খাল রক্ষায় মুক্ত করা হচ্ছে কচুরিপানা
দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের ভাণ্ডার গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বসরত খাল। এখান থেকে মাছ শিকার করেন অনেকে। সেচ, গোসল, রান্নাসহ নানা কাজেই ব্যবহার করা হয় খালটির পানি।
পণ্য আনা নেওয়ার জন্য চলে নৌকা। কিন্তু সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে এতো বেশি কচুরিপানা জমেছে যে খালের প্রায় ছয় কিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানার চার থেকে পাঁচ ফুট স্তূপ জমে গেছে।
ফলে মাছ ধরতে বিপাকে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় জনগণকে। সেই সঙ্গে খালের সুফল থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অন্তত ২০ হাজার মানুষ। এজন্য কচুরিপানা অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ খালের ছয় কিলোমিটারের কচুরিপানা পরিষ্কার করতে শুরু করেছে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) একেএম হেদায়েতুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মহসিন উদ্দীন, গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান উপস্থিত থেকে এ কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। এতে অন্তত ২০ হাজার মানুষের কষ্ট রাঘব হবে।
তেতুলিয়া গ্রামের মৎস্যজীবী পলাশ বিশ্বাস বলেন, বসরত খালে সারা বছর দেশীয় প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। এসব মাছ শিকার করে আমরা জীবিকা নির্বাহ করি। খালে কচুরিপানা জমেছে। আমরা চেষ্টা করেছি, কচুরিপানা অপসারণ করতে। কিন্তু কচুরিপানার স্তূপ খুব বেশি। তাই আমাদের পক্ষে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়নি।
কাশিয়ানী উপজেলার নিজামকান্দি গ্রামের মনির মোল্লা বলেন, এ খালের পানি দিয়ে আমরা জমিতে সেচ, গোসল, রান্না বান্না, কাপড় ধোয়াসহ বিভিন্ন কাজ করি।
কিন্তু খালে কচুরিপানা জমায় পানি অমরা ব্যবহার করতে পারছি না। এতে আমাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কচুরিপানা অপসারণ করতে শুরু করেছে। এতে আমাদের উপকার হবে।
কাশিয়ানী উপজেলার রামদিয়া বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী বলেন, এ খাল দিয়ে গোপালগঞ্জ ও রামদিয়া বাজারের বিভিন্ন পণ্য পরিবহন করা হয়। কিন্তু কচুরিপানার স্তূপ জমায় নৌযান চলাচল করতে পারছে না। এতে আমাদের ব্যবসা বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।
স্থানীয় উলপুর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান বাবুল বলেন, বসরত খাল দেশীয় প্রজাতির মৎস্য সম্পদে পরিপূর্ণ। এ খালের পানি সেচ দিয়ে গোপালগঞ্জ ও কাশিয়ানী উপজেলার বিশাল এলাকার চাষাবাদ করা হয়।
এ অঞ্চলের ২৫ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন বাড়াতে সমাজ সেবক চন্দ্রনাথ বসু গোপালগঞ্জের তেতুলিয়া থেকে কাশিয়ানী উপজেলার বলুগা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ বসরত খাল খনন করেন।
এ খালকে মধুমতি এমবিআর চ্যানেলের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। খননের পর এলাকার জলাবদ্ধতা দূর হয়। এছাড়া তেঁতুলিয়া ও আড়পাড়া গ্রামের মৎস্যজীবিরা এ খাল থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন।
ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে খালের প্রায় ছয় কিলোমিটার জুড়ে কচুরিপানার স্তূপ জমে। তাই এলাকাবাসী খালের পানি ব্যবহার করতে পারছিলেন না। এতে ছয় গ্রামের ২০ হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছিলেন।
গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান বলেন, ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এ খালের প্রস্থ ৫শ’ ফুট ও গভীরতা প্রায় ৫০ ফুট।
ঝড়ে খালের ছয় কিলোমিটার জুড়ে পানির ওপর কচুরিপানার চার থেকে পাঁচ ফুট স্তূপ জমেছে। আমরা সোমবার খালের কচুরিপানা অপসারণ শুরু করেছি। কচুরিপানা অপসারণ করে খালটি ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হবে।
জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেন, আমরা সমন্বিতভাবে এ খালের কচুরিপানা পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। খাল পরিষ্কার করে আমরা এটিকে দ্রুত সচল করবো।