জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ পুরো বিশ্ব
কপ-২৭ আসন্ন। নভেম্বরে মিসরে অনুষ্ঠিত হবে এটি। কপ (কনফারেন্স অব পার্টিজ) শুরু হয় ১৯৯৫ সালে জার্মানির বার্লিন শহরে। ১৯৪-এর বেশি দেশ ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
এটিকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পৃথিবীর সেসব দেশ, যারা দুর্যোগে ঝুঁকিপূর্ণ, ক্ষতিগ্রস্ত তারা তাদের দাবি তুলে ধরে। তবে এই কনফারেন্সে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে শুধু সরকার।
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলো ঐতিহাসিকভাবে দূষণকারী দেশগুলোর কাছে তাদের দাবি তুলে ধরে। রুদ্ধদ্বার এ কনফারেন্স নিয়ে ব্যাপক তর্ক-বির্তক, আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে।
কপই যেহেতু দাবি আদায়ের একটি জায়গা, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে পরিবেশবিদ, পরিবেশ সংগঠক, সংস্থা, পরিবেশকর্মীরা তাঁদের নানা কর্মসূচি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিজের দেশের সরকার এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে নিজেদের কথা তুলে ধরেন।
সরকারকে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরা, সেটি কপে যেন তুলে ধরা হয় এবং দাবিগুলো পূরণ করার ব্যাপারে আরও জোরদার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়, সেটি নিয়ে মূলত পরিবেশকর্মীরা কাজ করে থাকেন।
সম্প্রতি কপকে সামনে রেখে থাইল্যান্ডের ব্যাংককের রয়্যাল প্রিন্সেস লর্ন লুয়াংয়ে অনুষ্ঠিত হয় সাউথ টু সাউথ ফেমিনিস্ট লার্নিং ক্লাইমেট জাস্টিস সামিট।
এখানে ১৩টি দেশ থেকে ১৩ জন নারী জলবায়ুকর্মী অংশ নেন। এই লার্নিংয়ের মূল উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ এশিয়াতে নারীরা জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন সেটি নিরূপণ করা। যেটি সাউথ সাউথ ফেমিনিস্ট লার্নিং ক্লাইমেট জাস্টিস-১-এ অনলাইনে বিভিন্ন পরিমাপকের মাধ্যমে নিরূপণ করা হয়।
যেখানে ব্যাপক আলোচনায় উঠে আসে- দুর্যোগে নারীরা শারীরিক, মানসিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং স্বাস্থ্যগত সমস্যায় ভোগেন এবং নারীর প্রতি সহিংসতা বেড়ে যায় ব্যাপক পরিমাণে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে এসব সমস্যা একই রকমভাবে দেখা দিয়েছে। দেখা যায়, উপকূলবর্তী সব দেশের নারীরা লবণাক্ত পানি অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যঝুঁকি কিছুটা একই রকম।
আবার দুর্যোগকালীন শেল্টার হাউসগুলো কোথাও নারীবান্ধব নয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কাঠামোতে খুব সামান্যই নারীর অংশগ্রহণ রয়েছে। অথচ জলবায়ু অভিযোজন এবং প্রশমনে নারীর ব্যাপক ভূমিকা রয়েছে।
আরও একটা বিষয়কে ব্যাপকভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়, তা হলো আদিবাসীদের প্রতি সহিংসতা কমানো এবং তাদের পরিবেশ জ্ঞানকে সংরক্ষণ এবং প্রসারিতকরণ।
প্রথম লার্নিংয়ের বিষয়গুলো ধরেই ফেমিনিস্ট অ্যানালিসিসের মাধ্যমে কতগুলো সেক্টরে ভাগ করা হয়। সেটি হয় প্যারিস অ্যাগ্রিমেন্টের আলোকে। কীভাবে তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা যাবে এবং নারীর দাবি কী?
কোন কোন বিষয় সংযুক্ত করা খুবই জরুরি এবং অ্যাডাপটেশন ও মিটিগেশনে নারীর দাবিগুলো একেবারে সূক্ষ্ণভাবে সংজ্ঞায়িত করে রিপোর্টে সংযুক্ত করা হয়। মূলত তিন দিনব্যাপী এ আলোচনায় দক্ষিণ এশিয়ায় জলবায়ু পরিবর্তনে নারীর যে ক্ষতি হচ্ছে তাকে কীভাবে পরিমাপকে আনা যায় এবং নারীর দাবি ও তা আদায়ের জন্য কিছু পরিকল্পনা তৈরি করা হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচিত বিষয়গুলোতে যেসব ক্ষতিপূরণের কথা আলোচিত হয়, সেগুলো হলো- কাঠামো ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন, জীবিকা, নির্মাণ ও প্রযুক্তির ব্যবহার।
তবে নারীর সমস্যাগুলো নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলেও তা সমাধান এবং এর জন্য যে ব্যবস্থাপনা অর্থায়ন প্রয়োজন তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা বা প্রক্রিয়া এখনও তৈরি হয়নি।
সে জন্য এমন প্ল্যাটফর্ম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। অন্যান্য দেশের তুলনায় কপে দক্ষিণ এশিয়ার নারীদের কণ্ঠস্বর অনেক পিছিয়ে। তার মূল কারণ, শুরু থেকেই বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান কম থাকা, সুযোগের অভাব, তেমন কোনো প্ল্যাটফর্ম না থাকা।
এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে তাঁরা তাঁদের দেশের সমস্যা তুলে ধরবেন দেশের সরকারের কাছে এবং তাঁরা দক্ষিণ এশিয়ার কণ্ঠস্বর হিসেবে তাঁদের কথা তুলে ধরবেন বিশ্বদরবারে।
এবারের কপ হবে মিসরে, যেখানে ইতোমধ্যে জানা যাচ্ছে নারীর বিষয়গুলো তুলে ধরা কিছুটা কঠিন হবে। তারপরও পরিবেশকর্মীদের আশা- সব পরিকল্পনা ও উন্নয়নে নারীকে বাদ দেওয়া হবে না।