জয়পুরহাট চিনিকলের বর্জ্য নদী-নালায় ছড়িয়ে পড়ছে। এই বর্জ্যে সেচের পানি দূষিত হওয়ায় ঠিকমত ফলন পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
জেলা শহর সংলগ্ন এই কারখানা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, জামালগঞ্জ পাঁচ মাথা থেকে তুলসীগঙ্গা নদী পর্যন্ত এবং আক্কেলপুর পৌরশহরের সোনামুখী সেতুর দক্ষিণ পাশের অংশ থেকে তুলসীগঙ্গা নদীর পানি কালচে হয়ে গেছে।
ওই সেতুর দক্ষিণ পাশ থেকে হলহলিয়া রেলসেতু পর্যন্ত প্রায় সাত কিলোমিটার নদীর পানি কালচে হয়ে গছে। পানি থেকে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ। নদীর মাছ মরে যাচ্ছে। ব্যাহত হচ্ছে সেচকাজ।
আওয়ালগাড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুল বাসেদ বলেন, “শ্রী খালের পানি দিয়ে জমিতে সেচ দিতাম। খালের পানি কালচে হওয়ায় সেচ দেওয়া যাচ্ছে না। পানির অভাবে আমার সবজিক্ষেতের অনেক ক্ষতি হচ্ছে।”
ওই পানি থেকে এতটাই দুর্গন্ধ ছড়ায় যে সন্ধ্যার পরে বাড়িতে থাকা দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন বাসিন্দা জয়নাল মিয়া।
বিশেষত আখমাড়াই মোসুমে এই সমস্যা প্রকট হয় বলে জানান এলাকাবাসী।
শ্রী খাল পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির সভাপতি আবু মোতালেব বলেন, চিনিকলের বর্জ্য খালে আসায় সমিতির পক্ষ থেকে খালে ছাড়া সব মাছ মরে গেছে। খালের পানি কৃষকরা ব্যবহার করতে পারেন না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে একাধিকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো কাজ হয়নি।
ওই পানি আর কৃষিকাজে ব্যবহার করা যাবে না বলে সতর্ক করেছেন আক্কলপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম।
তবে চিনিকলের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, পরিবেশ দূষণের জন্য চিনিকলের অপরিশোধিত বর্জ্য নিঃসৃত পানি এককভাবে দায়ী এমন অভিযোগ ঠিক নয়। পানি শোধনাগার না থাকলেও বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে বর্তমানে বর্জ্যসহ পানি চিনিকলের নিজস্ব ক্যানেলে নেওয়া হয়।
“শুধু যন্ত্রপাতি ধোয়ার স্প্রে করা পানি বের করে দেওয়া হয়। তা-ই কেবল জেলার বিভিন্ন নালা ও খাল বেয়ে নদীতে পড়ছে। তবে তা পরিবেশের জন্য কোনো ক্ষতির কারণ নয়।”
জেলার কয়েক হাজার চালকল ও মুরগি খামার থেকে দূষিত পানি নদীতে ফেলা হচ্ছে বলে তিনি পাল্টা অভিযোগ করেছেন।
তিনি বলেন, “এককভাবে চিনিকলকে দায়ী করা দুঃখজনক।”
আগামী বছর চিনিকলের জন্য বর্জ্য শোধনাগার নির্মাণ করা হবে বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, বর্জ্য শোধানাগার প্রকল্পের জন্য ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। কিছু টাকা তারা পেয়েছেন। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সমস্যা থাকবে না।
১৯৬১ সালে ১৮৮ দশমিক ৮৭ একর জমির ওপর চিনিকলটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। আর চিনি উৎপাদন শুরু হয় ১৯৬৩ সালে, জানিয়েছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনোয়ার হোসেন আকন্দ।