আইন ও বিধির দ্বন্দ্বের সুযোগে বনের কাঠের অবৈধ বিক্রয়
মূল: এম এম সিদ্দিক, আইনী অর্থনীতিবিদ
বাংলারূপ:সুলহাত সালেহীন।
সেই ব্রিটিশ শাসন আমল হতেই পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়া শুরু হয়, যখন হতে পার্বত্য চট্টগামে সমতল ভূমির লোকজন বসবাস শুরু করে এবং একইভাবে আদিবাসীদের দ্বারা বনাঞ্চল অত্যাধিক নষ্ট করণ হতে রক্ষার্থে পার্বত্য চট্টগ্রামের বনাঞ্চল জাতীয় করণ করা হয়।
বনজ সম্পদের পূর্ণ দায়িত্ব ন্যস্ত হয় কেন্দ্রীয় সরকারের ২টি সংস্থার উপর; একটি হল সরকারের বন বিভাগ (Forest Department) এবং অন্যটি হল জেলা প্রশাসক (Deputy Commissioner -DC)।
ব্রিটিশরা কিছু নিয়ম ও নীতি প্রণণয়ন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম আইন, ১৯০০ এবং বন আইন, ১৯২৭ অনুমোদন করে। এখন সমতল ভূমি থেকে আগত এবং আদিবাসীদের সাথে বনের কাঠ পাচারকারীরা ঐ অঞ্চলে সক্রিয় রয়েছে।কাঠের ক্রমবর্ধমান চাহিদা সেখানে অরন্য বিনাশের কারণ ঘটছে।
বর্তমানে বাংলাদেশের বন ও বনজ সম্পদ রক্ষা করণ ও সংরক্ষণের জন্য প্রচুর আইন ও বিধি রয়েছে। সর্বাধিক পরিচিত বন সম্পর্কিত আইন, বন আইন ১৯২৭, আইনটি সরকারী এবং বেসরকারী উভয় ক্ষেত্রেই বন সংরক্ষণ ও সুরক্ষার জন্য গঠন করা হয়েছিল। ১৯৩০ সালে এটি সংশোধন করা হয়।
১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের পর পাকিস্তানের শাসন আমলে ১৯৪৯ এবং ১৯৬২ সালে এটি পূনরায় দু’দফা সংশোধন করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭৮ সালে এই আইনটি আরও একবার সংশোধন করা হয়; তবে ১৯৮৯ সালে বড় ধরনের পরিবর্তন করা হয়েছিল।
১৯৮৯ সালে অপরাধীদের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান এবং বিচক্ষনতার সাথে বন সুরক্ষা জোরদার করার জন্য বন কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ম্যাজিস্ট্রেটদের ক্ষমতা দিয়ে এই আইনটি সংশোধন করা হয়েছিল।
তখন কর্তৃপক্ষ দুটি নিয়মও জারি করেছে: পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্রানজিট বিধিমালা, ১৯৩৩ এবং দ্য ফরেস্ট ট্রানজিট বিধি, ২০১১।
১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে প্রণীত ব্রিক বার্নিং (কন্ট্রোল) আইনটি ইট তৈরির জন্য আগুনে কাঠ জ্বালানোর জন্য নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল এবং বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য ১ জুলাই, ২০১৪ থেকে কার্যকরভাবে ইট ভাটা নির্মাণ (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ গঠন করা হয়।
এটি উল্লেখযোগ্য যে পার্বত্য চট্টগ্রামের ট্রানজিট বিধিমালা ১৯৭৩, এর মাধ্যমে চট্টগ্রামের পার্বত্য জেলাগুলির মধ্যে বা এর ভিতর বা বাহিরে স্থল বা জলের মাধ্যমে কাঠ এবং অন্যান্য বনজ সম্পদের পরিবহণ নিয়ন্ত্রণ করতে এবং বন অঞ্চলে করাত এবং কাঠের ডিপো নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল।
অনুমতি ও নির্ধারিত হারের ফি ব্যতীত বনের কাঠ অপসারণ করা যাবে না । যে কোনও ব্যক্তি এই অঞ্চলে বা এর বাইরে কাঠ আমদানি, রফতানি বা অপসারণের জন্য বন কর্মকর্তা বা পুলিশ অফিসারের কাছ থেকে ট্রানজিট পাসের উৎস বা অনুমতিপত্রের প্রশংসাপত্র গ্রহণ করতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ফরেস্ট অ্যাক্ট, ১৯২৭ এ তিন বছরের মেয়াদে কারাদন্ড আরোপ করা হয়েছে এবং এটি দুই মাসেরও কম হবে না এবং জরিমানাও হতে পারে যা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং দু’হাজার টাকার চেয়ে কম হবে না।
তবে ১৯২৭ সালের বন আইন অনুসারে জারি করা ১৯৭৩ এর বন আইনের বিধি অনুসারে বন আইনের চেয়ে কম শাস্তি দিয়েছে।বিধিতে অবৈধ কাঠ কাটা ও চোরাচালানের জন্য কারাগারের মেয়াদ কমিয়ে ৬ মাস এবং জরিমানা ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
চোরাচালানকারী, উপজাতি মানুষ, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইন প্রয়োগকারীরা আইন ও বিধির দ্বন্দ্ব নিয়ে খুশি, যা কাঠের অবৈধভাবে বিক্রয় ও অবৈধ উপার্জনকে সহায়তা করছে।
রাঙামাটি পার্বত্য জেলার প্রধান জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জনাব মুহাম্মদ শামসুদ্দীন খালিদের একটি যুগান্তকারী রায়তে ১ লা মার্চ, ২০১৬, তারিখে মোকদ্দমা নং: বন ০৯/২০০৯ ক্ষেত্রে আইন ও বিধি পার্থক্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং বিধি পরিবর্তনের প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
এই বিধিকে ঐতিহাসিক হিসাবে বিবেচনা করা উচিত যেহেতু অধস্তন আদালত আমাদের দেশে আইন বা শাসনের অসঙ্গতি সম্পর্কে খুব কমই পর্যবেক্ষণ দেয়। আইন ও বিধির মধ্যে অভিন্নতা বজায় রাখতে সংশ্লিষ্ট নিয়ন্ত্রক মন্ত্রনালয়কে বিধি সংশোধন করা উচিত।