জলবায়ুর প্রভাবে উচ্চ ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুরা
জলবায়ুর প্রভাবে উচ্চ ঝুঁকিতে দক্ষিণ এশিয়ার ৪ দেশের শিশু। আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের শিশুরা তাপপ্রবাহ এবং বন্যার মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকির ক্ষেত্রে অত্যন্ত অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে শিশুদের নিয়ে কাজ করা জাতিসংঘের উন্নয়ন সংস্থা ইউনিসেফ। ইউনিসেফের নতুন এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়।
তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে বসবাসকারী শিশু এবং তরুণ জনগোষ্ঠী। যা তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সুরক্ষাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এছাড়া বৈশ্বিক পর্যায়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ৬৫টি দেশের মধ্যে রয়েছে নেপাল ও শ্রীলঙ্কা।
শিশুদের জলবায়ু ঝুঁকিসূচক (সিসিআরআই) প্রবর্তন’ শীর্ষক প্রতিবেদনের এই সূচকটি ইউনিসেফের প্রথম শিশুকেন্দ্রিক জলবায়ু ঝুঁকিসূচক। শিশুদের ঘূর্ণিঝড় ও তাপপ্রবাহের মতো জলবায়ু ও পরিবেশগত আঘাতের সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টির পাশাপাশি তাদের অপরিহার্য পরিষেবা প্রাপ্তির সুযোগের ভিত্তিতে তারা এসব আঘাতের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ ঝুঁকিতে রয়েছে তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনে দেশগুলোকে ক্রমানুসারে স্থান দেওয়া হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক জর্জ লারিয়া-আদজেই বলেন, প্রথমবারের মতো দক্ষিণ এশিয়ার লাখ লাখ শিশুর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সুস্পষ্ট প্রমাণ আমরা পেয়েছি। এই অঞ্চলে খরা, বন্যা, বায়ুদূষণ ও নদীভাঙনের কারণে লাখ লাখ শিশু গৃহহীন ও ক্ষুধার্ত এবং স্বাস্থ্যসেবা ও পানিবিহীন অবস্থায় রয়েছে।
জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মহামারি একত্রে দক্ষিণ এশিয়ার শিশুদের জন্য একটি উদ্বেগজনক সংকট তৈরি করেছে। এখনই পদক্ষেপ নেওয়ার উপযুক্ত সময়। আমরা যদি পানি, স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ করি, তাহলে পরিবর্তনশীল জলবায়ু এবং অবনতিশীল পরিবেশের প্রভাব থেকে তাদের ভবিষ্যৎকে আমরা রক্ষা করতে পারি।
প্রতিবেদনে আরো উঠে এসেছে যে, দক্ষিণ এশিয়ার এই শিশুরা নদীবাহিত বন্যা ও বায়ুদূষণের কারণে ক্রমাগত বিপদের মধ্যে রয়েছে। তবে এটিও উঠে এসেছে যে, শিশুস্বাস্থ্য, পুষ্টি ও শিক্ষার পেছনে বিনিয়োগ করা হলে তা জলবায়ু পরিবর্তন থেকে শিশুদের সুরক্ষায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ায় ৬০ কোটিরও বেশি শিশুর বসবাস এবং বিশ্বের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক তরুণ জনগোষ্ঠীর বসবাসও এই অঞ্চলে। বৈশ্বিকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবজনিত কারণে সবচেয়ে ঝুঁকির মুখে থাকা দেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো রয়েছে।
তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা, অগ্নিকাণ্ড এবং খরার মতো চরম জলবায়ু-সংক্রান্ত ঘটনাগুলোর প্রতি বছর এই অঞ্চলের অর্ধেকেরও বেশি জনসংখ্যার ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অর্থনীতির ওপর অব্যাহতভাবে চাপ সৃষ্টি করে।
বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া এবং আবহাওয়ার ধরন বদলে যাওয়া দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী লাখ লাখ শিশুর ভবিষ্যৎকে ক্রমাগত ঝুঁকিতে ফেলেছে। আরো খারাপ দিকটি হচ্ছে, তারা একটি বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আগেই আরেকটি বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে, যা অর্জিত যে কোনো অগ্রগতিকে উলটে দিচ্ছে।