চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতায় দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেছেন, সিটি করপোরেশন পারছে না বলে সিডিএ জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় নগরের খালগুলো থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
প্রকল্পের কাজ শেষ হলে নগরবাসী জলাবদ্ধতা থেকে রক্ষা পাবে। চট্টগ্রাম নগরের জন্য ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন নিয়ে অনুষ্ঠিত অংশীজন সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সিডিএ ও চট্টগ্রাম আরবান নেটওয়ার্ক যৌথভাবে সিডিএর সম্মেলনকক্ষে এই সভার আয়োজন করে। সহযোগিতা করে ইউএনডিপি, ইপসা ও সেভ দ্য চিলড্রেন।
চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে অন্তত ৯ বার ডোবে চট্টগ্রাম নগর। চারটি প্রকল্পের কাজ চলার পরও জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ না কমায় নগরবাসীর ক্ষোভ রয়েছে। আজকের সভায়ও বক্তারা এ বিষয়ে ক্ষুব্ধ মতামত ব্যক্ত করেন।
এদিকে অংশীজন সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর, চট্টগ্রাম ওয়াসা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হলেও সংস্থাগুলোর দায়িত্বশীল কেউ উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে সভায় আলোচকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে সিডিএর চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ বলেন, একটি নগরের জন্য মহাপরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই যুগোপযোগী মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিয়ে এই পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, সিডিএতে প্রয়োজনীয় জনবল নেই। রাজউকে (রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) যেখানে ২৪ জন অথরাইজড কর্মকর্তা আছেন, সেখানে সিডিএতে আছেন মাত্র দুজন।
আর পুরো নগরের ভবন তদারকির জন্য আছেন মাত্র ১৬ জন পরিদর্শক। জনবল না থাকায় একেকজনকে দু-তিনটি দায়িত্ব পালন করতে হয়। এ পরিস্থিতি নিরসনের চেষ্টা চলছে।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সভাপতি মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, এর আগে দুটি মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল। তার কতটুকু বাস্তবায়িত হয়েছে।
তা কি যাচাই করা হয়েছে? নতুন মহাপরিকল্পনায় উন্মুক্ত পরিসর, খেলার মাঠ ও উদ্যানের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, নিয়মিত সমন্বয় সভা হয়। সভায় সবাই হ্যাঁ হ্যাঁ বলেন। কিন্তু যাঁর যা কাজ তা করেন না। তিনি বলেন, আগের মহাপরিকল্পনা করা হয়েছিল ঘরে বসেই। তাই অনেক গলদ ছিল। এবার যেন তা না হয়।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক চেয়ারম্যান দেলোয়ার মজুমদার বলেন, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়াতে হবে। আর নগর-পরিকল্পনায় মানসিক সুস্থতার বিষয়ে নজর দিতে হবে।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশের (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সম্মানী সম্পাদক শহিদুল আলম বলেন, চট্টগ্রামে যেভাবে পাহাড় কাটা হচ্ছে, তাতে ২০৪১ সালে আর পাহাড় থাকবে বলে মনে হয় না। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কারণে পাহাড়ের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার অভিযোগ করেছিল সিটি করপোরেশন।
তারপরও তা হচ্ছে। উন্নয়নকাজ চলার সময় নকশার পরিবর্তনের কারণে ব্যয় বাড়ছে। জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। ভবিষ্যতে তা যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
গুরুত্বপূর্ণ সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ঘাসফুলের চেয়ারম্যান মনজুর-উল-আমিন চৌধুরী। তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে বাড়ইপাড়া খাল খননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।
দুজন মেয়র চলে গেছেন। কিন্তু সে খাল কই? রাস্তার ওপর উড়ালসড়ক করা হয়েছে। আর রাস্তায় বুকসমান পানি। তাহলে কী উন্নয়ন হলো?
সভায় চট্টগ্রাম নগর মহাপরিকল্পনা নিয়ে সিডিএর উপপ্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ ও প্রকল্প পরিচালক মো. আবু ঈসা আনছারী এবং ‘চট্টগ্রাম নগরের আপত্কালীন পরিকল্পনা’ নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন চুয়েটের শিক্ষক মো. শাহজালাল মিশুক।
বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের সাবেক ডিন এ বি এম আবু নোমান, সিডিএ সচিব আনোয়ার পাশা, কবি ও সাংবাদিক ওমর কায়সার, স্থপতি আশিক ইমরান, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর মো. জহুরুল আলম ও মো. মোবারক আলী, নারীনেত্রী জেসমিন সুলতানা, কলেজছাত্রী পারভীন আক্তার, নিশাত সুলতানা প্রমুখ।