31 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
বিকাল ৪:৫৬ | ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
আমাদের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের
পরিবেশ রক্ষা

আমাদের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের

আমাদের পরিবেশ রক্ষার দায়িত্ব আমাদের

সদ্য সমাপ্ত জি-৭ শীর্ষ সন্মেলনে পরিবেশ/জলবায়ু সংক্রান্ত ইস্যুসমূহ যতটুকু গুরুত্ব পাওয়া উচিত ছিল, তা পায় নি। ধনী দেশগুলোর এই গোষ্ঠী ব্যস্ত থেকেছে নিজেদের আর্থিক, বাণিজ্যিক স্বার্থের বলয়ে। চেষ্টা করেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে নিজেদের কর্তৃত্ব আরও নিরঙ্কুশ রাখার জন্যে।

অথচ বিশ্বের পরিবেশ হানি ও জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের জন্য ধনী ও শিল্পোন্নত দেশগুলোর ভূমিকাই বেশি। অধিক জ্বালানি পোড়ানো, অঢেল রাসায়নিক বর্জ্য নির্গতকরণ, সীমাহীন যান্ত্রিক ও ধাতব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র-অদৃশ্যমান কণিকা বাতাসে ছড়িয়ে দেওয়া তথা সামগ্রিকভাবে পরিবেশের বিপদ বাড়াতে ধনী দেশগুলোই অগ্রণী।

এসব দেশের আপত্তিকর কাজের জন্য ভারসাম্যহীন হচ্ছে বৈশ্বিক জলবায়ু। বস্তুতপক্ষে, আমাদের পরিবেশের বিপন্নতার নেপথ্যে গরির দেশের চেয়ে ধনী দেশের অবদান ঢের বেশি।

ফলে আমরা তথা সমগ্র বিশ্ববাসীই এখন জলবায়ু পরিবর্তনকে বেশ স্পষ্ট ও কঠিনভাবে অনুভব করতে পারছি। মুশকিল হল, সাধারণ মানুষ এ ব্যাপারে খুব একটা চিন্তিত নন, যেমন চিন্তিত নয় সাধারণ, দরিদ্র ও অনুন্নত দেশগুলো।



আমরা লিপ্ত আছি সস্তা ও রগরগে বিষয়ে, আত্মকলহে, বিতর্ক-বিতন্ডায়, গসিপে, স্ক্যান্ডালে। আত্মরতির আনন্দের মতো আমরা বিভোর তাৎক্ষণিকভাবে উত্তেজনাকর ইস্যুতে। বর্তমান ও ভবিষ্যতের চরম বিপদ তথা পরিবেশ সমস্যা এবং এমনতর কঠিন ও প্রয়োজনীয় বিষয়ে আমরা ভয়ানক উদাসীন, যাকে স্পষ্টভাষায় বলা যায় ‘বিকারহীন’।

পরিবেশ বিপন্নতা ও বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তনের সমস্যা স্থানীয়ভাবে একটি দেশের কারণে হয় নি। বহুদেশের অপকর্ম ও অপরাধে দায়ে বিশ্ব পড়েছে চরমতম পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকির মুখে। বহুদেশের, বিশেষত উন্নত ও ধনীদেশের কম-বেশি পরিবেশ বিরোধী কাজের ফলেই বেড়েছে বিশ্ব ও বিশ্ববাসীর বিপদ।

দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যায়, চীন, ভারতের মতো জনবহুল দেশে এখনও কয়লার ব্যবহার রমরম করে চলছে। গোটা পৃথিবীতে গাড়ির জ্বালানি হিসেবে এখনও তেলের ব্যবহার তুঙ্গে। এসব জ্বালানি পোড়ানোর কারণে বায়ুমণ্ডলে ক্ষয় ও ক্ষতি হচ্ছে চরমভাবে।

আর বায়ুমণ্ডলে দূষণ বাড়ার ফলে আবহাওয়ার চরম ভাবাপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেয়েছে। কয়েক বছর আগে যেমন ভাবা হয়েছিল, তার থেকেও দ্রুত ও ব্যাপক হারে জলবায়ুর বদল হচ্ছে।

খরা, বন্যা, ঝড় এখন আকস্মিক প্রাকৃতিক দুর্যোগের চরিত্র বদলিয়ে অতি স্বাভাবিক ও নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সমুদ্র উঁচু হচ্ছে বলে নিচু দ্বীপগুলো এবং উপকূলের শহরগুলো বিপন্ন হচ্ছে। উষ্ণ অঞ্চলে কীট-পতঙ্গ বাহিত রোগ ছড়াচ্ছে।

আগে ঠান্ডা আবহাওয়ার জন্য যেখানে জীবাণুবাহী নানা পতঙ্গ বেঁচে থাকতে পারত না, সেই সব জায়গাও এখন উষ্ণ। তাই রোগবাহী পতঙ্গের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বাড়ছে।

আমাদের পরিবেশ দূষিত হওয়ার জন্য এবং জলবায়ুর ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার কারণে রোগ, শোক, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইত্যাদিতে মানুষ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নাজেহাল। পরিবেশের কারণে বাড়ছে প্রাণঘাতী রোগের প্রকোপ।



খেয়াল করলেই দেখা যাচ্ছে যে, একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে নিরাপদ জীবন-জীবিকা ও নিশ্চিন্ত বসবাসকে। লাগামহীন শিল্পায়ন, অপরিকল্পিত নগরায়ণ, বনাঞ্চলের সঙ্কোচন, যত্রতত্র বর্জ্য নিক্ষেপ, জ্বালানি পোড়ানোর ঘটনা পরিবেশকে বিপন্ন করছে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই শতাব্দীর শেষে ৩-৪ ডিগ্ৰি সেলসিয়াস উত্তাপ বাড়বে পৃথিবীর, যা চরম প্রভাব ফেলবে মানুষের জীবনে। মানুষ হবে উষ্ণায়নের পৃথিবীতে চরমভাবে বিপদগ্রস্ত।

অনুরূপভাবে, কৃষিজমিতে লাগামছাড়া কৃত্রিম রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আজ বিশাল আয়তনের কৃষিজমি তার প্রাকৃতিক গুণ হারিয়ে বন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির আধার আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে, তবুও মানুষ পানির অপচয় করেই চলেছে।

বিশ্বের ধনী দেশগুলোর মতোই দরিদ্র দেশ ও দেশবাসীর মধ্যেও যদি পরিবেশ বিষয়ে উদাসীনতা বিরাজ করে তাহলে পরিস্থিতি অতি দ্রুতবেগে অবনতির শেষ সীমায় পৌঁছে যাবে। ধনী দেশগুলো নিজের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে পরিবেশের হানি করছে।

বিশ্ব নিয়ে মুখে বড় বড় কথা বললেও দায়িত্ব নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা এগিয়ে আসে না। লাভ, মুনাফা, শোষণ তাদের মোক্ষ। বিশ্বকে বাঁচানো তাদের লক্ষ্য নয়।

কিন্তু দরিদ্র দেশসমূহ এবং দরিদ্র দেশের মানুষের সমস্যা ধনী দেশগুলোর চেয়ে অনেক আলাদা। ধনী দেশগুলো যেমনভাবে নিজের স্বার্থ রক্ষার তাগিদে পরিবেশের হানি করছে, তেমনিভাবে নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থেই দরিদ্র দেশগুলোকে পরিবেশ রক্ষা করতে হবে।

পরিবেশ বাঁচলে আর জলবায়ুর ভারসাম্য রক্ষিত হলেই আমাদের বেঁচে থাকা ও বসবাস নিরাপদ ও বিপদমুক্ত হবে। ফলে ধনী দেশগুলোর পরিবেশ বিনষ্টকারী আচরণ ও অবস্থানের তীব্র বিরোধিতার পাশাপাশি নিজেদেরকে পরিবেশ রক্ষায় সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত