জলবায়ুঝুঁকি ও বিপন্নতা থেকে নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বাঁচাতে হবে
সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে উপকূলীয় জেলাগুলোয় লোনাপানির স্থায়ী জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে ঠিক, এর পাশাপাশি উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে উত্তরাঞ্চলে খরা ও বন্যাও বৃদ্ধি পাবে।
এর ফলে নারী, দরিদ্র ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর দুর্যোগঝুঁকি ও বিপন্নতা আরও বাড়বে। তাই নারী ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর জলবায়ুঝুঁকি ও বিপন্নতা সঠিকভাবে যাচাই করে তাদের উপযোগী অভিযোজন কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন।
‘নারীবান্ধব জলবায়ু অভিযোজন কর্মসূচি ও সহিষ্ণুতা বৃদ্ধি’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালায় এসব কথা বলেন বক্তারা। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিজ (বিসিএএস) এবং জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন ইউএন-উইমেন এ কর্মশালার আয়োজন করে। গুলশানের স্পেকট্রা কনভেনশন সেন্টারে এই কর্মশালা হয়।
সরকারি কর্মকর্তা, এনজিও ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্য থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য এ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় বিসিএএসের গবেষণা ফেলো দ্বিজেন মল্লিক বলেন, সরকারের নীতিকৌশলে এবং প্রকল্প বাস্তবায়নে নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক অভিযোজন কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত করা একটি সময়োপযোগী ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জের (আইপিসিসি) ষষ্ঠ মূল্যায়ন প্রতিবেদন উল্লেখ করে বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতাও দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ইউএন-উইমেনের প্রতিনিধি প্রিয়দর্শিনী অভি বলেন, ‘কৃষি ও উৎপাদনশীল খাতগুলোয় নারীর গুরুত্বপূর্ণ অবদান সত্ত্বেও সম্পত্তির অধিকার না থাকায় নারীর এ অবদান স্বীকৃতি পায় না।
নীতিকৌশলগুলোয় নারীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য সুপারিশ থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখতে পাই না। দুর্যোগের সময় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় নারীবান্ধব পরিবেশের অনুপস্থিতির কারণে নারীরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না এবং অনেক ক্ষেত্রে যেতেও চান না।’
প্রিয়দর্শিনী অভি আরো বলেন, ইউএন-উইমেন এম্পাওয়ার প্রকল্পের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো চিহ্নিত করার এবং তা সমাধানের উপায়গুলো নীতিকৌশলে অন্তর্ভুক্ত করার ও বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে।
দেশের ৫টি প্রতিবেশ অঞ্চলের পাঁচ জেলায় (জামালপুর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার, সাতক্ষীরা ও খুলনা) স্থানীয় নারীপ্রধান সংগঠনগুলোর সহায়তায় এ গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে। ইউএন-উইমেনের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিসিএএস এ গবেষণা প্রকল্প বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছে।
এ কর্মশালায় জলবায়ু পরিবর্তন এবং তার প্রভাব, জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত নীতিকৌশলে লিঙ্গসমতার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা এবং নারীবান্ধব জলবায়ু বাজেট শীর্ষক তিনটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন বিসিএএসের গবেষণা ফেলো দ্বিজেন মল্লিক, বিসিএএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক মনোয়ারুল ইসলাম এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক শরমিন্দ নিলোর্মী।
কর্মশালায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পরিবেশ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, এনজিও ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা অংশ নেন।