29 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
রাত ৩:৩২ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
প্রাকৃতিক দুর্যোগ

উত্তরাঞ্চল জাগছে  দক্ষিণাঞ্চল ডুবছে, ২ ফুট উচ্চতার জোয়ারের শঙ্কা উপকূলে

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় বন্যার পানির নিচ থেকে জেগে উঠছে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। ক্ষত কাটিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে প্রাণপণ লড়ছে দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যার পানির সঙ্গে যুদ্ধ করা মানুষগুলো। এর মধ্যে এবার ভারি বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে ডুবছে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলীয় এলাকার সব নদ-নদীর পানি দ্রুত বাড়ছে। অস্বাভাবিক জোয়ার ও বেড়িবাঁধ ভেঙে ইতিমধ্যে প্লাবিত হয়েছে বরিশাল, বরগুনা, খুলনা, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, যশোর ও সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল। এদিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলাগুলো স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গতকাল সকালে দেওয়া বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে- ২৪ ঘণ্টায় ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ৪৩টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গতকাল সকালে পদ্মার পানি বিপৎসীমার ২৯ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরীর পানি ২৪ সেন্টিমিটার ও আত্রাইয়ের পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল এবং নদীগুলোর পানি অব্যাহত বাড়ছে। আজও অপরিবর্তিত থাকতে পারে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী ও ফরিদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি। ভারি বৃষ্টিপাতের ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম ও দক্ষিণ-মধ্য উপকূলীয় অঞ্চলের নদীগুলোর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদী এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস পাচ্ছে।

এদিকে গতকাল আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১-২ ফুট অধিক উচ্চতার বায়ুতাড়িত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হতে পারে। ভারতের বিহার-গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে ভারতের মধ্যপ্রদেশের মধ্যভাগ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দরের ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- বরিশাল : গতকাল চতুর্থ দিনের মতো কীর্তনখোলা নদীর জোয়ারের পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে নগরীর অভ্যন্তরে প্রবেশ করেছে। ঘরবাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরীর পলাশপুর, মোহাম্মদপুর, রসুলপুর, ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ, সদর রোড, প্যারারা রোড, আগরপুর রোডসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড দক্ষিণাঞ্চল জোনের প্রধান প্রকৌশলী মো. হারুন-অর রশিদ জানান, বরিশাল বিভাগের ১২৫টি নদ-নদীর বেশিরভাগেরই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। শুধু নগরী নয়, জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে বরিশালের অন্যান্য এলাকার নিম্নাঞ্চল। ভেসে গেছে বহু ঘেরের মাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ফসলি জমি, পানের বরজ। পানির কারণে বিপাকে পড়েছেন নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষ।
বরগুনা : টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে বরগুনার ছয় উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম। ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে ঢুকছে জোয়ারের পানি। পানির চাপে নতুন করে ভাঙন দেখা দিয়েছে বেড়িবাঁধে। অস্বাভাবিক জোয়ারের কারণে গতকাল পায়রা নদীর ফেরির গ্যাংওয়ে তলিয়ে তিন ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গতকাল জেলার প্রধান তিনটি নদীতেই জোয়ারের পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে বরগুনা সদর উপজেলার বড়ইতলা, পোটকাখালী, বাওয়ালকার, মাইঠা, খাজুরতলা আবাসন, ফুলতলা আবাসন; তালতলী উপজেলার নিশানবাড়িয়া, ফকির হাট, সোনাকাটা, নিদ্রাসকিনা, তেঁতুলবাড়িয়া, আশার চর, নলবুনিয়া, তালুকদারপাড়া, চরপাড়া, গাবতলী, মৌপাড়া, ছোটবগী; আমতলী উপজেলার ঘোপখালী, বালিয়াতলী, পশুরবুনিয়া, আড়পাঙ্গাশিয়া, পশ্চিম আমতলী, ফেরিঘাট, পুরাতন লঞ্চঘাট, আমুয়ার চর; বেতাগীর ঝোপখালী, কেওয়াবুনিয়া, কালিকাবাড়ী; বামনার রামনা, অযোধ্যা; পাথরঘাটার রুহিতা, পদ্মা, বাদুরতলা, চরদোয়ানী, কুপধন, কাকচিড়া এলাকাসহ চর ও নিম্নাঞ্চলের অর্ধশতাধিক গ্রাম। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের ঘরবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার মানুষ। তালতলী তেঁতুলবাড়িয়া এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে। বাঁধ রক্ষায় বালুর বস্তা ফেলছে পাউবো। দক্ষিণ-পশ্চিম আমতলী ও উত্তর টিয়াখালী আবাসনসহ ১০টি আবাসন পানিতে তলিয়ে গেছে। ওই আবাসনের লোকজন গত চার দিন ধরে অনাহারে-অর্ধাহারে দিনাতিপাত করছে। পাথরঘাটায় পদ্মা এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রাম।

ঝালকাঠি : বিষখালী-সুগন্ধা ও গাবখান নদীর জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে তিন-চার ফুট বৃদ্ধি ও বিরামহীন ভারি বর্ষণের কারণে গত তিন দিন ধরে নিম্নাঞ্চলের হাজার হাজার বাড়ি-ঘর প্লাবিত হয়েছে। শত শত পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে পানের বরজ ও আমনের বীজতলা। গ্রামের অনেক সংযোগ সড়ক পানির স্রোতে ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আমুয়া হাসপাতাল সংলগ্ন রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ঝালকাঠি শহরের নিম্নাঞ্চল, নলছিটি ও রাজাপুরের অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে। নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ বাড়ির আঙ্গিনা ও রান্নার চুলায় পানি ঢুকে পড়ায় শত শত পরিবার রান্না করতে পারছে না। গবাদি পশুর ঘর ও গো খাবার পানিতে ডুবে যাওয়ায় অনেকেই পার্শ্ববর্তী উঁচু জায়গায় গবাদি পশু সরিয়ে নিয়েছেন। তবে গো খাদ্যের অভাব রয়েছে প্রকট।

বাগেরহাট : দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে নদ-নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলা শহরসহ তিনটি উপজেলা সদর ও সুন্দরবনের করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্র হাঁটু পানিতে তলিয়ে গেছে। মোরেলগঞ্জ ও মোংলা ফেরিঘাটের পন্টুন ও রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় ফেরি পারাপার বিঘিœত হচ্ছে। জেলার সাতটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে ভেসে গেছে কয়েকশ চিংড়ি ও মৎস্য খামার।

বেনাপোল : সীমান্তবর্তী ভারতীয় ইছামতী ও কোদলা নদীর উজানের পানির ঢলে বেনাপোল ও শার্শার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিন হাজার হেক্টর জমির আউশ-আমন পানিতে তলিয়ে গেছে। ডুবেছে সবজি খেত। সীমান্তবর্তী দাদখালি খালের স্লুইজগেটটি ধীর্ঘদিন অকেজো থাকায় প্রতি বছর একইভাবে পানিতে তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন এই এলাকার হাজার হাজার কৃষক।

রাজবাড়ী : পদ্মায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নিম্নাঞ্চলের দুই হাজার পরিবারের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম বলেন, পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বেশ কিছু পরিবার নতুন করে পানিবন্দী হয়েছে। এসব পরিবারে ত্রাণ সহায়তার প্রয়োজন হলে প্রশাসন সেই ব্যবস্থা করবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত