রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশের গাছ কেটে সাবাড় করছে বন বিভাগ। রাজবাড়ী সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে চিঠি দেওয়া হলেও বন বিভাগ গাছপালা কেটে সাবাড় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে এ বিষয়ে বন বিভাগ দাবি করছে, প্রথম দফায় সওজ চিঠিতে গাছ কেটে ফেলার কথা বলেছিল আর ডালপালা কর্তনের কথা দ্বিতীয় দফার চিঠিতে বলেছিল তারা।
এর পূর্বে গোয়ালন্দ সামাজিক বন বিভাগ ২০০৫-০৬ অর্থবছরে গোয়ালন্দ রেলগেট থেকে দৌলতদিয়া ঘাট পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে একাশিয়া, রেইনট্রি, বাবলা, শিশু, গামারিসহ বিভিন্ন ধরনের প্রজাতির গাছ রোপণ করেছিল।প্রায় তিন বছর আগে উন্নয়নের নামে বন বিভাগ মহাসড়কের পশ্চিম পাশের সব গাছ কেটে ফেলে। এবার আবারও বন বিভাগ মহাসড়কের পূর্ব পাশে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সব গাছ কেটে ফেলেছে। এখন চলছে সেসব কেটে ফেলা গাছের পরিবহনের কাজ।এদিকে মহাসড়ক বৃক্ষশূন্য হয়ে পড়ায় মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
জানা যায়, মহাসড়কে গাছ কাটা কাজের তদারক করছেন মো. লিটন মোল্লা। তিনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি দাবি করে বলেন, চলতি বছরের ৭ অক্টোবর গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন থেকে বাংলাদেশ হ্যাচারি পর্যন্ত ৫০০ মিটারের মধ্যে থাকা গাছ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করেছিল ফরিদপুর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়। ফরিদপুরের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স টিটল এন্টারপ্রাইজে মোট ৩ লাখ ৫১ হাজার টাকার বিপরীতে ৩৬৫টি গাছ কাটার কার্যাদেশ পায়। কার্যাদেশ অনুযায়ী নভেম্বর মাসের শেষ দিকে গাছ কাটা শুরু করেন তাঁরা।
এদিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দশ বারো জন শ্রমিক মহাসড়কের পাশে থাকা সব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে।এদের মধ্যে কয়েকজন গাছের গুঁড়ি কেটে মহাসড়কের পাশে স্তূপ করে রাখছে আবার কয়েকজন গাছ কাটায় ব্যস্ত।আর দেখা গিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন শ্রমিকদের কাজ তদারকি করছেন।সেখানে দেখা যায় অনেক গাছ এখনো অপরিপক্ব রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলার বন কর্মকর্তা (ফরেস্টার) মীর সাইদুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন,রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত একটি চিঠি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুরের বন বিভাগীয় কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়। চিঠিতে সড়ক উন্নয়নকাজের লক্ষ্যে বাংলাদেশ হ্যাচারি থেকে গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ অপসারণের কথা বলা হয়েছিল।এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বন বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. এনামুল হক ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বন বিভাগের কোনো গাছ আছে কি না তা সরেজমিন পরিদর্শন করে সম্পূর্ণ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দ ফরেস্টারকে বলা হয়েছিল।
গত ২২ সেপ্টেম্বর ফরিদপুর বন বিভাগীয় কর্মকর্তার নিকট রাজবাড়ী সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আশিকুল ইসলাম স্বাক্ষরিত অপর একটি বার্তা চিঠি পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছিল, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে বসন্তপুর পর্যন্ত মহাসড়কের দুই পাশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রয়েছে আর সেগুলোর ডালপালা মহাসড়কের ভেতর চলে আসায় যানবাহন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে। ডালপালায় সড়ক আচ্ছাদিত থাকায় বৃষ্টির পর পাতায় জমে থাকা পানি সড়কে পড়ে।ফলে ফুটপাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সরকারি সম্পদ রক্ষার্থে ও সড়কে যান চলাচল নিরাপদে এবং নির্বিঘ্ন করতে সড়কের গাছের ডালপালা কাটা জরুরি। এমন চিঠির আলোকেই রাজবাড়ী সদর ও গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গত ২৪ সেপ্টেম্বর বিভাগীয় বন কর্মকর্তার দপ্তর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
বনবিভাগকে চিঠি দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সওজ রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলী কে বি এম সাদ্দাম হোসেন জানান, ‘আমরা ওই এলাকায় মহাসড়কের পশ্চিম পাশে ৫ ফুট করে বাড়াতে কিছু গাছ কাটতে বলেছিলাম। তার মানে এই নয় যে সমস্ত গাছ কেটে ফেলতে বলা হয়েছে। আমরা পুনরায় তাঁদের গাছ রোপণের জন্য চিঠি দেব।’ সূত্র: প্রথম আলো