37 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সন্ধ্যা ৬:২০ | ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
ক্রমশ বেড়েই চলেছে রাজধানীর বায়ুদূষণ
পরিবেশ দূষণ

ক্রমশ বেড়েই চলেছে রাজধানীর বায়ুদূষণ

ক্রমশ বেড়েই চলেছে রাজধানীর বায়ুদূষণ

নভেম্বরজুড়ে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বায়ুর শহর ছিল ভারতের নয়াদিল্লি। শীত শুরু হতেই শহরটির বায়ুদূষণ দুর্যোগপূর্ণ হয়ে ওঠে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ এবং সরকারি অর্ধেকসংখ্যক কর্মীকে বাড়ি বসে অফিস করার নির্দেশ দেয়।

চলতি মাসে দিল্লিকে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। জনবহুল শহরটির বাতাসের মান ভয়াবহ খারাপের দিকে। বাতাসে মিশে থাকা ‘বিষ’ নিয়ে পরিবেশবিদদের কপালে রীতিমতো ভাঁজ পড়লেও নির্বিকার সরকারি সংশ্নিষ্ট প্রতিষ্ঠান। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে তারা নারাজ।



যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ার ভিজুয়ালের এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (একিউআই) প্রতিবেদন পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহে বিশ্বের দূষিত শহরের মধ্যে পাঁচ দিনের বেশকিছু সময়জুড়ে ঢাকা ছিল শীর্ষে। বাকি দু’দিন ছিল দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে।

১০ ও ১১ ডিসেম্বর সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত একিউআই স্কোর ছিল ১৯০-২২০ এর ঘরে। এ দু’দিন বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ অবস্থানে ছিল ঢাকা। এর পর থেকে বায়ুর মান খারাপ হতে শুরু করে।

১২ ডিসেম্বর থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দিনের কয়েক ঘণ্টাজুড়ে বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় শীর্ষে ছিল ঢাকা। ১২ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় একিউআই স্কোর ২০২, ১৩ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় ২৬৫, ১৪ ডিসেম্বর সকাল ১০টা ১০ মিনিটে ৩৮২ এবং ১৫ ডিসেম্বর সকাল সোয়া ১০টায় রাজধানীর বায়ুর মান ছিল ৩৩৭।

গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল ৯টা থেকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত রাত ৮টায় ঢাকা ছিল শীর্ষে। বায়ুর মান ছিল ২১০ থেকে ২৫৬-এর মধ্যে।

এয়ার ভিজুয়াল তথ্যানুযায়ী, কোনো এলাকায় একিউআই স্কোর ৫০- এর নিচে থাকলে তা ভালো। স্কোর ৫১ থেকে ১০০ সহনীয়, ১০১ থেকে ১৫০ বিশেষ শ্রেণির মানুষের জন্য অস্বাস্থ্যকর, ১৫১ থেকে ২০০ অস্বাস্থ্যকর, ২০১ থেকে ৩০০ খুবই অস্বাস্থ্যকর এবং ৩০১ থেকে ৫০০ হলে তা বিপজ্জনক।



বেসরকারি স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমেদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের মানমাত্রা হলো ৬৫ মাইক্রো গ্রাম।

কিন্তু এ মাত্রার তিন গুণেরও অধিক রয়েছে ঢাকা শহরের বায়ুমান। নির্মাণকাজ ও ইটভাটা এলাকায় দূষণের মাত্রা দ্বিগুণ। চলতি মাসেই রাজধানীতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়েছে দ্বিগুণ।’

তিনি আরো বলেন, ‘ভারতের দিল্লি, মুম্বাই, থাইল্যান্ডের ব্যাংকক, চীনের বেইজিং শহরে বায়ুর মান খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছে গেলে সরকার বিশেষ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা জারি করে। বায়ুদূষণ থেকে নাগরিকদের সুরক্ষায় নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থার পরামর্শ দেয় স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু বাংলাদেশে এ নিয়ে কোনো প্রচারণা নেই।

প্রতিবছর নভেম্বর থেকে রাজধানীসহ দেশের প্রধান প্রধান শহরের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। সিটি করপোরেশন ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে থাকা পানি ছিটানোর যানবাহন কাজে লাগানো উচিত। নির্মাণকাজ ও যানবাহনের ধুলা নিয়ন্ত্রণে আরও কঠোর হওয়া দরকার।’

১৯৯৫ সালের পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, বাতাসের মান ঢাকার মতো এমন খারাপ অবস্থায় পৌঁছালে পরিবেশ অধিদপ্তরের অবশ্যই স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে গণসতর্কতা জারি করার কথা। কিন্তু এমন কোনো উদ্যোগ এখনও চোখে পড়েনি।

নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘মেগা প্রজেক্ট থেকে ব্যক্তি উদ্যোগে যেসব ভবন হচ্ছে বা রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি চলছে, সব উন্মুক্তভাবে। কোথাও কোনো আচ্ছাদন নেই। দূষণে যানবাহনের ধোঁয়াও অনেকাংশে দায়ী।’



শুধু দেশের ভেতরে নয়, বাইরে থেকেও দূষিত বাতাস বাংলাদেশে আসছে। গত বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের ‘বায়ুদূষণমুক্ত করার প্রচেষ্টা : দক্ষিণ এশিয়ার বায়ুদূষণ ও জনস্বাস্থ্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় দূষণের ক্ষেত্রে প্রায় ৩০ শতাংশ ভূমিকা রাখে সীমান্তের ওপার থেকে আসা দূষিত বায়ু।

ঢাকায় বায়ুদূষণের উৎস প্রায় ৪ শতাংশ প্রাকৃতিক ও ৬ শতাংশ অভ্যন্তরীণ। প্রায় ২৮ শতাংশ দূষণের উৎস সীমান্তের ওপার থেকে আসা দূষিত বায়ু। দেশের অন্যান্য বিভাগ ও জেলা থেকে আসা দূষিত বায়ুও রাজধানীর বাতাসকে দূষিত করছে। ঢাকার বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে অন্যান্য বিভাগ ও জেলার দূষিত বায়ুর ভূমিকা ৬০ শতাংশের কিছু বেশি।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাবউদ্দিন বলেন, ‘গোটা বিশ্বেই এখন একই অবস্থা। পরিস্থিতি উন্নয়নে আমরা মোবাইল কোর্ট, পানি ছিটানো ও মানুষকে সচেতনে নানা প্রচারণা চালাই।

কিন্তু জনবল সংকটে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এদেশে সবাই বায়ু দূষণ করেন। কিন্তু বন্ধ করার দায়িত্ব শুধুই আমাদের। সবাই সচেতন না হলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত