31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১:১৩ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপকূলীয় জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন
জলবায়ু

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপকূলীয় জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উপকূলীয় জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রতিবছর নতুন করে ধরা দিচ্ছে। ঋতুভিত্তিক তাপমাত্রার ওলট-পালট শুধু জনগণের দুর্ভোগেরই কারণ হচ্ছে না, একই সঙ্গে মানুষের জীবন-জীবিকাও হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। আর এর অন্যতম ভুক্তভোগী উপকূলীয় অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।

যদিও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব প্রায় প্রত্যেকটি অঞ্চলের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। খরাপ্রবণ অঞ্চলে এক ধরনের সমস্যা, হাওড় অঞ্চলে আরেক ধরনের সমস্যা এবং পাহাড়ি অঞ্চলে অন্য ধরনের সমস্যা। এ বছর কালবৈশাখী হয়েছে শীতকালে আর যখন কালবৈশাখী হওয়ার কথা তখন এর দেখা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর এপ্রিলের গরম গত অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে রেকর্ড।

গত মাসেই (২০ মার্চ) জাতিসংঘের আইপিসিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে এই শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি প্রতিশ্রুত ১.৫ ডিগ্রি থেকে অনেক বেশি অতিক্রম করতে পারে। এ জন্য আইপিসিসি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে বিশ্বব্যাপী কার্বন গ্যাস নিঃসরণ কমিয়ে আনা ও অভিযোজনে অধিকতর রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছে।



এর আগে ২০২১ সালের আইপিসিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মানুষের কর্মকাণ্ডই নজিরবিহীনভাবে জলবায়ুর পরিবর্তন করছে। নতুন প্রতিবেদন বলছে জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সমস্যা সহসা সমাধানের জন্য দ্রুত সময় ফুরিয়ে আসছে। ফলে কার্বন নিঃসরণ মুক্ত অর্থনীতি গড়ার জন্য দ্রুত ধারাবাহিক সংস্কার ও নতুন ব্যবস্থায় রূপান্তর করা দরকার।

জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ২০২৩ সালে জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা প্রণয়ন করে। এই পরিকল্পনায় বাংলাদেশকে এগারোটি ভিন্ন ভিন্ন জলবায়ু বিপদাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে তা মোকাবিলায় ১১৩টি উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৩-৫০ সালের মধ্যে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ২৩০ বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হবে।

উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা গেলে বিভিন্ন ধরনের দুর্যোগ যেমন মোকাবিলা করা যাবে এবং পাশাপাশি প্রায় ১.১ মিলিয়ন হেক্টর জমি জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও লবণাক্ততা থেকে রক্ষা পাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেমন সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, লবণাক্ত পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে, লবণাক্ততার হার কোথাও কোথাও কয়েক গুণ বেড়ে যাচ্ছে এবং পরিবেশ আরও বেশি লবণাক্ত হয়ে উঠছে।

পাশাপাশি স্থানীয় জনগোষ্ঠী নদীভাঙন ও সমুদ্রভাঙন ইত্যাদির শিকার হচ্ছে। এমনকি পুকুরের পানিও লবণাক্ত হয়ে পানির উৎসের সর্বশেষ সহায়টুকুও দূষণের শিকার হচ্ছে। একদিকে লবণাক্ততার প্রভাবে কৃষকরা কৃষিকাজ ও ধান চাষের মতো জীবিকা নির্বাহের মূল কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে না, অন্যদিকে কর্মসংস্থানের অভাবে এলাকা ছেড়ে শহরে জীবিকার সন্ধান করতে হচ্ছে। আমরা জানি, এই দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্য অভিযোজন কতটা কঠিন হয়ে উঠছে।

২০২১ সালের খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা অনুযায়ী দেশের চাষযোগ্য জমির ২৫-৩০ শতাংশ বাংলাদেশের ২১টি উপকূলীয় জেলার অন্তর্ভুক্ত, যার ৫৩ শতাংশই লবণাক্ত আক্রান্ত। তবে উপকূলীয় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ইদানীং উপকূলীয় অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু ধান চাষের প্রচেষ্টা চলছে।



এর মধ্যে কোনো কোনো জাত চারা অবস্থায় ১২-১৪ ডিএস/মিটার এবং সব ধাপে ৮ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহ্য করে ফলন দিতে সক্ষম। যদিও বর্তমানে উপকূলীয় জেলাগুলোয় বিশেষ করে খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন জেলায় লবণাক্ততার পরিমাণ ৮.১ ডিএস/মিটার থেকে ১৬ ডিএস/মিটার এবং কোথাও কোথাও তার থেকেও বেশি। এই অবস্থা ধানচাষের জন্য কোনোভাবেই সহায়ক নয়।

আর এর পাশাপাশি আছে স্থানীয় প্রভাবশালী চিড়িং ও মাছের খামারিদের দাপট। এদের প্রভাবে অনেক ক্ষুদ্র কৃষক তার চাষের একখণ্ড জমিও প্রভাবশালীদের কাছে বন্ধক দিতে বাধ্য হয় ন্যূনতম মূল্যে। সম্প্রতি বাগেরহাট ও রামপাল এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ হয়েছে। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে আলোচনায় জানা যায়, বর্তমানে এক বিঘা জমিতে ধানচাষের মাধ্যমে যেভাবে কৃষক লাভবান হন তার তুলনায় মাছের খামারে জমি বন্ধক প্রদানে প্রাপ্তি খুবই কম।

অভিযোগ আছে, বড় মাছের খামারিরা চান না ক্ষুদ্র কৃষক কৃষিতে ফিরে আসুক। কারণ একবার যদি তারা কৃষিকাজের সুফল বুঝতে পারেন তাহলে হয়তো আর মাছ চাষের জন্য নিজের সামান্য সহায় সম্বলটুকু অন্যের হাতে তুলে দেবে না। আবার অভিজ্ঞরা বললেন, মাছের খামারও আর আগের মতো লাভজনক নেই। এখন প্রায়ই রোগবালাই লেগে থাকে এবং ফলন কম। এবারের এপ্রিলের গরমে অনেক খামারের চিড়িং মরে যাওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে উপকূলীয় অঞ্চলে ভুক্তভোগী কৃষকরা লবণসহিষ্ণু জাতের মাধ্যমে কৃষিকাজের উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। কিন্তু ক্ষুদ্র কৃষকরা বলছেন খামারিদের কারণে তাদের কৃষিকাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, মাঠের ধান পুড়ে যাচ্ছে।

কারণ কৃষকদের ধানের মৌসুম শেষ না হওয়ার আগেই প্রভাবশালীরা মাঠে লবণ পানি ঢুকিয়ে থাকে। ফলে ধান ঘরে তোলার আগেই লবণ পানির প্রভাবে মাঠেই ফসল পুড়ে শেষ। কৃষকদের কাছ থেকে দাবি উঠেছে, যে মাঠে কৃষিকাজ করা সম্ভব সেখানে লবণ পানির মাছ চাষ নিষিদ্ধ করা হোক।

অন্যদিকে মাছ চাষের জন্য প্রভাবশালীরা খালে বাঁধ দিয়ে প্রাকৃতিক পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে, যাও এই অঞ্চলের মাটির লবণাক্ততা আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। কৃষকরা এসব খাল প্রভাবশালীদের কাছ থেকে অবমুক্ত করার জন্য জোর দাবি জানিয়েছে।

অন্যদিকে উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষদের অন্যতম বড় সমস্যা সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা। সুপেয় পানির অভাবে এই অঞ্চলে একটি হতদরিদ্র পরিবারকে খাবার পানির জন্য যে পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হয় তা একটি শহুরে অবস্থাপন্ন পরিবারের তুলনায় বেশি।

অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে লবণ পানি ব্যবহার করতে বাধ্য হওয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী বিশেষ করে নারীরা বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগসহ নানা ধরনের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কিত জটিলতার সম্মুখীন হচ্ছে। আবার অনেক পরিবারের নারীকে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার হেঁটে পরিবারের জন্য খাবার পানিটুকু সংগ্রহ করতে হয়।



উপকূলীয় জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে কৃষিকাজের ব্যাপারে কৃষকদের মধ্যে উদ্যম লক্ষ করা গেছে। অনেক কৃষকই নিজেদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ধানচাষসহ বিভিন্ন ধরনের কৃষিকাজে উদ্যোগী হচ্ছেন।

এখন এই কৃষকদের সহযোগিতা করার জন্য সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে হবে এবং একই সঙ্গে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের খাদ্যের চাহিদা মেটাতে পারেন। কৃষিকাজের জমিতে এখন লবণ পানির মৎস্য চাষ নিষিদ্ধ করতে হবে।

কীভাবে কৃষিকাজে জৈবসার ও বালাইনাশক ব্যবহার করা যায় তার সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকার সঙ্গে প্রান্তিক কৃষকদের সরাসরি যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর সুফল নিশ্চিত করতে হলে এই অঞ্চলের কৃষকদের সহযোগিতার কোনো বিকল্প নেই।

অন্যদিকে এই অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর পানীয় জলের কষ্ট দূর করার জন্য প্রত্যেক গ্রামে সরকারি জমিতে পুকুর খনন করে সুপেয় পানির রিজার্ভার তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনীয় সরকারি জমি না থাকলে সরকারি উদ্যোগে জমির ব্যবস্থা করে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে হবে।

বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে এলাকার দুস্থ পরিবারের মধ্যে পানির ট্যাংক সরবরাহ করা হয়। এ ধরনের সহযোগিতার ক্ষেত্রে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ আছে। এর সুফল যাতে প্রকৃত ভুক্তভোগীর কাছে পৌঁছায় তা নিশ্চিতে স্থানীয় প্রশাসন ও স্থানীয় সরকারের জবাবদিহিতার কোনো বিকল্প নেই। পাশাপাশি সমস্যা সমাধানে নদী ও খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিত করা, তীর সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ ইত্যাদি বিষয়ে বিশেষভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত