খনন করেও অস্তিত্ব ফেরানো যায়নি ভদ্রা নদীর
কাগজে-কলমে নাম ছিল ভদ্রা নদী। কিন্তু তার কোনো অস্তিত্ব ছিল না। নদীর মধ্যে গড়ে উঠেছিল বাড়িঘর, ইটভাটা। ছিল ফসলের খেত। এমনকি নদীর কয়েকটি স্থানে মাঝবরাবর ছিল পিচের সড়কও।
প্রায় অস্তিত্বহীন এমন নদী খননের উদ্যোগ নিয়েছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। কিন্তু খননের মাত্র দুই বছরের মধ্যেই আবার তা পলি পড়ে ভরাট হয়ে গেছে।
ভরাটের মাত্রা এতই বেশি যে কোনো কোনো স্থানে নদীর কোনো অস্তিত্বই নেই, নেই পানিপ্রবাহের কোনো চিহ্নও। কেউ বলে না দিলে বোঝা যাবে না, ওই নদী খনন করা হয়েছিল।
পাউবোর কর্মকর্তারা বলছেন, ডুমুরিয়া এলাকায় নদীতে পলির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। এ কারণে ওই নদী খনন প্রকল্পে নদীর দুই প্রান্তে ২টি ১০ ভেন্টের স্লুইসগেট করার কথা ছিল, কিন্তু তা করা হয়নি।
অন্যদিকে ওই নদীর সংযোগ হিসেবে মৃত আরেকটি নদী হামকুড়া খনন করার কথা ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা করা হয়নি। মূলত এসব কারণে নদীপ্রবাহ চালু হওয়ার দুই বছরের মধ্যে পলি পড়ে আবার ভরাট হয়ে গেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতা নিরসন, ফসলের জন্য পানির সমস্যার সমাধান, মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে ওই ভদ্রা ও পাশের সালতা নদী খনন করা হয়েছিল। ২০১৬ সালে নেওয়া ওই প্রকল্পের আওতায় সালতা ও ভদ্রা মিলে ৩০ কিলোমিটার খনন করা হয়। এর মধ্যে ভদ্রা খনন করা হয় ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি।
ওই নদীর এক প্রান্তে সাহস ইউনিয়নের দিঘলিয়া এলাকার লোয়ার ভদ্রা নদীর সঙ্গে ও অন্য প্রান্ত শোভনা ইউনিয়নের তেলিগাতি এলাকার ঘ্যাংরাইল নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করা ছিল।
তেলিগাতি ও দিঘলিয়া এলাকার সংযোগস্থলে ২টি ১০ ভেন্টের স্লুইসগেট করার পরিকল্পনা ছিল ওই প্রকল্পের মধ্যে। ২০১৯ সালের জুনে খননকাজ শেষ হয়। শুরুর দিকে স্লুইসগেটসহ প্রকল্পের খরচ ধরা হয় ৭৬ কোটি টাকা।
নদীর মধ্যে স্লুইসগেট করা যাবে না, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এমন নির্দেশনার পর প্রকল্পের দুটি স্লুইসগেট তৈরির পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। ওই খাতে করা ৩০ কোটি টাকাও আর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে অন্যান্য খরচ কমিয়ে খনন বাবদ খরচ করা হয় প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। নদীর তলদেশ খনন করা হয়েছিল ১৫ থেকে ২০ মিটার আর গড় গভীরতা ছিল ৪ মিটার।
ভদ্রার জায়গায় ৫৭৩টি ছোট-বড় স্থাপনা গড়ে তোলা হয়েছিল। খননকাজের আগে ওই স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করা হয়। নদীর মধ্যে ছিল তিনটি ইটভাটাও। ওই ইটভাটার কারণে খননকাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ভদ্রা নদী এতটাই বড় ছিল যে বড় বড় লঞ্চ, জাহাজ চলত। আশির দশকের দিকে নদী ভরাট হওয়া শুরু হয়। এরপর কয়েক বছরের মধ্যে নদীর আর কোনো অস্তিত্ব ছিল না। একেবারে পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।