32 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ১১:৪০ | ২৫শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১২ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলবায়ুসহিষ্ণু ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে
জলবায়ু

উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলবায়ুসহিষ্ণু ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে

উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলবায়ুসহিষ্ণু ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে

ভৌগোলিকভাবে নিম্ন বদ্বীপে অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ ঐতিহাসিকভাবেই বিশ্বের অন্যতম প্রধান দুর্যোগপ্রবণ অঞ্চল। উপরন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে।

ফলে উপকূলীয় অঞ্চলের জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলবায়ুসহিষ্ণু ঘর ও আশ্রয়কেন্দ্রের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। বিশেষত ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর বহুমুখী ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে সরকারের বিনিয়োগ বেড়েছে। প্রত্যাশিতভাবেই এসব আশ্রয়কেন্দ্র জীবনহানি কমাতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে।

বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ হচ্ছে উপকূলীয় অঞ্চল। জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনার (২০২২) তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিক উষ্ণতা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আরও প্রকট হবে। উপকূলীয় অঞ্চলের ১৬-২৩ শতাংশ এলাকা প্লাবিত হতে পারে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে প্রায় ৫ হাজার ৫০০টি ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র প্রয়োজন। অথচ বর্তমানে রয়েছে মাত্র ৩ হাজার ৭০০টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।



বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা নারী- পুরুষদের বিভিন্ন সুবিধা ভাগাভাগি করতে হয়। অনেক মানুষকে একই কক্ষে গাদাগাদি করে থাকতে হয়।

এ ছাড়া প্রায়ই নিরাপত্তাজনিত অনেক সমস্যা দেখা দেয়। পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের অভাবও থাকে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং গবাদি পশু রাখার ব্যবস্থা থাকে না।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে জলবায়ুসহিষ্ণু মিনি সাইক্লোন শেল্টার-কাম-হাউসের একটি মডেল তৈরি করেছে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক। কয়েক দশকের অভিজ্ঞতা, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মতামত বিবেচনায় নিয়ে সাশ্রয়ী খরচের বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ভোলা, বরগুনা, সাতক্ষীরা ও পটুয়াখালীতে ৩৫টি বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এনডিসি (ন্যাশনালি ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন) অ্যাকশন প্রজেক্ট বাস্তবায়নে অ্যাডাপ্টেশন এনটিআই (ন্যাশনাল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউশন) হিসেবে উপকূলীয় অঞ্চলে স্বল্প খরচে জলবায়ুসহিষ্ণু বাড়ি নির্মাণেও সহযোগিতা করছে ব্র্যাক।

পানি ও জলবায়ুবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত বাড়িটির নাম দিয়েছেন ‘আমার ঘর, আমার আশ্রয়’। অর্থাৎ বাড়িটিতে একের ভেতর দুই উপযোগিতা।



স্বাভাবিক সময়ে যেমন বাড়িতে একটি পরিবার বসবাস করতে পারবে; দুর্যোগের সময় তেমনি প্রতিবেশীরা আশ্রয় নিতে পারবে। আশ্রয়কেন্দ্রটি ব্যক্তি মালিকাধীন হলেও শর্ত থাকবে– দুর্যোগের সময় প্রতিবেশীকে বাড়িতে আশ্রয় দিতে হবে।

মাত্র ৬৫০ বর্গফুটের বাড়িটি খুব কম খরচে নির্মিত মাত্র সাড়ে ৬ লাখ টাকা। এই বাড়ির কাঠামোগত নকশা এমনভাবে করা হয়েছে যেন ঘণ্টায় ২৫০ কিলোমিটার বাতাসের গতিবেগসম্পন্ন ঘূর্ণিঝড়েও টিকে থাকতে পারে। গত ১০০ বছরের জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা বিবেচনায় রেখে ভিটের উচ্চতা নির্ধারণ ও নকশা করা হয়েছে।

‘আমার ঘর, আমার আশ্রয়’ বাড়িতে স্থানীয় অভিযোজনের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাড়িগুলোর ভেতরে বিভিন্ন পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থা যেমন ‘বন্ধুচুলা’, ‘সৌরবিদ্যুৎ ব্যবস্থা’, ‘বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা’ রাখা রয়েছে।

বাড়ির নিচতল খালি; সেখানে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থা, টয়লেট ও গবাদি পশু রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সুবিধার্থে বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। দ্বিতীয় তলায় দুটি ঘর, যাতে দুর্যোগের সময় নারী-পুরুষ পৃথক ঘরে স্বাচ্ছন্দ্যে আশ্রয় নিতে পারে। ঘরগুলোতে আলো-বাতাসেরও যথাযথ ব্যবস্থা রয়েছে।

আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তাজনিত কোনো সমস্যা নেই। কারণ দুর্যোগের সময় সেখানে পাড়া-প্রতিবেশীরাই আশ্রয় নেবে; যারা একে অপরকে চেনে। ফলে অস্বস্তি বা বিড়ম্বনা থাকে না।

৩৫ থেকে ৫০ জন লোক একই সঙ্গে থাকতে পারবে। নিজেদের বাড়ি-ঘর, সহায়সম্বল বা গবাদি পশু ছেড়ে বেশি দূরে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না। চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোকে প্রতিবন্ধী ও নারীবান্ধব করা হবে।



বলা যায়, বহুমুখী খুদে আশ্রয়কেন্দ্রের মডেল বাংলাদেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনেক গুরুত্ব বহন করবে এবং অন্যান্য দেশের জন্যও উদাহরণ সৃষ্টি করবে। আর্কিটেকচার ইন ডেভেলপমেন্টের গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ ২০২২-এর শীর্ষ ১০ ফাইনালিস্টের তালিকায় মনোনয়ন পেয়েছে ব্র্যাকের মিনি সাইক্লোন শেল্টারের মডেলটি।

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়ার সক্ষমতা বাড়াতে বাংলাদেশে দরকার নতুন উদ্ভাবন ও প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহার।

জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা উপকূলবাসীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় জলবায়ু-সহিষ্ণু বাড়িগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ও রাখবে। ভবিষ্যতে এই বাড়ির মডেল আরও বিস্তৃত আকারে এবং টেকসইভাবে নির্মাণ করার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত