চরম সুপেয় পানির সংকট খুলনার পাইকগাছা
বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে খুলনার পাইকগাছা-কয়রার নদ-নদীর সংযোগ। ফলে সাগরের নোনাপানি সরাসরি উপজেলার নদ-নদী ও ফসলের মাঠে সহজে পৌঁছে যায়।
এর ফলশ্রুতিতে এখানে লোনাজলের আগ্রাসন প্রকট। শুষ্ক মৌসুমে নদীতে নোনা পানির মাত্রা বেড়ে যায়। পুকুরগুলোতেও থাকে লোনাপানি। টিউবওয়েলগুলোতে রয়েছে আর্সেনিক ও আয়রনের প্রবণতা।
এদিকে এভাবে শোধন ছাড়া পুকুরের পানি খাওয়া নিরাপদ নয় বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক নীতিশ গোলকার বলেন, এ অঞ্চলে সুপেয় পানির সংকট প্রকট। উপায় না পেয়ে মানুষ পুকুরের পানি পান করে। খোলা অবস্থায় থাকার কারণে এর মধ্যে অনেক ধরনের জীবাণু থাকে।
শোধনহীন এ পানি খেয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত ডায়রিয়া, আমাশয়, পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। হাসপাতালে এ ধরনের রোগীর সংখ্যাই বেশি।
বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পাইকগাছা লোনা পানি কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও কেন্দ্র প্রধান ড. মো লতিফুল ইসলাম বলেন, ‘নদীমাতৃক বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম সুপেয় পানির আধার।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সুপেয় পানির আধার এখন ধুঁকছে। লবণাক্ততার প্রভাব পড়েছে পুরো উপকূলজুড়ে। সুপেয় পানির সংকটে ভুগছে উপকূলের সব বয়সের মানুষ। লবণাক্ততা ফসল উৎপাদনেও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। পানির প্রবাহ জনিত ভারসাম্যতার কারণে সমুদ্রের লোনাপানি স্থলভাগের দিকে চলে আসে।
ফলে জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের পানি বাড়ার কারণে লোনাপানি স্থলভাগে প্রবেশ করে, ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে লবণাক্ততাও বাড়বে। কম বৃষ্টির কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততার প্রভাব আরো বেশি মাত্রায় প্রভাব ফেলছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলায়ও লবণাক্ততার সংকট প্রকট।’
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শ্যামল দত্ত জানান, পদ্মা নদীর পানি প্রবাহ ঠিক না থাকায় লবণ পানি উঠছে। পদ্মার পানি প্রবাহ ঠিক থাকলে লবণ জলের আগ্রাসন এতটা প্রকট হতো না। নদীর পানি প্রবাহ ঠিক করা গেলে সংকটের সমাধান করা সম্ভব হতে পারে।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্যমতে, শুধু খুলনাঞ্চলে নয়, দেশের ৪১ জেলার ১৯২ উপজেলায় দেখা দিয়েছে তীব্র পানিসংকট। রাজধানীতে পানির স্তর ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ২১২ ফুট নিচে চলে গেছে। যে কারণে ভবিষ্যতে এখানকার পানিতে সমুদ্রের লোনাপানি চলে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি সংস্থা ওয়াটার এইডের গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের দুই কোটিরও বেশি মানুষ নিরপাদ পানি থেকে বঞ্চিত ৷ তাদের তথ্য অনুসারে বাংলাদেশে প্রতিবছর পাঁচ বছরের কম বয়সী কমপক্ষে ৪ হাজার ১শ শিশু মারা যায় নিরাপদ পানি এবং স্যানিটেশন সুবিধার অভাবে৷
এছাড়াও সরকারি-বেসরকারি একাধিক সংস্থার গবেষণায় দেখা গেছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অনেক এলাকায়ই শুরু হয়েছে মরুকরণ প্রক্রিয়া। কারণ পানির স্তর অনেক নিচে নেমে গেছে।