চর কেটে তৈরী করা হচ্ছে ঘের, ধ্বংস হচ্ছে পরিবেশ
মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুরে কুমার নদে জেগে ওঠা চর অবৈধভাবে দখল করে মাছ চাষের জন্য ঘের তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য চরের চারপাশে এক্সকাভেটর দিয়ে মাটি কেটে বাঁধ দেওয়া হয়েছে।
মস্তফাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সোহরাব হোসেন খানের বিরুদ্ধে পরিবেশবিধ্বংসী এমন কর্মকাণ্ডে জড়ানোর অভিযোগ উঠেছে।
এলাকার বাসিন্দারা এর নাম দিয়েছেন ‘চেয়ারম্যান প্রজেক্ট’। তাঁদের আশঙ্কা, এভাবে স্থায়ীভাবে চর দখলে চলে গেলে বর্ষা মৌসুমে নদের পানিপ্রবাহে বিরূপ প্রভাব পড়বে। একাংশে ভাঙনসহ ব্যাহত হতে পারে নৌযান চলাচলও।
এবিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মাদারীপুর কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাইউল কাদের খান বলেন, ‘এই জমি খাস খতিয়ানভুক্ত।
নদের পারে কোনো চর জেগে উঠলে সেটি যদি কেউ দখলে নিয়ে কোনো চাষাবাদ বা স্থাপনা করে, তাহলে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন। এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। নদীর পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’
অভিযোগের বিষয়ে সোহরাব হোসেন খান বলেন, ‘এটি এখন আর নদী নাই, খাল হয়ে গেছে। এই খালে জেগে ওঠা চরে প্রতিদিন সন্ধ্যায় মাদকের আসর বসে।
অসামাজিক কাজ চলে। চরের কারণে আশপাশের পরিবেশটা নষ্ট হয়ে গেছিল। আমি এ এলাকার চেয়ারম্যান, ভালো-মন্দ দেখার দায়িত্ব আমার। তাই নিজের টাকা খরচ করে চরের চারপাশ মাটি কেটে বেড়িবাঁধ দিয়ে ঘেরের মতো করেছি।
এখন পরিবেশটা সুন্দর হয়েছে। এ সবকিছু পরিষদ থেকে রেজল্যুশন করেই করেছি। বিষয়টি ইউএনও জানেন। এসি ল্যান্ড আসছিলেন। আমার এই প্রজেক্টে পানি হলে মাছ ছাড়ব। এ ছাড়া কিছু নয়।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। খালি জমি চাষাবাদের উপযোগী করে তুলতে হবে। এখানে চাষাবাদ হলে বাজারের লোকজনই মাছ খাইতে পারবে।’
পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীর চর কিংবা তীরবর্তী কোনো জমি দখলে নেওয়া বা শ্রেণি পরিবর্তন করে কোনো প্রকার স্থাপনা তৈরি করা যাবে না। যদি কেউ নদীর সর্বনাশ করে ব্যক্তিস্বার্থে এমন কিছু করে থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হবে।’
ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের মস্তফাপুরে বড় সেতুর নিচ দিয়ে বয়ে গেছে কুমার নদ। সেতুর পাশ দিয়ে ছোট একটি সড়ক ধরে ৩০০ মিটার এগোলেই মস্তফাপুর স্লুইসগেট। দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে থাকা এই স্লুইসগেটের ঠিক সামনে কুমার নদে চর পড়েছে।
চার থেকে পাঁচ বছর ধরে চরটা পড়েছে। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, চরে পাশের কিছু জমি বাদ দিয়ে মাটিকাটার যন্ত্র (এক্সকাভেটর) দিয়ে চারপাশের মাটি কেটে বেড়িবাঁধ দিয়ে ঘের তৈরি করা হচ্ছে। প্রায় আধা কিলোমিটার দীর্ঘ মাটির বাঁধটি ২০ থেকে ২৫ ফুট চওড়া।
এসব অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কর্তৃপক্ষের বিশেষ নজর থাকা উচিত বলে মনে করেন মাদারীপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইয়াকুব খান। তিনি বলেন, কুমার নদে কোথাও চর জেগে উঠলে সেটা দখলের মহোৎসব শুরু হয়।
শুধু মস্তফাপুর এলাকা নয়, নদের বিভিন্ন স্থান দখল হয়ে গেছে। এভাবে তীর ও চর দখল হতে থাকলে নদের পানি প্রবাহে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। জলাবদ্ধতার শিকার হবে সাধারণ মানুষ।
চর দখল করে মাছের ঘের তৈরির বিষয়টি নজরে এসেছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাইনউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘কাজটি বন্ধ করতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। এসি ল্যান্ডকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দিয়েছি।’