অবৈধ ভাবে ভাটায় কাঠ দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে ইট, পরিবেশ দূষণের আশঙ্কা
বরগুনার আমতলী উপজেলায় আটটি ড্রাম চিমনি ইটভাটায় ইট পোড়ানোর জন্য জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহারের প্রস্তুতি নিয়েছেন ভাটার মালিকেরা। আইন লঙ্ঘন করে এসব ইটভাটা লোকালয় ও ফসলি জমিতে নির্মাণ করা হয়েছে।
এখন এসব ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানো শুরু হলে পরিবেশদূষণের পাশাপাশি ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, এসব ইটভাটা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে। ইট পোড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রজাতির কাঠ সংগ্রহ করে ইটভাটায় স্তূপ করে রাখা হয়েছে।
ভাটায় কাঠ পোড়ানো শুরু হলে ভাটার চারপাশের কৃষিজমি ক্ষতির মুখে পড়বে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো ইটভাটা কাঠ ব্যবহার করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ইটভাটার শ্রমিকদের ভাষ্য, নিয়মানুযায়ী কয়লা দিয়ে ইট পোড়ানোর কথা থাকলেও মূলত কাঠ দিয়েই ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি ভাটায় দৈনিক ৩৫০ থেকে ৪০০ মণ জ্বালানি কাঠ পোড়ানো হবে। আমতলীতে আটটি ড্রাম চিমনি ইটভাটায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
ইটভাটা মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় ২৯টি ইটভাটা আছে। এর মধ্যে ২১টি জিকজ্যাক ও ৮টি ড্রাম চিমনি ইটভাটা। চিমনি ইটভাটাগুলো মধ্যে আছে—আল্লার দান ব্রিকস, এমএমবি ব্রিকস, ফাইভ স্টার ব্রিকস, এইচআরটি ব্রিকস, আর এনকেএফ ব্রিকস, এমসিকে ব্রিকস, সাউদান ব্রিকস ও মৃধা ব্রিকস।
আমতলী উপজেলার কুকুয় ইউনিয়নের রায়বালা গ্রামের এমএমবি ব্রিকস নামের ড্রাম চিমনি ইটভাটায় কাঠের স্তূপ দেখা যায়। ইট পোড়ানোর জন্য এসব কাঠ সামাজিক বন থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। কাঠ জ্বালানি উপযোগী করার জন্য স্থাপন করা হয়েছে করাতকল।
রায়বালা গ্রামের এমএমবি ব্রিকস ইটভাটা থেকে ১০০ ফুট দূরত্বে বসবাস করেন মো. মামুন। তিনি বলেন, ‘এই ভাটার ইট পোড়ানো ধোঁয়ায় আমাদের বাড়ি ও আশপাশের কোনো বাড়ির গাছে ফল ধরে না।
রাতের ধোঁয়া কুয়াশার মতো নিচে পড়ে।’ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এমএমবি ইটভাটার পাশের বাসিন্দা এক নারী বলেন, তাঁদের ঘরবাড়ি, গাছপালা, ফসলি জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ধোঁয়ার কারণে তাঁরা শ্বাসকষ্টে ভুগছেন।
এমএমবি ইটভাটার মালিক আনোয়ার মৃধা বলেন, ‘আমরা এই বছর অনেক টাকা ব্যয় করেছি, এই বছর ভাটা চালিয়ে বন্ধ করে দেব। আমরা ইট পোড়ানোর জন্য কাঠ ইটভাটায় এনে রেখেছি।’
ইট পোড়ানোর ধোঁয়ায় মানুষের শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি, চোখ দিয়ে পানি পড়াসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয় বলে জানালেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহারাব উদ্দীন।
তিনি বলেন, এসব ইটভাটা জনশূন্য এলাকায় স্থাপিত হলে ভালো হয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপিত হলে জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি থাকে।
আমতলী উপজেলায় বেশ কিছু অবৈধ ইটভাটা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় পরিচালক আবদুল হালিম।
তাঁর ভাষ্য, অচিরেই অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। এ ছাড়া কোনো ইটভাটায় যদি ইট পোড়ানোর জন্য কাঠের ব্যবহার হয়, তাহলে ভাটামালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কে এম আবদুল্লা বিন রশিদ বলেন, ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানি হিসেবে কাঠ পোড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ। ইট পোড়ানো কাজে যদি জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করা হয়, তাহলে ইটভাটার মালিকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।