জীববৈচিত্র্য রক্ষায় পরিবেশ সংরক্ষণ জরুরি
বৃহৎ পরিসরে পরিবেশ সম্পর্কে একটি মাত্র সংজ্ঞায়ন করা যথার্থ হবে না। বিষয়বস্তু অনুসারে তা ভিন্ন হওয়াই স্বাভাবিক ব্যপার। সৃষ্টিকর্তার সমগ্র সৃষ্টির সংমিশ্রণে আজ থেকে ৩ দশমিক ৩ মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীতে বসবাসযোগ্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে বলে একটা ধারণা করা হয়।
বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২৩৮ মিলিয়ন বছর আগে স্তন্যপায়ী উদ্ভিদ, ১৪০ মিলিয়ন বছর আগে সপুষ্পক উদ্ভিদ এবং বিশ লাখ বছর আগে মানবসভ্যতার অস্তিত্বের সন্ধান পাওয়া যায়।
এই থেকে বোঝা যায়, সৃষ্টি জগতের ইতিহাস সুদীর্ঘ এবং কালের বিবর্তনে পরিবেশের ধারণাটি ক্রমান্বয়ে পরিবর্তনশীল। সহজ কথায়, চারপাশে আমরা যা কিছু দেখি, সবকিছু মিলিয়ে আমাদের এই পরিবেশ।
মানবসভ্যতা কালের বিবর্তনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নতি সাধন করে চলেছে। এতে জীবনযাত্রার মানেও পরিবর্তন দেখা যায়। উন্নতি আর অগ্রযাত্রার পেছনে পরিবেশের অবদান এবং আত্মোৎসর্গের পরিমাপ করা কষ্টসাধ্যই মাত্র।
এতো সব অগ্রযাত্রা, উন্নয়ন আর পরিবর্তনের ধারায় ইদানীং পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দিচ্ছেন বিজ্ঞানীসহ নানা মহলের পরিবেশবাদী লোকেরা।
শতাব্দীর শুরুর দিকে বেশ কয়েকটি পরিসংখ্যানের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, বিশ্বে প্রতি ২০ মিনিটে একটি করে এবং দিনে গড়ে ১৪০টি প্রাণী প্রজাতি পৃথিবীর বুক থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।
এ ছাড়াও প্রতি ঘণ্টায় ৬৮৫ হেক্টর পরিমাণ ভূমি মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে এবং গড়ে ৬০ জন লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
অন্যদিকে সারা বিশ্বে প্রতি মিনিটে গড়ে ২১ হেক্টর পরিমাণ বনভূমি উজাড় করা হচ্ছে। এ ছাড়া জ্বালানি হিসেবে ৩৫ হাজার লিটার পেট্রোলিয়াম পোড়ানো হচ্ছে। এসবের মাধ্যমে যেমন প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণ কমছে, সেই সাথে দূষণের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস ছাড়াও আরও অনেক ক্ষতিকারক পদার্থ।
অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে বায়ুমণ্ডলের ওজন স্তর দিন দিন ধ্বংস হচ্ছে, যার ফলস্বরূপ জলবায়ু পরিবর্তন এবং বৈশ্বিক উষ্ণায়ন। এর ফলে সৃষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়ে স্বাভাবিক জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের পথে।
ওজোন স্তরে ছিদ্র হওয়ায় সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি ভূপৃষ্ঠে এসে মানবদেহ এবং পরিবেশের ওপর ব্যাপক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। অনেক পরিবেশবিজ্ঞানীরা অনেক আগে অ্যান্টার্কটিকায় ওজোন স্তরে এ ছিদ্র সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
গবেষক ওয়ালেস ব্রোয়েকার উল্লেখ করেন, ওজন স্তরের ক্রমাগত ক্ষয় এবং বিশালাকায় হিমবাহ প্রবাহের ফলে জোরালো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যে, বিশ্বের জলবায়ু পদ্ধতি এক ধারা থেকে অন্য ধারায় হঠাৎ করে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে যেতে পারে। সেসব হিমবাহের প্রবাহ থেকেই আবহাওয়ার খুব দ্রুত পরিবর্তন সূচিত হয়েছে বা হতে পারে।
এসব ধারণা হতে স্পষ্টত যে পরিবেশ সংরক্ষণ আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন কিছু ধারাবাহিক জ্ঞান অর্জন। বর্তমানে বিশ্বে ‘পরিবেশ বাঁচাও, জীবন বাঁচা’ মর্মে বিভিন্ন মহলের আলোচনা ও নানাবিধ কার্যক্রম চলছে। পরিবেশের জীববৈচিত্র্য রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক, মহাদেশীয় ও দেশীয় সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা বর্তমানে কাজ করে যাচ্ছে।
তাদের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে পরিবেশসংক্রান্ত বিষয়ে জনসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের যথাযথ ভাবে ব্যবহার নিশ্চিত করা। এ ছাড়া বর্তমানে অনেক দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে পরিবেশবিজ্ঞানের নানাবিধ বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্তসহ বিভিন্ন কোর্স চালু করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, বরং ইদানীং পরিবেশদূষণ রোধে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় নতুন নতুন আইন প্রণয়ন এবং প্রয়োগ করা হচ্ছে।
শেষে এটুকু বলতে চাই, আমাদের সবার উচিত পরিবেশ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন, পরিবেশের প্রতিটি উপাদানের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিবেশ দূষণ রোধ করা এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করা।