মাধ্যাকর্ষণের বিপরীতে গাছের শক্তি কতটুকু?
পানি ছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণিজগতের অস্তিত্বই একেবারেই অসম্ভব। পৃথিবীর সকল প্রাণী সক্রিয়ভাবে পানি গ্রহণ ও ত্যাগ করতে পারলেও গাছপালা কীভাবে পানি উপরদিকে তার সমস্ত কান্ড ও পাতায় চালিত করে? বিজ্ঞানীরা সেই রহস্য সমাধান করেছেন এবং বিষয়টি বিষয়টি বুঝিয়ে বলছেন৷
পানি জীবন দান করে, জীবন রক্ষা করে৷ বিশেষ করে উদ্ভিদের অনেক পানির প্রয়োজন হয়৷ সে কারণে হামবুর্গের বোট্যানিকাল গার্ডেনে পানির বিশাল চাহিদা রয়েছে৷ সেখানে কর্মরত জীববিজ্ঞানীরা পানির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অত্যন্ত ওয়াকিবহাল৷
হামবুর্গে কর্মরত জীববিজ্ঞানী কার্স্টেন শিরারেন্ড জানান, পানি এমন একটি সর্বব্যাপী পদার্থ, যা প্রাণী ও উদ্ভিদের মূল অপরিহার্য উপাদান। পানি ছাড়া আমরা কেউ বেশিদিন বাঁচতে পারি না। মায়ের গর্ভের মধ্যেই পানির একটি ছোট থলেতে আমাদের জীবন শুরু হয়। জীববিদ্যার ক্ষেত্রে পানিই সর্বব্যাপী দ্রাবক ও এজেন্ট। শরীর ও কোষ – সর্বত্রই পানি কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করে।
শুনতে সাধারণ মনে হলেও পানির গুরুত্বপূর্ণ ক্ষমতার একটি হলো সেটি সর্বব্যাপী সলভেন্ট বা দ্রাবক৷ শুধু ময়লা নয় বরং পানি উদ্ভিদের অস্তিত্বের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিও দ্রবিভূত করে।
যেসব বড় বড় অনেক গাছ বেশ কয়েক মিটার উপরে শাখাপ্রশাখা ও পাতায় কোনো পাম্পের প্রয়োজন না ফেলে প্রয়োজনীয় পানি পাঠাতে পারে। পানির দুটি বৈশিষ্ট্য কাজে লাগিয়ে সেটা সম্ভব হয়৷
প্রথমত পানির একটা আঠালো তবে গুণ রয়েছে। মসৃণ পৃষ্ঠে পানি আটকে থাকে। টেস্ট টিউবের দেয়াল বেয়ে সেটি একটু একটু করে কিছুটা উপরে উঠে যায়৷ মাঝের অংশের তুলনায় ধারের পানির স্তর কিছুটা উঁচু হয়৷
পানির দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হলো কোহেশন, অর্থাৎ পানির অণুগুলির মধ্যে সংযোগ ও যুক্ত থাকার প্রবনতা। সে কারণে দুই সেন্টের ছোট কয়েন বা পয়সার উপর প্রায় ২৮টি থেকে ৩০টি পানির বিন্দু অনায়াসে ধরে যায়৷ মাধ্যাকর্ষণ শক্তি জয় করে পানি তখন ধার উপচে কিছুটা বেরিয়ে থাকে কিন্তু ফেটে যায়না।
অ্যাডেশন ও কোহেশন শক্তির সম্মিলিত প্রভাবের কারণে পানি মাধ্যাকর্ষণ শক্তি উপেক্ষা করে উপর দিকে চালিত হতে পারে। তথাকথিত এই কৈশিক শক্তি গাছপালার মধ্যে পানি উপরে তুলতে সাহায্য করে৷ শিকড় ও গাছের কাণ্ডের পাতলা নালীর কারণে সেটা সম্ভব হয়।
কার্স্টেন শিরারেন্ড বলেন, ‘‘ক্যাপিলারি, অর্থাৎ ২ মিলিমিটারেরও কম ব্যাসের নলের মধ্যে পানি নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত উঠতে পারে। নল যত সরু হবে, পানি তত উপরে উঠতে পারবে। কাঠের মধ্যে যে নালী বেয়ে পানি চলাচল করে, তার গড় ব্যাস পঞ্চাশ মাইক্রোমিটার, অর্থাৎ ০.০৫ মিলিমিটার।
নালী এতই পাতলা, যে পানি নলের মধ্যে অনায়াসে ৫ থেকে ১০ মিটার উচ্চতায় উঠে যেতে পারে। সেই পানি অবশ্য একশো মিটার দীর্ঘ বিশালাকার গাছের শিখর অবশ্য পৌঁছাতে পারে না৷ তার জন্য প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হয়।
গাছের উপরের দিকে পাতায় বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার ফলে এক প্রবাহ, সাকশান টেনশন সৃষ্টি হয়৷ এটা অনেকটা স্ট্র ব্যবহার করে মুখ দিয়ে তরল টানার মতো প্রক্রিয়া৷ উপরের দিকে ট্রান্সপিরেশন বা অপসারণের কারণে ঊর্দ্ধমুখী প্রবাহ সৃষ্টি হয়, যার সাহায্যে পানি অভাবনীয় উচ্চতায় পৌঁছে যায়৷’’
পানির বাষ্পীভবন প্রক্রিয়ার ফলে ঠান্ডা পরিবেশ সৃষ্টি হয়৷ সে কারণে জঙ্গলের আশেপাশের পরিবেশ অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা হয়৷
বিয়র্ন প্লাৎস/এসবি