ইট তৈরিতে শত শত বিঘা ফসলি জমির মাটি পুড়ছে!
কোন ধরনের নিয়মনীতিকে গ্রায্য না করে মির্জাপুর উপজেলায় প্রায় ৩০টির বেশী অবৈধ ইটভাটা গড়ে তোলা হয়েছে যার ফলে এতে কয়েক শত বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং ভাটার আগুনে পুড়ছে উর্বর মাটি সাথে সাথে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ এবং হুমকিতে পড়ছে জনস্বাস্থ্য।
উপজেলা নির্বাহী অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ধেরুয়া, রানাসাল, গোড়াই, হাঁটুভাঙা এলাকায় ২৯টি থেকে ৩০টির মত অবৈধ ইটভাটা রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জনবসতি ও রেললাইন এবং হাইওয়ে রাস্তা থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার দূরে ইটভাটা তৈরি করার কথা এবং সেটি হতে হবে অবশ্যই ফসলি জমি বাদে পতিত ও অনূর্বর জমিতে। কিন্তু অধিক মুনাফালোভী অসৎ এই সব ব্যবসায়ী প্রায় সব ভাটাই ফসলি জমিতে গড়ে তুলেছেন। এতে আশঙ্কাজনক হারে ফসলি জমি কমে যাওয়ায় উৎপাদন ঘাটতি ও পরিবেশ দূষণ হচ্ছে।
এখানকার প্রতিটি ইটভাটায় গড়ে ৩৫-৪০ লাখ ইট তৈরি করতে প্রায় ৮ কোটি ঘনফুট মাটি ও আনুপাতিক হারে বালু ব্যবহার করা হয়। আর ওই মাটির সিংহভাগই ফসলি জমির উপরিভাগ থেকে কেটে নেয়া ।
সচেতন মহল জোর দাবি জানিয়েছেন যে, ফসলি জমিতে ইট ভাটা তৈরি বন্ধ বা অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা হোক কেননা এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে উপজেলার কোনো জমিতে ফসল উৎপাদন তো দূরের কথা এ অঞ্চল বিরান ভূমিতে পরিণত হবে এবং বসবাসের অনূপযোগী হয়ে যাবে।
এলাকাবাসী ও কৃষকদের অভিযোগ, ঘুষ ও রাজনৈতিক প্রভাবে পরিবেশ অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিয়ে পরে সরাসরি জেলা প্রশাসক কার্যালয় থেকে লাইসেন্স নিয়ে ইটভাটা গড়ে পুরো গ্রামের সকল মানুষের ক্ষতি করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এর কোনো প্রতিকার করা হচ্ছে না বরং দেখেও না ও দেখার ভান করছে।
উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মো. কাদের সিকদার জমির উপরিভাগের মাটি কেটে ইট তৈরির কথা একেবারেই অস্বীকার করে বলেন, পাহাড়ি মাটি ও বালি দিয়ে ইট তৈরি করা হয়।
কৃষিতে ইটভাটার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার মুহাম্মদ মশিউর রহমান খান বলেন, নিয়ম ভঙ্গ করে ইটভাটা তৈরি করায় কৃষিতে এর ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে। কারণ ভাটা তৈরির ফলে ফসলি জমির পরিমান কমে যাচ্ছে।
শুধু ইট ভাটার জমি নয় বরং এর আশপাশের জমিগুলো ধ্বংশ হবার মত অবস্থায় পৌছে যাচ্ছে কেননা সেখানকার মাটিতেও ফসল উৎপাদন অনেক কম হচ্ছে। অন্যদিকে জমির উপরিভাগের উর্বর মাটি কেটে ইট তৈরি করাসহ অধিক কার্বন নিরসনের ফলে ফলদ গাছে ফলন কম হচ্ছে।
টাঙ্গাইল জেলার পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, আবাসিক, বাণিজ্যিক, সরকারি মালিকানাধীন ও ব্যক্তিমালিকানাধীন কৃষিজমিতে কোনোভাবেই ইটভাটা নির্মাণ করার নিয়োম নেই।
স্থানীয় সরকার নির্মিত রাস্তা থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার, রেলপথ ও হাসপাতাল থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা তৈরি করতে হবে। এগুলো তো সাধারন ভাবেই মেনে নিয়ে চলার কথা কেননা এসব বিষয় বিবেচনা করেই পরিবেশ অধিদফতর ইটভাটার ছাড়পত্র দেয়। এর পরও কেউ যদি আইন অমান্য করে, তা হলে সঠিক পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশের কোনরকম ছাড়পত্র ছাড়া মির্জাপুরে প্রায় ৩০টি ইটভাটা রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান শুরু করেছি পর্যায়ক্রমে সব ভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং অবৈধ গুলিকে গুড়িয়ে দেওয়া হবে।
অন্যদিকে গত বুধবার মির্জাপুরে ভাই ভাই ব্রিকস মো. শহীদুর রহমানকে ছয় লাখ, শাহ আলম ব্রিকস ছয় লাখ, এসবিএম ব্রিকস ছয় লাখ, হাকিম ব্রিকস ছয় লাখ, এসটিবি ব্রিকস মালিককে ছয় লাখ টাকা করে মোট ত্রিশ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। তবে ইটভাটার মালিকরা অভিযান শেষ হওয়ার পর পরই পুনরায় ইট তৈরি শুরু করেছেন।