উত্তর মেরুতে বৃহত্তম একটি ওজোন গর্ত লক্ষ্য করা গিয়েছে – যা পূর্বে রেকড করা হয়নি
– আশফাকুর রহমান নিলয়
ওজন স্তরে একটি নতুন গর্ত সৃষ্টি হয়েছে, তবে এটি এমন নয় যেখানে বিজ্ঞানীরা এটিকে খুঁজে পেতে পারে। অ্যান্টার্কটিকার ওপরে প্রতি বছর গঠিত কুখ্যাত (Infamous) গর্ত থেকে গ্রহটির অপর প্রান্তে আর্কটিকে বৃহৎ আকারে গর্তটি দেখা গেছে।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার (European Space Agency) বিজ্ঞানীরা বলেন যে, এই বিরল গর্তটি গ্রহের উত্তর গোলার্ধে রেকর্ড করা এই ধরণের সবচেয়ে বৃহৎ গর্ত। নেচার জার্নাল (Nature journal) এর তথ্যমতে, এটি গ্রিনল্যান্ডের আকারের তিনগুণ।
জার্মানির ওবারফাফেনহোফেনের জার্মান মহাকাশ কেন্দ্র(German Aerospace Center) এর বায়ুমন্ডলীয় বিশেষজ্ঞ মার্টিন ডামেরিস বলেন যে, “আমার দৃষ্টিতে, এটি প্রথমবারের মত যেখানে আপনারা আর্কটিকের একটি আসল ওজোন গর্ত নিয়ে কথা বলতে পারবেন।”
পৃথিবীর বায়ুমন্ডলীয় ওজনের স্তর সূর্য়ের ক্ষতিকর রশ্মি এবং পৃথিবীর পৃষ্ঠের মধ্যে একটি প্রতিরক্ষামূলক প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। ক্লোরোফ্লোরোকার্বণের মতো মানব সৃষ্ট রাসায়নিকগুলো গত শতাব্দী হতে ওজোন স্তরকে ধ্বংস করে দিচ্ছে এবং এর ফলে অ্যান্টার্কটিকায় ১৯৮০ এর দশকে পাতলা এবং অবশেষে বিশাল গর্তটি গঠিত হয়।
বিশেষজ্ঞরা বড় গর্তের জন্য কারণ হিসেবে অস্বাভাবিক বায়ুমন্ডলীয় অবস্থাকে উল্লেখ করেন। একইসাথে ঠান্ডা আবহাওয়াকে যা উচ্চতর মেঘকে একত্রে নিয়ে আসে।
যখন প্রতিবছর মেরুতে তাপমাত্রা ধারাবাহিকভঅবে কমে গেলেও উত্তর মেরুতে এমন পরিস্থিতি বিরল, ওজোন স্তরের হ্রাসকে একেবারেই কম ঘটনা।
জার্মানির পটসডাম এর আলফ্রেড ওয়েগেনার ইন্সটিটিউট (Alfred Wegener Institute) এর বায়ুমন্ডলীয় বিজ্ঞানী মার্কুস রেক্স এর তথ্যমতে, এই বছরে শক্তিশালী বায়ু একটি মেরু ঘূর্ণির সৃষ্টি করেছে, যা ১৯৭৯ সালের পরে রেকর্ড করা যেকোনো শীতকালের তুলনায় আর্কটিক এর ওপরে অধিক শীতল বায়ু প্রবাহ করেছে। নিম্ন তাপমাত্রার অর্থ হচ্ছে অধিক উচ্চতার মেঘ এবং ওজোনের ধ্বংস।
১৯৮৭ সালে মন্ট্রিয়াল প্রটোকল (Montreal Protocol) স্বাক্ষরের পর, ১৯৭ টি দেশ ওজন স্তরকে ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষার জন্য ক্লোরোফ্লোরোকার্বণ জাতীয় রাসায়নিক পদার্থকে সম্পূর্ণরুপে ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে সম্মত হয়েছিল, যা কিনা অ্যান্টার্কটিকার উপরের গর্তের আকারকে হ্রাস করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
যদিও নতুন গর্তকে নিয়ে গবেষকরা আশা করছেন যে, জুন-জুলাইতে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে এটি ঠিক হয়ে যাবে। গর্তটি দক্ষিণাঞ্চলের পরিপূরক অংশের মতো এখনও উদ্বেগজনকভাবে কাছে কোথাও নেই এবং মানব স্বাস্থ্যের জন্য বর্তমানে এটি ক্ষতিকর কিছু নয়।
যদি আসন্ন মাসগুলোতে এটি কম অক্ষাংশে দিয়ে প্রবাহিত হয়, রেক্স বলেছেন যে, মানুষদেরকে তাপদাহ এড়াতে আরও বেশি যত্নবান এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। তিনি আরও বলেন যে, “এটি মোকাবেলা করা কঠিন হবে না।”
যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ পার্কের দি ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড (The University of Maryland) এর বায়ুমন্ডলীয় গবেষক রস সালাউইচ বলেন যে, “এই মুহূর্তে আমরা কি হচ্ছে তা শুধু দেখছি। খেলা এখনও শেষ হয়নি।”
২০১৮ সালে নাসা সর্বপ্রথম দক্ষিণ গোলার্ধে রাসায়নিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা এবং ওজোন গর্তকে পুনরুদ্ধারের মধ্যে প্রথম সরাসরি সংযোগ ঘোষণা করে। তবে, এটি স্তরটিকে পুনরুদ্ধারে এবং বায়ুমন্ডল থেকে সম্পূর্ণভাবে রাসায়নিকগুলোকে বিলুপ্ত করার ক্ষেত্রে কয়েক দশক সময় লাগবে।
Source: CBSNEWS