জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারনে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।আর জলবায়ুর এই নেতিবাচক প্রভাবের কারনে হুমকির মুখে রয়েছে বাংলাদেশের কৃষি খাত। ফলে ২০৪৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ফসলি জমির পরিমাণ ২৪ শতাংশ কমতে পারে বলে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিএসএআইপি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং বিশ্বব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে ‘ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (সিএসএআইপি)’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা এবং কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতা, স্থিতিস্থাপকতা ও অভিযোজনে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেয়ার জন্য প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধি বিশ্বে সর্বোচ্চ। এর মধ্যে দেশের গ্রামীণ পরিবারগুলোর অবদান প্রায় ৮৭ শতাংশ।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে ২০৪৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ২৪ শতাংশ এবং দেশের অন্যান্য অঞ্চলে ৯ শতাংশ ফসলি জমির কমতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ৬ শতাংশ এবং অন্য অঞ্চলে ২ শতাংশ আবাদি জমি কমবে। ২০৩৫ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ১২ শতাংশ এবং দেশের অন্য অঞ্চলে ৪ শতাংশ আবাদি জমি হ্রাস পাবে। ২০৪০ সালের মধ্যে উপকূলীয় এলাকায় ১৮ শতাংশ এবং অন্য অঞ্চলে ৭ শতাংশ আবাদি জমি কমবে। মাটির লবণাক্ততা উপকূলীয় জমিগুলোর ৬২ শতাংশকে প্রভাবিত করেছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ ৮ কিমি. উত্তরে অগ্রসর হওয়ার পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। কৃষিকাজের জন্য জমির সহজলভ্যতা দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া ক্রমবর্ধমান তাপমাত্রার কারণে প্রধান দুটি ফসলের (আমন এবং বোরো ধান) ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উচ্চ পানির চাপের ফলে ধানের ফলন ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ক্ষতি হতে পারে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদনশীলতার প্রবৃদ্ধির জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবেদনে কৃষি খাতের উৎপাদনের নিয়মিত চিত্র স্থবির হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মূল জাতীয় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সময় ধান ও গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে না বলে প্রতিবেদনে শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৫ থেকে ২০৪০ সালের মধ্যে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন ২ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
বিভিন্ন গবেষণা রিপোর্ট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২১০০ সাল নাগাদ সাগরপৃষ্ঠ সর্বোচ্চ ১ মিটার উঁচু হতে পারে, যার ফলে বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৮.৩ শতাংশ এলাকা নিমজ্জিত হতে পারে। এমন অবস্থা তৈরি হলে বাংলাদেশকে ওই এলাকার কৃষিসহ সবকিছুই হারাতে হবে, যা দেশের খাদ্য নিরাপত্তাকে মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেবে।