জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়ায় বিমান ভ্রমণ বন্ধ করার প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ।তাদের ভাষ্য, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, বিজ্ঞানীরা মানুষের স্বাস্থ্যের উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের ধ্বংসাত্মক প্রভাব সম্পর্কে বারবার সতর্ক করেছেন সেখানে বিমান ভ্রমণের প্রশ্নই উঠে না।
গবেষণা থেকে জানা যায়, মানবসৃষ্ট কারণে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মোট যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হচ্ছে তার শতকরা দুই শতাংশের জন্য বিমান শিল্প দায়ী। যা ২০৫০ সাল নাগাদ ২২ শতাংশে গিয়ে পৌঁছাবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্যানুসারে জানা যায়, লন্ডন থেকে নিউইয়র্কে যেতে এবং আসতে বিমান থেকে মাথাপিছু যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হয় তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের গড়ে একজন মানুষ এক বছরে ঘর গরম রাখতে যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণ করেন তার সমান।
এমন পরিস্থিতিতে বিমান সংস্থাগুলোতে পথে আনতেই বিমান ভ্রমণ বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিশ্বজুড়ে আন্দোলনকারীরা। এই আন্দোলনে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন সুইডেনের বাসিন্দারা। চলতি বছরের মে মাসে সুইডেনের রেল কর্তৃপক্ষ এক সার্ভের ফলাফলে জানিয়েছে, তাদের সার্ভেতে অংশ নেওয়া ৩৭ শতাংশ মানুষ ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিমানের স্থলে রেল বেঁছে নিয়েছেন। গত বছর যার পরিমাণ ছিলো ২০ শতাংশ।
সুইডেনের পরিবেশ কর্মী মাজা রোজেন বিমান ভ্রমণ বর্জন করতে মানুষকে উৎসাহিত করতে ২০১৮ সালে ‘ফ্লাইট ফ্রি’ নামের এক ক্যাম্পেইন শুরু করেন। রোজেন বলেন, তার মতে অধিকাংশ মানুষ মনে করে জলবায়ু ইস্যুতে ব্যক্তিগত উদ্যোগ খ্বু বেশি কাজে আসবে না। তাই শুরুতে এ ব্যাপারে তাদের মধ্যে অনীহা থাকলেও আস্তে আস্তে মানুষের মধ্যে এ ব্যাপারে সচেতনতা বাড়ছে। ইতোমধ্যে ক্যাম্পেইনের সঙ্গে একমত পোষণ করে ১৪ হাজার মানুষ বিমান ভ্রমণ বাদ দিয়ে ট্রেন ভ্রমণে রাজি হয়েছেন।
এই সচেতনতা কেবল সুইডেন নয়, অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ছে। যার একমাত্র উদাহরণ যুক্তরাজ্যের বাসিন্দা রজার টায়ার্স।তিনি সম্প্রতি চীন ভ্রমণে আকাশ পথ বর্জন করে ব্যয়বহুল ও সময় সাপেক্ষ ট্রেন ভ্রমণ বেছে নিয়েছেন।জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিমানের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।তার দাবি, এই ভ্রমণের ফলে সে ৯০ শতাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড কম নিঃসরণ করেছে।
এক্ষেত্রে পরিবেশবাদীরা পরিবেশ বান্ধব ট্রেনে ভ্রমণের ব্যাপারে মানুষকে উৎসাহ দিচ্ছে। তাদের বিশ্বাস মানুষ সচেতন হলে তাদের পরিবেশ রক্ষায় তাদের এই আন্দোলন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।