অসহনীয় পরিবেশ, মগবাজারে সেই পরিত্যক্ত ভবনে দুর্গন্ধ তীব্রতর
রাজধানীর বড় মগবাজার এলাকার আউটার সার্কুলার রোডের ৭৯ নম্বর ভবনে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনার ৭ দিন কেটে যাচ্ছে। কিন্তু এখনও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির নিচ তলার আশপাশে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ। আর ওই ধ্বংসাবশেষ থেকে বেরিয়ে আসছে পঁচা মাংসের দুর্গন্ধ। যতই দিন যাচ্ছে ততই তীব্রতর হচ্ছে দুর্গন্ধ।
বিস্ফোরিত ভবনের নিচতলায় বেঙ্গল মিটের দোকানের ভেতরে পড়ে থাকা উন্মুক্ত ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষিত মাংস পঁচে এ দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে আশপাশের স্থানীয় বাসীন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন।
এমনকি ওই ভবনের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও নিরাপত্তা কর্মীরাও ভবনটির সামনে ডিউটি করতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন।
ইতিমধ্যে দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীদের তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায়, এখনও ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির আশপাশে পড়ে আছে ধ্বংসাবশেষ।
তবে ভবনটির নিচতলায় বেঙ্গল মিটের দোকানের ফ্রিজে থাকা পঁচা মাংস নিষ্কাশন বা পরিস্কার করার জন্য দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে অবহিত করেছে রমনা মডেল থানা কর্তৃপক্ষ। শিগরিই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
বড় মগবাজারে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটির আশেপাশে ঘুরে ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
স্থানীয়রা বলছেন, ভবনটির নিচতলায় অবস্থিত শর্মা হাউজ, বেঙ্গল মিট ও গ্র্যান্ড কনফেকশনারীর দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে বেঙ্গল মিট তাদের দোকানে মাংস ডিপ ফ্রিজে রাখত।
ভবনটিতে দুর্ঘটনার পর থেকে বেঙ্গল মিটের দোকানের ভেতরে রাখা ডিপ ফ্রিজের উপরের অংশ খুলে যায়। ফলে সেখান থাকা মাংস পঁচে তীব্র দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্গন্ধের তীব্রতার কারণে আশেপাশের কেউ ঘরের জানালা খুলে রাখতে পারছেন না।
ভবনের নিচে দায়িত্ব রত সিঙ্গারের নিরাপত্তা কর্মী মো. কবির বলেন, গত শুক্রবার থেকে আমি এই ভবনের দায়িত্বে রয়েছি। আমি এখানে দায়িত্বে আসার পর থেকে এখানে পরিত্যক্ত ডিপ ফ্রিজের মুখ খোলা দেখছি।
তখন থেকে অল্প দুর্গন্ধ বের হচ্ছিল। তবে দিন যতই যাচ্ছে, ততই মাংস পঁচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। দুর্গন্ধের কারণে ভবনের সামনে ডিউটি করতে কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এখনও পর্যন্ত ফ্রিজে থাকা ওই পঁচা মাংস কাউকে সরাতে দেখি নাই।
দুর্গন্ধের কারণে পুলিশ সদস্যরাও দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না। রাস্তার পথচারীদের এ পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে কষ্ট হচ্ছে। পঁচা মাংস দ্রুত নিষ্কাশনের দাবি জানাচ্ছি।
শনিবার বিস্ফোরণের ঘটনাস্থলের সেই ভবনের দায়িত্বে নিয়োজিত উপ পরিদর্শক মোঃ আল-আমিন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটি থেকে আলামত সংগ্রহের কাজ শেষ হলেও তদন্ত কার্যক্রম চলছে।
ফলে ভবনের সামনে এবং পেছনে পড়ে থাকা ধ্বংসাবশেষ এখনও সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়নি। তাই বাধ্য হয়ে পঁচা মাংসের দুর্গন্ধ সহ্য করতে হচ্ছে।
তবে এ বিষয়ে রমনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা (ওসি) মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, মগবাজারে বিস্ফোরণের ঘটনায় পরিত্যক্ত ওই ভবনটির নিচতালা থেকে বিকট দুর্ঘন্ধ ছড়াচ্ছে। আমরা সিটি করপোরেশনকে বলেছি, ওই ফ্রিজে থাকা পঁচা মাংস সরিয়ে নিতে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘মগবাজারের পরিত্যক্ত ভবনটি থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে- এমন খবর আমি পাইনি। বিষয়টি আমি আজ আপনার কাছ থেকে জেনেছি। শিগগিরই তা নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দুর্ঘটনাকবলিত ভবনটির বিভিন্ন অংশ ও আশপাশের ক্ষতিগ্রস্ত ধ্বংসাবশেষ থেকে আলামত সংগ্রহের কার্যক্রম শেষ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস জমে এই ভয়াবহ বিস্ফোরণ হয়েছে।
তদন্ত কার্যক্রম শেষ হলে বিস্তারিত জানানো হবে। ইতিমধ্যে ফায়ার সার্ভিস সহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন দপ্তর থেকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় এখনো পর্যন্ত ১১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন দেড়শতাধিক।