জলবায়ু পরিবর্তন রোধে সহজ কিছু অভ্যাস মানতে হবে
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কমবেশি সবাই আমরা উদ্বিগ্ন। এই পরিবর্তন ঠেকাতে, এর ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে আনতে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে পরিবর্তন, পরিমার্জন জরুরি, এ কথাও আমরা জানি। কিন্তু আপনি জানেন কি, আমাদের কিছু ছোট ছোট দৈনন্দিন অভ্যাসও রাখতে পারে জলবায়ু পরিবর্তনে বড় ভূমিকা?
শক্তির অপচয় রোধ
আমরা নানাভাবে শক্তির অপচয় করি। সবাই মিলে যার যার জায়গা থেকে যদি অপচয় কমাই, তাহলে জলবায়ু পরিবর্তনে একটা বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, এনার্জি সেভিং বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করে (যেমন লেড বাল্ব), প্রয়োজন শেষে ইলেকট্রিক জিনিসপত্রের সুইচ অফ রেখে, এসি কম ব্যবহার করে, পানির ব্যবহারে সচেতন হয়ে। অনেকেই আমরা পানির কল ছেড়ে রেখে দাঁত ব্রাশ, হাত–মুখ ধোয়ার কাজটি করি। এ সময় প্রয়োজনের অতিরিক্ত অনেক পানি শুধু শুধু অপচয় হয়।
পানির ট্যাপ ছেড়ে রাখলে প্রতি মিনিটে দুই গ্যালনের মতো পানির অপচয় হয়। তাহলে একবার চিন্তা করে দেখুন যে আপনি যখন দাঁত ব্রাশ করার সময় ট্যাপ বা গোসলের সময় অকারণে শাওয়ার ছেড়ে রাখেন, কী পরিমাণ পানির অপচয় হয়! তাই যখন কাজে লাগছে না, তখন কলটি বন্ধ করে রাখুন।
প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো
প্লাস্টিক ও পলিথিনদ্রব্যের ব্যবহার কমানো পরিবেশদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন রোধে একটি দারুণ পদক্ষেপ। যত দূর সম্ভব প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে আনুন। এর বদলে পরিবেশবান্ধব পণ্যের ব্যবহার বাড়ান।
যেমন পলিথিনের বদলে পাটের ব্যাগ, প্লাস্টিকের বদলে মাটি, কাঠ, কাচ বা অন্যান্য ধাতুর তৈরি জিনিসপত্র ব্যবহার করুন। প্লাস্টিক দূষণের আরেকটা বড় জায়গা হলো ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার।
অথচ একটু সদিচ্ছা থাকলেই এই ওয়ানটাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো এমনকি একবারে বন্ধ করে দেওয়া সম্ভব। যখন বাইরে কোথাও যাবেন, নিজের পানির বোতল, ছোট প্লেট, চামচ ছুরি, স্ট্র—এগুলো নিজের সঙ্গে রাখতে পারেন। এতে করে ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের ব্যবহার কমবে।
নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার
যে শক্তি একবার ব্যবহারের পর পুনরায় ব্যবহার করা যায়, তাকেই বলে নবায়নযোগ্য শক্তি। স্রোত, বাতাস, সূর্যের আলো নবায়নযোগ্য শক্তির বড় উৎস। তা ছাড়া মনুষ্য ও পশু বর্জ্য থেকে যে বায়োগ্যাস পাওয়া যায়, তা–ও একধরনের নবায়নযোগ্য শক্তি।
এ ধরনের শক্তি ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি পরিবেশবান্ধব। এ ধরনের শক্তির ব্যবহারে বায়ুমণ্ডলে ক্ষতিকর কার্বন ডাই–অক্সাইডের মাত্রা বাড়ে না। তা ছাড়া এটি সাশ্রয়ীও বটে।
খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন
খাদ্যাভ্যাস বদলানোর মাধ্যমেও জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখা সম্ভব। মাংসের ওপর নির্ভরতা বিশেষ করে রেডমিট বা লাল মাংসের ওপর নির্ভরতা কমাতে পারলে জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখতে পারে।
বিশ্বে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস গ্যাস উৎপন্ন হয়, তার একটা বড় অংশ আসে জাবর কাটা প্রাণীদের থেকে। যেমন গরু। গরু প্রচুর মিথেন গ্যাস উৎপন্ন করে, যা পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মাংস ও দুগ্ধজাত পণ্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে আমাদের উচিত হবে মাছ ও উদ্ভিজ্জ আমিষ গ্রহণ করা।
হাঁটা ও সাইক্লিংয়ের অভ্যাস
যদি কাছাকাছি দূরত্বের কোথাও যান, তাহলে চেষ্টা করুন হেঁটে বা সাইকেল চালিয়ে যেতে। এতে করে জ্বালানির অপচয় কমবে, দূষণ কমবে আর ভালো থাকবে স্বাস্থ্যও।
জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধে আমরা যে পদক্ষেপগুলো নিতে পারি, তার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী হতে পারে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা। শুধু সভা–সেমিনার, লেখালেখি কিংবা টক শোতে বিষয়টিকে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না।