34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ১:৩১ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বৈশ্বিক আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব
জলবায়ু

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বৈশ্বিক আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুপ প্রভাবে বৈশ্বিক আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল স্বরূপ বৈশ্বিক আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ দেখছে বিশ্ব। মরুভূমির উত্তপ্ত বালুতে যেখানে এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার করতে হতো, সেই মরুর বুকে বৃষ্টি আর সবুজের চিত্র ফুটে উঠেছে। অপরদিকে বছরের অধিকাংশ সময়ে ঠান্ডা থাকা ইউরোপে দেখা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র।

অত্যধিক তাপমাত্রায় যুক্তরাজ্যের রাস্তার সিগন্যাল বাতি গলে যাওয়ার ছবি ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত জাতিসংঘের আন্তসরকার প্যানেল (আইপিসিসি) তাদের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলেছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা এখনই কমানো না গেলে খুব দ্রুতই বিশ্বকে মারাত্মক পরিণতি ভোগ করতে হবে।

তবে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে। গত মাসে (এপ্রিলে) একটানা পনেরো বিশ দিনের মতো তীব্র তাপ দাহে জনজীবনে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে।

এ সময়ে ৫৮ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙে চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে।



২০১৫ সালে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন (কপ-২১) ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ২০৩০ সাল নাগাদ বৈশ্বিক তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করে ২০৫০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে সীমাবদ্ধ রাখার অঙ্গীকার করা হয়।

এ ছাড়া জলবায়ু তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। যেখানে ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলো ১০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা করার অঙ্গীকার করে। তবে সম্প্রতি জাতিসংঘের বর্তমান মহাসচিব বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে টুইট করেন।

তিনি তার টুইটে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৈশ্বিক বিপর্যয়ের কথা উল্লেখ করেন এবং উন্নত দেশগুলো প্যারিস জলবায়ু চুক্তি মেনে না চলার জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করেন। চুক্তিতে গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাসের কথা বলা হলেও অনেক শিল্পোন্নত দেশই তা মানছে না।

এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য যে জলবায়ু তহবিল গঠন করার অঙ্গীকার করা হয় সেখানেও অর্থ জমা দেয়নি অনেক দেশ। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা কিংবা অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশগুলো জলবায়ু তহবিলে অর্থ জমা দেওয়ার বিষয়ে অনেক পিছিয়ে।

গত কয়েক দশক ধরেই পরিবেশ বিজ্ঞানীরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব নিয়ে বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে আসছেন। তবে তাদের আশঙ্কা দিন দিন বাস্তব হচ্ছে। বিশ্বে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ক্ষতির মুখে পড়ছে বেশ কয়েকটি দেশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশ মালদ্বীপ আছে চরম ঝুঁকির মধ্যে।

ইতিমধ্যেই দেশটির সরকার অন্য দেশে জমি কেনার জন্য তহবিল গঠন করছে। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে অদূর ভবিষ্যতে পুরো দেশটি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পৃথিবীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে মালদ্বীপের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ নাশিদের নেতৃত্বে পানির নিচে ডুবো মন্ত্রিসভার বৈঠক করেন।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম, এ ছাড়াও এই তালিকার প্রথম দিকে আছে পুয়ের্তোরিকা, মিয়ানমার, হাইতি, ফিলিপাইন, মোজাম্বিক, বাহামা। এ ছাড়াও আছে পাকিস্তান, থাইল্যান্ড ও নেপাল।



বাংলাদেশে গত দুই দশক ধরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব সুস্পষ্ট। ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ সব সময়ই দুর্যোগপ্রবণ দেশ, এর পাশাপাশি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন দুর্যোগের তীব্রতা বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশেষ করে তীব্র তাপ দাহ, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরা, উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা, নদী ভাঙন কিংবা বজ্রপাতের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলো আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। যার প্রভাব পড়ছে আমাদের স্বাভাবিক জীবনে।

বৈশ্বিক জলবায়ু সূচক-২০২১ এর প্রতিবেদনে বলা হয় গত ২০ বছরে বাংলাদেশে ১৮৫টি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বড় দুর্যোগ আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, পাহাড়ধসের মতো দুর্যোগ রয়েছে। এতে ১১ হাজার ৪৫০ জন মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। আর অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে ৩৭২ কোটি ডলার।

বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশে যে সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ বৃদ্ধি পেয়েছে তার মধ্য ঘূর্ণিঝড় অন্যতম। বিশেষ করে গত দেড় দশকে গড়ে প্রায় প্রতিবছরই এক বা একাধিক সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে। ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় সিডরের অবর্ণনীয় তাণ্ডবের পর একাধিক প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানে দেশের উপকূলীয় এলাকায়।

যার মধ্যে আইলা, মহাসেন, বুলবুল, ফণী, রোয়ানু, মোরা অন্যতম। দেশের দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি পেলেও প্রাকৃতিক এই দুর্যোগের কাছে উপকূলীয় মানুষ এখনো অসহায়। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফলে ঘূর্ণিঝড় এখন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার জন্য সাধারণ ঘটনা হয়ে গেছে।

সমুদ্র উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে হিমালয়ের বরফ গলার কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হচ্ছে, অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে বন্যার সৃষ্টি হয় দেশের উত্তরাঞ্চলে। বিশেষ করে গত বছর সিলেট ও সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা হয়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় লাখ লাখ মানুষ। ফসলি জমি, গবাদিপশু ক্ষতির মুখে পরে।



দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ক্ষতির মুখে পড়ে শিক্ষার্থীরা। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয় জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে গত বছর প্রায় দশ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিভিন্ন মেয়াদে বন্ধ রাখা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে বৃদ্ধি পেয়েছে বজ্রপাতের মতো দুর্যোগ। আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা। বিশেষ করে গত এক দশক ধরে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বজ্রপাতকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে ঘোষণা করে।

সার্ক আবহাওয়া গবেষণা কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সার্কভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বজ্রপাতে মৃত্যু হয় বাংলাদেশে। এ ছাড়াও আমেরিকান গবেষকদের মতে পৃথিবীতে বজ্রপাতে যে পরিমাণ মানুষ প্রাণ হারান তার এক-চতুর্থাংশ প্রাণহানি ঘটে বাংলাদেশে।

এ ছাড়াও সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কিংবা ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সৃষ্টি সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হওয়ায় মাটির লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে, ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ফসলি জমি। ২০০৭ সালের প্রলয়ংকরী সিডরের পর দীর্ঘদিন উপকূলীয় মানুষ লবণাক্ত সমস্যার কারণে তাদের ফসলি জমিতে ফসল বুনতে পারেনি।

এক জরিপে দেখা যায় পটুয়াখালীতে লবণাক্ততার পরিমাণ ২ পিপিটি থেকে বেড়ে ৭ পিপিটিতে পৌঁছেছে। এ ছাড়াও প্রয়োজনের সময়ে বৃষ্টি না হওয়া কিংবা অপ্রয়োজনে অতিরিক্ত বৃষ্টিও লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিগত কয়েক বছর ধরে। যার কারণে কৃষির উপর বিরূপ প্রভাব তৈরি হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের ফলে বাংলাদেশের মতো দেশে প্রাণহানি ও জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। বিশ্বের আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে অনেক সভা, আলোচনা হলেও জলবায়ু চুক্তি মানছে না অনেক উন্নত দেশ। তাই দিন দিন ঝুঁকিতে পরছে দুর্যোগপ্রবন দেশগুলো।

শিল্পোন্নত দেশগুলো যদি এই বিষয়ে আন্তরিক না হয় তবে বিশ্ব মানচিত্র থেকে হারিয়ে যেতে পারে মালদ্বীপের মতো একটি দেশ। পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে বাংলাদেশের উপকূলীয় বড় একটি অঞ্চল। মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। যার অনেক কিছুই বর্তমানে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত