34 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১০:৫০ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে
আন্তর্জাতিক পরিবেশ পরিবেশ গবেষণা রহমান মাহফুজ

চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা করেছে

চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বাঁধ নির্মানের পরিকল্পনা করেছে

রহমান মাহফুজ, প্রকৌশলী, পরিবেশ কর্মী, পরিবেশ এবং পরিবেশ অর্থনৈতিক কলামিষ্ট, সংগঠক এবং সমাজসেবী।

চীন তিব্বতে ইয়ারলুং জাংবো নদীর (ব্রহ্মপুত্র নদের তিব্বতীয় নাম) উপর একটি বৃহৎ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র নদ হ’ল এশিয়ার অন্যতম প্রধান পানির প্রবাহ যা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে ৩০০০ কিমি প্রবাহিত হয়ে বঙ্গবোসাগরে পতিত হয়েছে।

প্রকল্পটির বাস্তবায়ন ২০৩৫ সালের মধ্যে সমাপ্ত ধরে একটি প্রস্তাব চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় অন্তর্ভূক্তির জন্য চীনের কমিউনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির বরাবরে প্রেরণ করা হয়েছে, যার বাস্তবায়ন আগামী বছর হতে শুরু করা হবে।

চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (POWERCHINA)এর চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিয়াং এর বরাত দিয়ে চীনের সরকারী গণমাধ্যম খবরটি পরিবেশন করে। উল্লেখ্য যে চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন (POWERCHINA) এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।

চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ তৈরি করবে। প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র। ছবি :(জি নিউজ নেটওয়ার্ক)
চীন তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদে বাঁধ তৈরি করবে। প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র। ছবি :(জি নিউজ নেটওয়ার্ক)

 

ইয়ান ঝিয়াং বলেছেন, চীন “ইয়ারলুং জাংবো নদীর তলদেশে জলবিদ্যুৎ অবকাঠামো স্থাপন করবে” এবং প্রকল্পটি পানিসম্পদ এবং জাতীয় সুরক্ষা বজায় রাখতে সহায়ক হবে, গ্লোবাল টাইমস জানিয়েছে।

আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতীয় পিপলস কংগ্রেস (National People’s Congress -NPC) এ আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পরে এই পরিকল্পনার বিশদ প্রকাশ করা হবে বলে ধারণা করা হয়েছে।

ব্রহ্মপুত্রের উপর চীনের বাঁধ নির্মাণের সংবাদ ব্রহ্মপুত্র নদের ভাটির দেশ ভারত এবং বাংলাদেশের উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, যদিও চীন আঞ্চলিক স্বার্থ মাথায় রাখার বিষয়টি জানিয়েছে।

নিকটতর ভাটির দেশ হিসাবে সীমান্তবর্তী নদীর পানির উপর ভাটির অঞ্চলের ব্যবহারকারীদের অধিকার সংরক্ষণসহ ভারত সরকার ধারাবাহিকভাবে চীনা কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের মতামত এবং উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তাদের নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেছে যে, উজানের অঞ্চলগুলিতে কোনও কার্যক্রম দ্বারা নদীর ভাটির দেশের অঞ্চলগুলোর স্বার্থ যেন ক্ষতিগ্রস্থ না হয়।

অন্যান্য সংবাদ

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় কর্ম-পরিকল্পনা প্রণয়নের আহ্বান সায়মার

পাওয়ারচিনা (POWERCHINA) এর চেয়ারম্যান তার বক্তব্যে বলেছে, ইয়ারলুং জাংবো নদীর উজানের ঐতিহাসিক জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি একটি সাধারণ জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের চেয়েও বেশি, এটি পরিবেশ, জাতীয় সুরক্ষা, জীবনযাত্রার মান, শক্তি এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে খুবই অর্থবহ।

তিনি বলেছেন, এই প্রকল্পে ৬০ মিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা জলবিদ্যুতের উৎপাদন বার্ষিক ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘন্টা পরিষ্কার, নবায়নযোগ্য এবং শূন্য-কার্বন বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে যা ২০৩০ সালের আগে কার্বন নিঃসরণ শিখরে পৌঁছানোর এবং ২০৬০ সালে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনে চীনের লক্ষ্য বাস্তবায়নের সহায়ক হবে। উল্লেখ্য ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে জাতিসংঘের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অধিবেশনে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে প্রদত্ত বক্তবে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

খবরে বলা হয়েছে, জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের বার্ষিক ২০ বিলিয়ন ইউয়ান (৩ বিলিয়ন ডলার) আয় হতে পারে।

২০১৫ সালে, চীন ১.৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে তিব্বতের বৃহত্তম “জ্যাম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র” নির্মাণ করে।

মেডাগ জল বিদ্যুত কেন্দ্র
মেডাগ জল বিদ্যুত কেন্দ্র

গ্লোবাল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে মেদোগ কাউন্টিতে যেখানে ইয়ারলুং জাংবো গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন অবস্থিত, চীন একটি “সুপার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র” তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে প্রচার করছে। মেডোগ হ’ল তিব্বতের শেষ কাউন্টি যা ভারতের অরুণাচল প্রদেশের সীমানায় অবস্থিত।

জিয়ামন বিশ্ববিদ্যালয়ের চীন সেন্টার ফর এনার্জি ইকোনমিকস রিসার্চের ডিরেক্টর লিন বোকিয়াং গ্লোবাল টাইমসকে বলেছেন যে আন্তঃবাহী ও নিম্ন প্রবাহের দেশগুলির মধ্যে যোগাযোগ ও সহযোগিতা ব্যতীত আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলি উন্নয়ন করা যায় না।

তিনি আরও বলেন “ইয়ারলুং জাংবো নদীর উপর জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের বাস্তবায়ন চীন ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সংলাপের মাধ্যমে এবং পানিসম্পদের ব্যাপক ব্যবহার ও বিকাশের জন্য সহযোগিতার আরও বেশি সুযোগ সৃষ্টি করবে।”

ব্রহ্মপুত্র নদের উপর চীনের পরিকল্পিত জলবিদ্যুত কেন্দ্র
ব্রহ্মপুত্র নদের উপর চীনের পরিকল্পিত জলবিদ্যুত কেন্দ্র

আউটলুক ইন্ডিয়া জানিয়েছে, ভারত ও চীন আন্তঃসীমান্ত নদী সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার জন্য ২০০৬ সালে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের কর্মকৌশল (Expert Level Mechanism -ELM) কমিটি প্রতিষ্ঠা করে।

চীন বন্যা মৌসুমে ভারতকে ব্রহ্মপুত্র নদ এবং সুতলজ নদীর পানিবিজ্ঞান সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করে।

এই ব্যবস্থার অধীনে, চীন প্রতি বছর ১৫ই মে থেকে ১৫ই অক্টোবরের মধ্যে ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা মৌসুমের তথ্য সরবরাহ করে।

নীল নদের উপর বাঁধ নির্মাণে বিরোধ: ইথিওপিয়া বনাম মিশর

তবে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন হলে ভারত অপেক্ষা বাংলাদেশের অধিক ক্ষতি হবে, আর এ ক্ষতি হবে মারাত্বক ও সীমাহীন। কারণ, সকল আন্তঃসীমান্ত নদীগুলোর দ্বারা বাংলাদেশে প্রবাহিত পানির ৬০% এর অধিক পানি ব্রহ্মপুত্র নদের মাধ্যমে প্রবাহিত হয়।

অধিকন্ত, শুষ্ক মৌসুমে একমাত্র ব্রহ্মপুত্র নদেই পানির প্রবাহ বিদ্যমান থাকে, যা ঐ মৌসুমে বাংলাদেশের কৃষি, নৌ চলাচল সচল রাখে এবং মৎস, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ করে।

বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে ব্রহ্মপুত্র নদের নিন্মমূখী প্রবাহ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সমুদ্রের লবন পানির উদ্ধমূখী প্রবাহ প্রতিহত করে।

মূলত: ফারাক্খা বাঁধ দ্বারা গঙ্গার প্রবাহ, বাংলাদেশের তিস্তা বাঁধ সহ ভারত  অংশের উজানে আরও ৬টি বাঁধ দ্বারা তিস্তার পানি এবং আসামে বরাক নদীর উপর বাঁধ দ্বারা মেঘনার পানি প্রত্যাহৃত ও নিয়ন্ত্রিত হওয়ার পর একমাত্র ব্রহ্মপুত্র নদের প্রবাহই আমাদের জন্য উন্মুক্ত আছে ।

তাই বর্তমানে বহ্মপুত্রই আমাদের জীবন – মরণ, আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন, তাও যদি উজানে বাঁধ নির্মাণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, তাহলে আমাদের অস্তিত্বের উপর এক চরম আঘাত হানবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত