আমাদের পৃথিবীর টিকে থাকার সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে: আইপিসিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে স্বল্পোন্নত দেশসমূহের প্রতিক্রিয়া
স্বল্পোন্নত ৪৬ দেশের সংঘটনের চেয়ারম্যান বলেছেন যে, বিজ্ঞান আরও স্পষ্ট হয়েছে, বিশ্বে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ বাড়ছে এবং এর প্রভাবগুলি ধ্বংসাত্মক হবে।
আইপিসিসির ষষ্ঠ প্রতিবেদনে (Sixth Assessment Report – IPCC) স্বল্পোন্নত দেশগুলো প্রতিক্রিয়া হলো, “এলার্ম বেল বাজছে, আশা করি সবাই শুনছে।”
স্বল্পোন্নত দেশগুলো (Least Developed Countries -LDCs), যারা বৈশ্বিক উষ্ণায়নের প্রভাবে সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি বহন করবে, তারা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত গত ০৯ আগষ্ট, ২০২১ আইপিসিসির ষষ্ঠ প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর অত্যন্ত কড়া ভাষায় ক্ষোভও উষ্মা প্রকাশ করে।
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্ত -সরকারি প্যানেল –আইপিসিসি ( Intergovernmental Panel on Climate Change-IPPC) ২০১৩ সাল থেকে জলবায়ু পরিবর্তনের বিজ্ঞান সম্পর্কে তার সর্বাধিক বিস্তৃত প্রতিবেদন প্রকাশ করার পর স্বল্পোন্নত ৪৬ দেশের গ্রুপের চেয়ারম্যান সোনম পি ওয়াংদি বলেন, ”অ্যালার্ম বেল বাজছে; আমি আশা করি সবাই তাদের কথা শুনছে।”
বাস্তব বিজ্ঞানের ভিত্তিতে জলবায়ু পরিবর্তন/২০২১ প্রতিবেদনে গবেষণায় প্রাপ্ত অন্যান্য তথ্যের মধ্যে রয়েছে-
- ১৯৭৯ সাল থেকে ২০২১ সাল প্রর্যন্ত উত্তর মহাসাগরে বরফের পরিমান ৪০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
- তাপমাত্রায় প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধির সাথে সাথে চরম বৃষ্টির ঘটনাগুলির তীব্রতা ৭ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।
- কার্বন ডাই অক্সাইডের ঘনত্ব গত ২০ লক্ষ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে অবিলম্বে দ্রুততার সাথে বড় আকারে হ্রাস না করা হলে, প্যারিস জলবায়ু চুক্তি (Paris Agreement) মোতাবেক এ শতাব্দিতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এমনকি ২ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে সীমাবদ্ধতা রাখার লক্ষ্য নাগালের বাইরে চলে যাবে।
ওয়াংদি বলেন, “প্রতিবেদনটি আরেকটি কঠোর সতর্কতা হিসাবে এসেছে। বিজ্ঞান আরও পরিষ্কার: গ্লোবাল গ্রিনহাউস (Greenhouse gas) গ্যাস নির্গমন অব্যহত রয়েছে, জলবায়ু সংকট আরও খারাপ হচ্ছে এবং এর প্রভাবগুলো ধ্বংসাত্মক হবে।
প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে যে ১.৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড লক্ষ্য এখনও নাগালের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু আমাদের এখনই একসাথে কাজ করতে হবে, তাৎক্ষণিকভাবে উষ্ণায়ন সীমাবদ্ধ করতে এবং আমাদের সম্প্রদায়গুলিকে উষ্ণায়ন মোকাবেলার জন্য প্রস্তুত করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রতিবেদনটি জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে বেশ কয়েকটি “উদ্বেগজনক তথ্য” তুলে ধরেছে, যেমন, গত চার দশক ধারাবাহিকভাবে বিশ্ব উষ্ণতা বেড়েছে, পৃথিবী পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এবং সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বৈশ্বিক হিমবাহগুলো দ্রুত গলে গিয়েছে।
তিনি এর সাথে বলেন যে, “এটি নিশ্চিত করে যে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমরা যে সঙ্কটের মুখোমুখি হচ্ছি বর্তমান বৈশ্বিক প্রচেষ্টাগুললো তা প্রতিফলিত করে না।”
তিনি আরো বলেন, আগামী নভেম্বর মাসে যুক্তরাজ্যের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ সম্মেলন-কপ২৬ (COP 26 of the UN Framework Convention on Climate Change-COP26) এর আগে এই সংকটকে আরও উচ্চাভিলাষী জাতীয়ভাবে নির্ধারিত অবদান -এনডিসি (Nationally Determined Contributions-NDCs), দীর্ঘমেয়াদী কার্বণ শূণ্যতা অর্ণ পরিকল্পনা এবং জলবায়ুতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশসমূহকে এর প্রভাব মোকাবেলায় আরও জলবায়ু অর্থায়নের মাসাথে মোকাবিলা করতে হবে।
তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন যে, একই এনডিসি (NDC) পুনরায় জমা দেওয়া যথেষ্ট নয় এবং ২০৩০ এর জন্য শক্তিশালী কার্বণ নির্গমন হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা নিদ্ধারণ করা প্রয়োজন।
তিনি আফসুস করে বলেন যে, “আমাদের সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব গত কয়েক সপ্তাহে নজিরবিহীন এবং প্রাণঘাতী তাপপ্রবাহ এবং বন্যা দেখেছে। নির্গমন বাড়তে থাকায় এগুলি আরও খারাপ হবে। ”
Reference : DownToEarth