করোনাভাইরাস মানুষের জন্য বয়ে এনছে এক ভয়াবহ আতঙ্ক। করোনা আতঙ্কে বিশ্ববাসী আজ ঘরবন্দি অবস্থায় জীবন যাবন করছে। লক্ষ লক্ষ বেকারের সৃষ্টি হয়েছে। কর্মহীন হয়ে পড়েছে মানুষ। দেখা দিতে পারে খাদ্য সংকটও।
বিশ্বমহামরী এই করোনাভাইরাসের কবলে পড়েছে অর্থনীতি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সকল দেশ আগে থেকেই বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। কিন্তু অনেক গুলো খারাপ খবরের সাথে সাথে কিছু ভালো খবরও রয়েছে। আর হচ্ছে করোনাভাইরাস সত্যিকার অর্থে প্রকৃতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
বিশ্ব লকডাউনের ফলে প্রকৃতিতে এসেছে আলাদা স্বস্তি। কমেছে বায়ুদূষণও। সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে আলাদা এক পরিবেশ। যা মানুষ অনেক বছর দেখেনি। এই দিক থেকে বাংলাদেশের পরিবেশও উন্নত হয়েছে। কমে এসেছে বাংলাদেশের বায়ুদূষণ। দেখে সকল কলকারখানা বন্ধ থাকার পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে প্রায় সকল পরিবহন ব্যবস্থা।
দেশের সকল এলাকার মতোই লাকডাউনের কারণে বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রামের সকল ধরনের শিল্পকারখানা। বন্ধ রয়েছে যান চলাচল। এছাড়াও উন্নয়ন কর্মকান্ডের সকল কাজ বন্ধ রয়েছে। ফালে কর্ণফুলী দূষণ কমেছে অনেকটাই।
দখল আর দূষণে বিপর্যস্ত কর্ণফুলী নদীতে প্রতিদিন চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচ হাজার টন বর্জ্য ফেলা হয়। নদীকে কেন্দ্র করে যে শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে, সেগুলোর বিষাক্ত বর্জ্য এসে পড়ে নদীতে।
সেই সাথে জাহাজের ফার্নেস ও পোড়া কালো তেলে প্রতিদিনই দূষণ বাড়ে এ নদীর। তবে করোনা মহামারির কারণে দেড় মাস ধরে সব কল-কারখানা বন্ধ থাকায় কর্ণফুলী দূষণ অনেকটাই কমে এসেছে।
সেই সাথে দূষিত কালচে পানি এখন অনেকটাই স্বচ্ছ। আর নদীতে দীর্ঘ সময় পর আবারো দেখা যাচ্ছে ডলফিন।
নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন সাধারণ সম্পাদক আলিউর রহমান বলেন, কল-কারখানা বন্ধ থাকায় কর্ণফুলী দূষণ অনেকটাই কমে এসেছে। পানি অনেক স্বচ্ছ হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে অনেক মাছও দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে করোনার কারণে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে প্রকৃতিতে। সেই সাথে পরিবহন চলাচল, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় বাতাসে বিষাক্ত ধূলিকণার পরিমাণ কমেছে।
রসায়নবিদ ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে প্রকৃতিতে। ভাসমান কণাগুলো এসপিএম ১০ এবং এসপিএম ২.৫। এসপিএম ২.৫ অত্যন্ত ক্ষতিকর একটা কণা। যেটা মানুষের শ্বাসকষ্টের জন্য খুব ভয়াবহ। সেটিও এখন কমে গেছে।
এ মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে করোনা পরবর্তী পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজানোর প্রতি গুরুত্বারোপ করলেন পরিবেশবিদ ড. মনজুরুল কিবরিয়া।
তিনি বলেন, মহামারি থেকে শিক্ষা নিয়ে যদি পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজানো না হয় তাহলে এক সময় মানবসভ্যতাও বিলীন হয়ে যেতে পারে।
দূষণের কারণে গত ২০ থেকে ২৫ বছরে কর্ণফুলী নদী থেকে ৩৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে বলে মনে করেন নদী গবেষকরা।
করোনা মহামারির এ সময় দূষণ কমায় প্রকৃতি তার আপন রূপে সাজতে শুরু করেছে। করোনা মহামারি এক সময় থেমে গিয়ে সব স্বাভাবিক হয়ে যাবে। তবে পরিবেশের দূষণ মাত্রাতিরিক্ত কমাতে হলে সবাইকে সচেতন না হওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। সূত্র: সময়নিউজ