চাষিদের।
এদিকে চীনা বাদামকে কেন্দ্র করে জেলার পার্শ্ববর্তী পঞ্চগড় জেলার দেবীগঞ্চ উপজেলায় গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র শিল্প-কারখানা। ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধশতাধিক কারখানায় বাদাম প্রক্রিয়াজাত হচ্ছে। এসব কারখানায় কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ৫ শতাধিক শ্রমিক। বিশেষ করে নারী শ্রমিকদের জন্য নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের বড়গাঁ গ্রামের বাদাম চাষি রাব্বী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাদাম চাষে প্রতি বিঘা জমিতে ৬ হাজার টাকা খরচ করে এবং অল্প পরিশ্রমে ভালো আয় করা যায়। প্রতিমণ বাদাম ১৮শ থেকে ২ হাজার টাকা দরে বিক্রি হয়।
আরেক বাদাম চাষি নরেশ বলেন, বাজারে দাম ভালো পাওয়ায় এবারও বাদামের চাষ করেছি। আশা করি ভালো দাম পাবো।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ আফতাব হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, বাদাম একটি অর্থকরী ফসল। ফলনও ভাল এবং দামও ভাল। অন্যান্য ফসলে চাইতে বাদাম দাম উচ্চ মূল্য হওয়ায় এ জেলায় বাদাম ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এজন্য বাদামের নতুন নতুন জাত সরবরাহ করা হবে। আশা করছি, জেলার অন্যান্য উপজেলাতেও বাদমের চাষ ছড়িয়ে পড়েবে এবং চাষিরা লাভবান হবেন।