দেশের অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি চট্টগ্রাম বন্দর। লুসাই পাহাড় থেকে নেমে আসা কর্ণফুলী নদী দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের ধারক। অথচ আজ দখলে দূষণে বিপর্যস্ত এই নদী্। দখলমুক্ত করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কার্যকর হয়নি। নদীতে আবার নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠছে। প্রতিদিন টনে টনে বর্জ্য নদীতে ফেলা হয়। কারখানা ও পয়োবর্জ্যরে সাথে জমছে পলিথিনসহ আবর্জনার স্তুপ।ফলে নাব্যতা হারাচ্ছে খরস্রোতা কর্ণফুলী।
আদালতের নির্দেশনায় গেল ৪ ফেব্রুয়ারি নদীর সদরঘাট পয়েন্টে শুরু হয় উচ্ছেদ অভিযান। প্রথম দফায় টানা পাঁচ দিনের অভিযানে তিন শতাধিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দশ একরের বেশি জমি দখলমুক্ত করা হয়। এরপর থেমে যায় জেলা প্রশাসনের এ উচ্ছেদ অভিযান।
উচ্ছেদ করা জমিতে ফের নতুন নতুন স্থাপনা গড়ে উঠে। আদালতের নির্দেশনা পেয়ে গেল ২৩ জুলাই কর্ণফুলীর লালদিয়ার চরে অভিযান চালায় চট্টগ্রাম বন্দর। টানা দুইদিনের অভিযানে আড়াই হাজার কোটি টাকার ২৫ একর জমি দখলমুক্ত করে অভিযান শেষ করা হয়। সেখানেও নতুন করে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠছে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ৮৮.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নদী তীরে ছোট বড় ৮০০ কারখানা আছে। এসব কারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে মিশে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর ৬০ লাখ মানুষের গৃহস্থালী ও পয়োবর্জ্যও সরাসরি পড়ছে কর্ণফুলীতে। জোয়ার ভাটার সাথে নগরীর বিশাল এলাকার বর্জ্য খাল হয়ে নদীতে পড়ছে। এতে করে নদী ভরাট হয়ে যাচ্ছে।বিশেষ করে পলিথিনের স্তুপ জমে কর্ণফুলীর সর্বনাশ হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা বলছেন, নদীর মাটির উপরের অংশে দুই থেকে তিন মিটার পলিথিনের স্তর জমেছে। মাটির গভীরেও পলিথিন জমে গেছে। এই কারণে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।
কর্ণফুলী নদীতে চলাচলরত কয়েজ হাজার যান্ত্রিক নৌযানের জ্বালানি তেলেও নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। দূষণের ফলে অনেক প্রজাতির মাছ আর প্রাণি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। চরম হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য।
বিগত ২০১৫ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশে জেলা প্রশাসন পরিচালিত এক জরিপে কর্ণফুলীর দ্ইু তীরে দুই হাজার ১৮৭টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়। এসব স্থাপনায় বেদখল জমির পরিমাণ ১৫৮ একর। এসব জমির মূল্য কয়েক হাজার কোটি টাকা। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আদালতে মামলার কারণে উচ্ছেদ বন্ধ রয়েছে। আর বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছে, উচ্ছেদ অভিযান একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রকল্পের প্রয়োজনে যখন দরকার হবে তখন উচ্ছেদ করে জমি দখলমুক্ত করা হবে।