কঠিন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভুগবে বাংলাদেশ
বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে বেশ কিছু বিপদের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। বেশি প্রভাব পড়বে পানি ও বাতাসের ওপর। বদলে যাবে আবহমান ঋতুর চিরায়ত বৈশিষ্ট্য। ক্ষতিগ্রস্ত হবে কৃষি। ব্যাহত হবে খাদ্য উৎপাদন। প্রকৃতিতে ইতোমধ্যে এসবের লক্ষণ স্পষ্ট হতে শুরু করেছে।
বিশ্ব র্যাংকিংয়ে প্রাকৃতিকভাবে বিপর্যস্ত দেশের তালিকায় সপ্তম বাংলাদেশ। ১০-১২ বছর আগেও এটি ‘মাচ ভালনারেবল’ দেশ ছিল। অভিযোজনের (অ্যাডাপটেশন) জন্য সরকার চেষ্টা করছে।
২০০৫ সালে এনডিসি দেশগুলোর জন্য ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন (নাপা) তৈরি হয়েছে। ২০০৯ সালে এ সংক্রান্ত একটি গেজেটও প্রকাশ হয়। ২০১০ সালে ডেল্টা প্ল্যান করা হয়েছে।
মুজিব প্রোসপারেটিভ প্ল্যান নিয়েও চলছে আলোচনা। সময়মতো পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হওয়ায় গত বছর বাংলাদেশকে ভুগতে হয়েছে খরায়। এমনটা চলতে থাকলে ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হবে। দেশের তাপমাত্রা সমান হারে বাড়বে না, কোনও বছর বাড়বে, কোনও বছর কমবে, কোনও বছর অনেক বেড়ে যাবে।
১৯৬১-১৯৯১ সালের তথ্য বিশ্লেষণে এমনই আভাস পাওয়া গেছে। রাজশাহীতে এই সময়ে গরমের জন্য বাইরে বের হওয়া বেশ কষ্টদায়ক। এদিকে আবার সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে দেখা দিতে পারে বন্যা।
২০১৭ সালে এমন সময়ে বন্যা হয়েছিল। আশঙ্কা বলছে, এখন থেকে প্রতি ৫ বছর পর পর এমন বন্যা হবে, যা আগের ৩০ বছরের বন্যাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে। কোনও বছর বৃষ্টি বেশি হবে, কোনও বছর কম।
আবার হঠাৎ বৃষ্টিপাত বাড়বে। গত বছর রংপুরে একদিনে বৃষ্টি হয়েছিল ২২০ মিলিমিটার। তার আগের বছর হয়েছিল ৪৫৩ মিলিমিটার। ৪৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টিতে রাজধানীর বাসাবাড়িতেও হাঁটুপানি উঠবে।
আষাঢ়-শ্রাবণে বৃষ্টি কম হচ্ছে। এটি আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে। তবে বার্ষিক বৃষ্টিপাত বাড়বে। আগে আষাঢ়ের প্রথম দিনে কদম ফুটতে দেখা যেত। কিন্তু ঋতু পরিবর্তনের দোলাচলে এখন এ ফুল খুব একটা দেখা যায় না।
এর পেছনেও অনিয়মিত বৃষ্টির ভূমিকা রয়েছে। বর্ষা ঋতুতে বৃষ্টি কমলেও বার্ষিক বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে পারে। ২০১৭ সালে চৈত্র-বৈশাখে বৃষ্টি হয়েছে অনেকটা আষাঢ়ের মতোই। ফলে দেশে কিছুটা খাদ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছিল। এ বছর বর্ষা এসেছে বলতে গেলে মার্চ-এপ্রিলে।
অন্যদিকে, সাগরের পানি বেড়ে যাওয়ায় লবণাক্ততার প্রভাব গোপালগঞ্জ পর্যন্ত এসেছে। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট ইতোমধ্যে লবণাক্ত। এসব এলাকার মানুষ ঢাকায় এসে অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করবে। দেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপে লবণাক্ততা আরও বাড়বে।
৫-৭ বছরের মধ্যে এমন মাত্রার ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, যা বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত হয়নি। সম্ভাব্য ওই ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার। এর মাঝে সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশ্বের হার ৩.৬ মিলিমিটার। আমাদের উপকূলে তা ৫-৬ মিলিমিটার।
গবেষকরা বলছেন, খরার কারণে বিভিন্ন পোকামাকড়ের বৃদ্ধিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হবে। বিগত বছরগুলোতে দেশে কুয়াশাও বেড়েছে। যা আগামীতে আরও বাড়তে পারে।
সম্প্রতি দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুও বাড়ছে। ২০১৩-২০ সাল পর্যন্ত বজ্রাঘাতে ১ হাজার ৮৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলে মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি।
তাপমাত্রা বাড়লে কী সমস্যা হতে পারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বলেন, ফুল ফোটার সময় বদলে যাবে। তাতে ফসলের উৎপাদন কমবে।
২০-৩০ বছর পরে এখন যে প্রজাতির ধান, গম, আলুর উৎপাদন হচ্ছে তা কমে যাবে। ভুট্টার উৎপাদন বাড়বে। সমাধান হচ্ছে— আমাদের ভাত খাওয়া কমাতে হবে। ভুট্টা খাওয়া বাড়াতে হবে। সারা বিশ্ব এরই মধ্যে এ চর্চা শুরু করেছে।