ক্ষুদ্র জাতিসত্তা মানুষের জন্যই বন টিকে আছে: সৈয়দা রিজওয়ানা
দেশে প্রাকৃতিক বন দিন দিন উজাড় হচ্ছে। কিন্তু ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ যেখানে আছে, বন সেখানেই টিকে আছে। তারাই বনের আসল রক্ষণাবেক্ষণকারী। কথাগুলো বলেছেন বেসরকারি সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
রবিবার সকালে রাজধানীর ফার্মগেটে ‘আদিবাসীদের ভূমি সমস্যা ও করণীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
দেশের তৃতীয় বৃহত্তম বন মধুপুরের চিত্র তুলে ধরে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মধুপুরে যে সামান্য পরিমাণ বন এখনো রয়েছে, সেটা আপনারা (ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ) যেখানে আছেন।’
আলোচনায় মধুপুরের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার ছাত্র-যুবকদের অভিনন্দন জানিয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, তাঁদের কাছ থেকে প্রতিবাদের কারণেই আপাতত মধুপুর বনের ভেতর দিয়ে লেক খননের প্রক্রিয়া বন্ধ রয়েছে।
তাই পারব না, এটা কোনো কথা নয়, পারতেই হবে। মধুপুরের বন বাঁচাতে হবে, বননির্ভর জনগোষ্ঠীকে বাঁচানোর জন্যই।
ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের পরামর্শ দিয়ে রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আপনারা (ক্ষুদ্র জাতিসত্তার) আলোচনার আয়োজন করলেই কমিশন করে দেওয়ার দাবি জানান। কমিশন কে দেবে আপনাদের?
নিজেদের শক্তি দেখান। সাংস্কৃতিক শক্তি রাজপথে প্রদর্শন করেন। এতে উচ্ছৃঙ্খল হওয়ার, জ্বালাও-পোড়াও করার প্রয়োজন নেই। শুধু সাংস্কৃতিক উপকরণ নিয়ে নিজ নিজ ঐতিহ্যের পোশাক পরে রাজপথে নামেন।’
সভার শুরুতে লিখিত মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্য হেলেনা তালাং। এ সময় তিনি ভূমি সমস্যা সমাধানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ উপস্থাপন করেন।
স্বল্পমেয়াদি সুপারিশে সরকার ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত যৌথ কমিটির মাধ্যমে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমির পুঙ্খানুপুঙ্খ ডিজিটাল জরিপের সুপারিশ করা হয়।
দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার, সাংবিধানিক স্বীকৃতি, স্বতন্ত্র ভূমি কমিশন, ল্যান্ড সেটেলমেন্ট ট্রাইব্যুনালসহ আইনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ, স্থানীয় সরকার, জেলা ও উপজেলা পরিষদে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়।
আদিবাসী ও সংখ্যালঘুবিষয়ক সংসদীয় ককাসের কো-অর্ডিনেটর মেসবাহ কামাল বলেন, পাহাড় কিংবা সমতল—সবখানেই লড়াই জাগিয়ে রাখতে হবে। ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের বসবাসের এই দুই অঞ্চলকে পৃথক করা যাবে না।
ঐক্যবদ্ধ থেকে লড়াই করে যেতে হবে। পার্বত্য চট্টগ্রামে যেসব বহিরাগতদের ভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল, তা বাতিল করলেই সেখানকার ভূমি সমস্যার অর্ধেক সমাধান হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে ভূমি কমিশন হয়েছে প্রায় দুই দশক। কিন্তু ওই কমিশন একটি ভূমি বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারেনি।
পাকিস্তান যেমন বাঙালিদের ওপর নির্যাতন করেছিল, অস্বীকার করেছিল বাংলাদেশি বাঙালিরাও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের নির্যাতন ও অস্বীকার করে চলেছে। সবাইকে আন্দোলনে যুক্ত করা না গেলে অধিকার আদায় সম্ভব হবে না।
আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম চৌধুরী, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সংগঠনগুলোর ঐক্য পরিষদের (ইউসিজিএম) সহসভাপতি অজয় এ মৃ, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি ইউজিন নকরেক, ইউসিজিএমের মহাসচিব লেখক ও গবেষক অরণ্য ই চিরান, আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব চঞ্চনা চাকমা প্রমুখ। কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা সভা সঞ্চালনা করেন।