28 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সকাল ১০:৫৮ | ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
কালের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব মাটির ঘর
পরিবেশ গবেষণা বাংলাদেশ পরিবেশ

কালের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব মাটির ঘর

কালের পরিক্রমায় বিলুপ্তির পথে পরিবেশ বান্ধব মাটির ঘর

চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার চিরচেনা ছনের ছাউনির মাটির ঘর। কালের পরিক্রমায় হারিয়ে যেতে বসেছে আবহমান বাংলার গ্রামীণ ঐতিহ্যের এই ছনের ছাউনির মাটির ঘর। আধুনিকতার উৎকর্ষতায় বর্তমানে রাঙ্গুনিয়ায় ছনের তৈরি মাটির ঘর বিলুপ্তির পথে বললেই চলে।

খুব বেশিদিন হয়নি যেখানে প্রতিটি গ্রামের দুই চারটি ছনের তৈরি ঘর চোখে পড়ত, বর্তমানে কয়েকটি ইউনিয়ন মিলেও এই ধরনের ঘর চোখে পড়েনা। এদিকে টিনের অত্যাধিক ব্যবহারের ফলে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

কারণ, দেশে উৎপাদিক অধিকাংশ টিন পরিবেশ বান্ধব নয়। তবে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার বিভিন্ন পাহাড়ি উপজাতি পাড়ায় এখনো কয়েকটি ছনের ঘর চোখে পড়ে।



ইতিহাসবিদ ও স্থানীয় প্রবীণ বৃদ্ধদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আজ থেকে ২০-২৫ বছর আগেও গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে ছনের ছাউনি ও মাটির ঘর ছিল। রাঙ্গুনিয়ার পাহাড় গুলেতে পাওয়া যেত বিপুল পরিমাণ ছন। যা ব্যবহার করা হতো ঘরের ছাউনি ও পানের বরজের কাজে। নিম্নবিত্তের মানুষ এই ছন দিয়ে ঘরের ছাউনি দিতো।

এ ছাড়া দিনমজুরেরা ছন বিক্রি করে সংসার চালাতো। স্থানীয় ভাবে গরীরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর বলে পরিচিত ছিল এই ছনের ছাউনির মাটির ঘর। উচ্চবিত্তরাও শখের বসে পাকা ঘরের চিলি কোটায় ছন ব্যবহার করতো।

উপজেলার ১৫ নং ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের আলম শাহ পাড়া গ্রামের বাসিন্দা শফিউল আলম সওদাগর বলেন, ‘গত পাঁচ বছর আগেও আমাদের বাড়িতে বেশ কয়েকটি ছনের ঘর ছিল। বছর দু’য়েক আগে তিনি ছনের ছাউনি ফেলে ইটের ঘর উঠান। শীত ও গরম উভয় মৌসুমে আরামদায়ক ছিল ছনের ছাউনির মাটির ঘর।’

জানা গেছে, ছনের ছাউনির ঘর তৈরির জন্য গ্রামে কিছু কারিগর ছিল। তাদের মজুরি ছিল ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত। বিশেষ কায়দায় ছনকে সাজিয়ে কয়েকটি ধাপের মাধ্যমে ঘরের ওপর ছাউনি দেয়া হতো।

ছাউনির ওপরে বাঁশ ও বেত দিয়ে শক্ত করে বেঁধে দিয়ে পানি ছিটানো হতো। যাতে করে সহজে ছনগুলো বাঁশের উপর বসে যায়। সাধারণত বন্যা, ভূমিকম্প, ঝড় কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এসব ঘর শতাধিক বছর পর্যন্ত টিকে থাকে। তবে পূর্ব পুরুষের স্মৃতি ধরে রাখতে অনেকেই দু-একটা মাটির ঘর এখনো টিকিয়ে রেখেছেন।

প্রত্নতত্ত্ব গবেষক এনায়েতুর রহিম বলেন, ‘১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল ভারত থেকে সৃষ্ট উজানের পানির ভয়াবহ বন্যা সারা দেশের ন্যায় রাঙ্গুনিয়ায়ও ছনের তৈরি ঘরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়।



এরপর থেকে মানুষ মাটি ও ছনের ঘর তৈরির আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। শুরু হয় পাকা দেয়াল, টিনের বেড়া ও চাউনি দিয়ে ঘর তৈরির রেওয়াজ। এ ছাড়া বছর বছর ছন পরিবর্তন করতে হয় বিধায় একে অনেকে ঝামেলাও মনে করে। সেই থেকে ছনের ছাউনি ঘরের সংখ্যা কমতে শুরু করে। বর্তমানে এই ঘর খুব একটা চোখে পড়েনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন হারিয়ে যেতে বসেছে বাঙালীর ঐতিহ্যের এই চিহ্নটি। হয়ত সেদিনটি খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন ছনের ছাউনির ঘরের কথা মানুষের মন থেকে চিরতরে হারিয়ে যাবে।

আর আগামী প্রজন্ম জাদুঘরে পাহাড়ি ছনের তৈরি মাটির ঘর দেখতে যাবে। সেসাথে আগামী প্রজন্ম রুপকথার গল্পেই এই ঘরকে স্থান দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে।’

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত