35 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
সন্ধ্যা ৬:১৯ | ১৮ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
মরু-পঙ্গপাল
আন্তর্জাতিক পরিবেশ পঙ্গপাল পরিবেশগত সমস্যা

আফ্রিকায় আবারও মরু-পঙ্গপাল আক্রমণের হুমকি, লক্ষ কোটি বংশ বিস্তার

আফ্রিকায় আবারও মরু-পঙ্গপাল আক্রমণের হুমকি, লক্ষ কোটি বংশ বিস্তার

গত বছর পঙ্গপালের হানায় পূর্ব আফ্রিকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। বলা হচ্ছে ৭০ বছরের ইতিহাসে এরকম ঘটনা ঘটেনি।

ঝাঁকে ঝাঁকে বংশ বিস্তার করা মরু-পঙ্গপালের কারণে গোটা পূর্ব আফ্রিকা ও আরব বিশ্বের কয়েকটি দেশের লাখ লাখ মানুষের জীবিকা আবারও বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক বার্তা প্রদান করেছে।

বছর-খানেক আগেও এসব দেশে পঙ্গপালের হানার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল।
পঙ্গপালের হানার কারণে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি 

তারপর প্রচুর কীটনাশক ছিটিয়ে এসব পঙ্গপাল নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু জাতিসংঘ বলছে তাতে খুব একটা কাজ হয়নি বলেই মনে হচ্ছে বা যা হয়েছে তা প্রয়োজনের থেকে সামান্য। জাতিসংঘ বলছে, মরুভূমির এসব পঙ্গপালের বংশ বিস্তারের জন্য ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলে এবং সোমালিয়াতে এখন পর্যন্ত আদর্শ পরিবেশ বজায় রয়েছে যার ফলে ঝুঁকির মুখে রয়েছে কেনিয়া।

গবেষকগণ বলছেন, লোহিত সাগরের উভয় পাশে প্রচুর পরিমানে পঙ্গপালের বংশ বিস্তার হচ্ছে যার ফলে এরিত্রিয়া, সৌদি আরব এবং ইয়েমেন সহ এসকল অঞ্চলের পার্শ্ববর্তী এলাকাও নতুন করে হুমকির মুখে পড়েছে। পূর্ব আফ্রিকায় এ বছর পঙ্গপালের যে ধরনের আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে, সেটি গত সত্তুর বছরের ইতিহাস ঘেটে সেরকম কখনও চোখে পড়েনি।

“কেনিয়াতে এই হুমকি অত্যান্ত ঝুকিপূর্ন অবস্থায় রয়েছে, আজ এই মুর্হুত্ব থেকে যে কোন সময়ে পঙ্গপাল হানা দিতে পারে,” বিবিসিকে একথা জানিয়েছেন কিথ ক্রেসমান, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থার ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা। যিনি পঙ্গপালের আক্রমণের পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করেন।

“এবারকার পরিস্থিতি গতবারের মতোই বা তার থেকে আরো খারাপ হতে পারে। কারণ বিভিন্ন দেশের ৩.৫ লাখ বর্গকিলোমিটার বিস্তৃত এলাকায় এসব পঙ্গপালের বংশ বৃদ্ধি ঘটছে এবং আবহাওয়াও তাদের অনুকূলে রয়েছে।”

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত শত কোটি পঙ্গপাল পূর্ব আফ্রিকা থেকে এশিয়ার দেশগুলোতে আক্রমণ করে ব্যাপক ফসল-হানি, খাদ্য সংকট ও অর্থনৈতিক অস্থিশীলতা ও বিপর্যয় ঘটিয়েছে।

“পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে আমরা আমাদের পশুচারণভূমি সহ প্রয়োজনীয় সকল গাছপালা হারিয়েছি আর একারণে এখনও আমাদের প্রচুর গবাদিপশু মারা যাচ্ছে এবং আমরা ভেষজ ঔষধ তৈরীতে সমস্যার সম্মূখীন হচ্ছি ,” বলেন কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একজন পশু খামারি গঞ্জোবা গুইয়ো।

তিনি বলেন, “পঙ্গপালের প্রকোপের কারণে আমি ১৪টি ছাগল, ৪টি গরু এবং ২টি উট হারিয়েছি। এখনও ভীতি তৈরি হয়েছে যে আমরা আবার কখনও একই ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারি কিম্বা এর পরিণতি আগের বারের চেয়েও খারাপ বা ভয়াবহ হতে পারে।”

উত্তর কেনিয়ায় মরু-পঙ্গপালের হামলা।
উত্তর কেনিয়ায় মরু-পঙ্গপালের হামলা।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার কর্মকর্তাগণ বলেছেন, তবে এই অঞ্চলের দেশগুলো পরিস্থিতি মোকাবেলায় এখন আগেরবারের তুলনায় ভালোভাবেই প্রস্তুত রয়েছে।

তবে তারা বলছেন, এবার নজরদারি বেশি, প্রস্তুতিও ভাল- যেমন জমিতে কিম্বা বিমান থেকে কীটনাশক ছিটানো হয়েছে। দশটি দেশের প্রায় ১০ লক্ষ একরেরও বেশি জমিতে পোকামাকড়ের উৎপাত ঠেকাতে ওষুধ দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে এখন এই ভীতি তৈরি হয়েছে যে পঙ্গপালের ঝাঁক খুব বেশি বড় হলে তারা হয়তো নিরুপায় হয়ে পড়তে পারে।

কিন্তু এবার এরকম পরিস্থিতির তৈরি হল কেন? এই অঞ্চলে কেন এতো পঙ্গপালের জন্ম হচ্ছে?

অনুকূল আবহাওয়া

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছরের বৃষ্টির মওসুমে সোমালিয়ার মধ্যাঞ্চল ও ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে এবং সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত গড় বৃষ্টিপাতের হার ছিল পরিমানের থেকে বেশি। এর ফলে জমিতে নানা ধরনের আগাছা ও প্রচুর পরিমাণে এমন গাছপালার জন্ম হয়েছে যা পঙ্গপালের জন্যে উর্বর।

মি. ক্রেসমান বলেন, “এই আবহাওয়ার ফলে পঙ্গপালের বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে যার কারনে এসব অঞ্চলে প্রকৃত অর্থেই প্রচুর পঙ্গপালের জন্ম হচ্ছে।” এরকম পরিস্থিতিতে কয়েক মাস বা তারও কম সময়ের ভিতর মধ্যেই ঝাঁকে ঝাঁকে পঙ্গপালের আবির্ভাব ঘটে।

পঙ্গপাল প্রথমে দিকে থাকে ডানাবিহীন ফড়িং এবং পরে সেগুলোর পাখা গজায়। এরা তখন ঝাঁকে ঝাঁকে আবহাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে শুরু করে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি বিষয়ক সংস্থা এবং বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার একটি প্রতিবেদনে দেখা গেছে, মরুভূমির পঙ্গপালের খুব দ্রুত বংশবিস্তার ঘটে এবং এক বছরের মধ্যে এদের সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার গুণ বা তারও বেশী বৃদ্ধি পেতে পারে।

ঘূর্ণিঝড় গাতি

উত্তর সোমালিয়ার আবহাওয়া অত্যান্ত শুষ্ক। এর ফলে পঙ্গপালের পক্ষে সেখানে বেঁচে থাকা খুবই কঠিন। কিন্তু গত নভেম্বর মাসে ঘূর্ণিঝড় গাতি আঘাত হানার পর থেকে সেখানকার পরিবেশ পুরোপুরি বদলে গেছে। মাত্র দু’দিনে দু’বছরের সমান বৃষ্টিপাত হয়েছে যা অকল্পনীয় ও বিষ্ময়কর।

ইথিওপিয়ায় কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে।
ইথিওপিয়ায় কীটনাশক ছিটানো হচ্ছে।

এর ফলে পঙ্গপালের জন্য সেখানকার পরিবেশ যেখানে বিরূপ হওয়ার কথা ছিল সেটা উল্টে গিয়ে তাদের বংশ বিস্তারের জন্য অনুকূল হয়ে উঠেছে। বন্যার পরে জমিতে পানি জমে যাওয়ার কারণে পঙ্গপালের জন্য সেখানে ডিম পাড়ার আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়েছে। একই সঙ্গে সেখানে যে প্রচুর গাছপালার জন্ম হয়েছে সেগুলোও তাদেরকে খাদ্য জুগিয়ে চলেছে।

মরুভূমির পঙ্গপালের আক্রমণের কারণে এবছর এই অঞ্চলের যেসব দেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অন্যতম এই সোমালিয়া।

যুদ্ধ সংঘাত

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আক্রান্ত বিভিন্ন অঞ্চলে নজরদারির কারণে সেসব এলাকা থেকে পঙ্গপালকে দূরে রাখা সম্ভব হয়েছে। তারা সতর্ক করে দিয়েছেন যেসব জায়গায় আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেই সেসব এলাকায় তা করা সম্ভব হয়নি।

“উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ সোমালিয়ার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, সেখানে কোন নজরদারি ছিল না,” বলেন মি. ক্রেসমান। কর্মকর্তারা বলছেন, ইয়েমেনের বিভিন্ন জায়গাতেও মরুভূমির পঙ্গপালের বংশবিস্তারের উপযোগী পরিবেশ রয়েছে। তবে সংঘাত ও যুদ্ধের কারণে গত কয়েক বছর ধরে কয়েকটি এলাকাতে নজরদারি চালানো সম্ভব হয়নি।

চারণভূমির ক্ষতি হওয়ায় মারা যাচ্ছে গবাদি পশুও।
চারণভূমির ক্ষতি হওয়ায় মারা যাচ্ছে গবাদি পশুও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এছাড়াও অনেক পঙ্গপাল সৌদি আরব থেকে ইয়েমেনের দিকে চলে আসছে। তারা বলছেন, বেশি সময় ধরে উড়তে পারার ক্ষমতা থাকার কারণে এসব পঙ্গপাল লোহিত সাগরও পাড়ি দিতে পারে যার দূরত্ব তিনশো কিলোমিটারের কিছু কম বা বেশী হবে।

কীটনাশক ছিটানো

এই অঞ্চলের বিভিন্ন দেশ পরিস্থিতি খারাপ হলে কীটনাশক ব্যবহারের জন্যও প্রস্তুত রয়েছে। জমিতে এবং আকাশ থেকে এই কীটনাশক ছিটানো হবে।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের জন্য গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচির কারণে প্রায় সাতাশ লাখ টন সিরিয়াল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে যার আর্থিক মূল্য আশি কোটি ডলারের মতো। এসব দেশ খাদ্য সঙ্কট ও দারিদ্রে ভুগছে।”

তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য আরো কিছু উপায় খুঁজে দেখা প্রয়োজন।

“আমরা নজরদারি বজায় রেখেছি কিন্তু আমাদেরকে কোন যন্ত্র অথবা ছিটানোর জন্য কীটনাশকও দেওয়া হয়নি,” বলেন জেরেমিয়া লেকোলি, একজন পরিবেশ বিজ্ঞানী যিনি কেনিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় মারসাবিত এলাকায় পঙ্গপালের ওপর নজরদারি করার কর্মসূচির সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। “কীটনাশক থাকা খুব জরুরি। নাহলে এর মধ্যেই পঙ্গপাল এসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটিয়ে চলে যাবে।”

সোমালিল্যান্ডের একটি গ্রামের জমিতে ছেয়ে আছে পঙ্গপাল।
সোমালিল্যান্ডের একটি গ্রামের জমিতে ছেয়ে আছে পঙ্গপাল।

খাদ্য ও কৃষি সংস্থা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, আক্রান্ত ৫টি দেশে ইতোমধ্যেই ৩.৫ কোটি মানুষ খাদ্য সঙ্কটে ভুগছে। তারা আরো বলছে, পঙ্গপালের বর্তমান প্রকোপ সামাল দেওয়া না গেলে তাদের সংখ্যা আরো প্রায় ৩৫-৪০ লাখ বেড়ে যেতে পারে।

সূত্র – বিবিসি ওয়ার্ল্ড।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত