আইনি নোটিশ পেলো জাহাজাভাঙা শিল্প কারখানা
জাহাজভাঙা শিল্পকে লাল থেকে কমলা শ্রেণিতে পরিবর্তন করা নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের আদেশ বাতিল চেয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। আদেশ বাতিল চেয়ে সংগঠনটি একটি আইনি নোটিশ পাঠিয়েছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ও পরিচালক, শিল্প মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিপ ব্রেকারস অ্যাসোসিয়েশনকে পাঠানো হয়েছে এ আইনি নোটিশ।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা, ১৯৯৭ অনুযায়ী সবচেয়ে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠানকে লাল শ্রেণিভুক্ত করা হয়ে থাকে। এ শ্রেণিভুক্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করার ক্ষেত্রে পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার আগে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা বাধ্যতামূলক। কমলা শ্রেণি বা অন্যান্য শ্রেণির শিল্পপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় পরিবেশগত ছাড়পত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক হলেও পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করতে হয় না।
নোটিশে ওই আদেশ জারির যৌক্তিকতা, জনমত যাচাই প্রক্রিয়া ও ভিত্তি স্পষ্টভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করার দাবি জানিয়েছে বেলা।
নোটিশে বলা হয়, জাহাজভাঙা শিল্প পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর হওয়ায় উন্নত দেশগুলো নিজেদের দেশে জাহাজ না ভাঙার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভারত ও পাকিস্তান জাহাজ ভাঙার জন্য পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ (ইআইএ) বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ওই আদেশের মাধ্যমে জাহাজভাঙাকে বেশি দূষণকারী প্রতিষ্ঠান থেকে তুলনামূলক কম দূষণকারী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করেছে।
এর মাধ্যমে এ খাতের প্রতিষ্ঠানকে পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ করা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ও বিপজ্জনক। ভারত ও পাকিস্তানে জাহাজভাঙা শিল্প ‘লাল’ শ্রেণিভুক্ত।
বেলার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাহাজভাঙা শ্রমিকের ওপর পরিচালিত বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়া এই খাতের শ্রমিকের অধিকাংশের মৃত্যুর জন্য দায়ী ছিল অ্যাসবেসটসজনিত ক্যানসার।
ভারতের হাইকোর্টে দাখিল করা একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গুজরাটে জাহাজভাঙা ইয়ার্ডে কর্মরত শতকরা ১৬ ভাগ শ্রমিক অ্যাসবেসটসিস ক্যানসারে আক্রান্ত। বাংলাদেশের শ্রমিকদের ওপর এমন জরিপ করা হলে এ সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হবে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, জাহাজভাঙা শিল্পের অব্যাহত দূষণ নিয়ন্ত্রণ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পালনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সাফল্য দেখাতে পারেনি।
আদালতের বারবার নির্দেশনার পরও এ কর্মকাণ্ডে অন্তত ২০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ৯০ জন পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। এর কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত হয়নি। পাশাপাশি জাহাজভাঙা থেকে নির্গত দূষণকারী উপাদান ইতিমধ্যে উপকূলীয় মৎস্যসম্পদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।