40 C
ঢাকা, বাংলাদেশ
দুপুর ২:৫৬ | ২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বঙ্গাব্দ
গ্রীন পেইজ
অবশেষে ৩০ ঘণ্টা পর নিভেছে সুন্দরবনের আগুন
বাংলাদেশ পরিবেশ

অবশেষে ৩০ ঘণ্টা পর নিভেছে সুন্দরবনের আগুন, পুড়েছে ৩ একর বনভূমি

অবশেষে ৩০ ঘণ্টা পর নিভেছে সুন্দরবনের আগুন, পুড়েছে ৩ একর বনভূমি

দু’দিন ধরে জ্বলার পর অবশেষে ৩০ ঘণ্টা পর নিভেছে সুন্দরবনের আগুন। ফায়ার সার্ভিস বলছে,এই আগুনে অন্তত তিন একরের বেশি বনভূমি পুড়ে গেছে ছারখার হয়েছে।

তবে আগুর লাগার কারণ সম্পর্কে এখনও কিছু জানা যায়নি তবে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, জেলেদের ফেলে যাওয়া জ্বলন্ত বিড়ি থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে৷ সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, “মঙ্গলবার বিকাল ৫টার দিকে আগুন পুরোপুরি নিভে গেছে বলে মনে করা হচ্ছে৷

আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেওয়া ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় গ্রামবাসীরা ফিরে গেছে৷ আগুনে বনভূমি পুড়ে যাওয়া এলাকায় মূল্যবান কোনো গাছপালা ছিল না ৷ ”এই নিয়ে গত ১৯ বছরে ২৫ বার আগুন লাগল সুন্দরবনে। যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৮০ একর বনভূমি।



স্থানীয়রা বলছেন, ওই বনাঞ্চলের পাশে রয়েছে মরা ভোলা নদী। সেই নদী দিয়ে সবসময় মাছ ধরতে যান জেলেরা আর তাদের ফেলে যাওয়া বিড়ির টুকরো থেকে আগুন ধরে থাকতে পারে।

গত সোমবার (৩রা মে) বেলা ১০টার পর সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ি এলাকার ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টে আগুন লাগার খবর পাওয়া৷ মঙ্গলবার (০৪ মে) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে একটানা বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বাগেরহাট ফায়ার সার্ভিস পানি ছিটিয়ে সম্পূর্ণ আগুন নিভিয়ে ফেলে তবে আগুন লাগার স্থান থেকে জলাশয় দূরে থাকায় পানি সংকটের কারণে আগুন নেভাতে সময় লেগেছে তবে সোমবার গভীর রাত ও মঙ্গলবার দুপুরের বৃষ্টি আগুন নেভানোর কাজে দারুণ সহযোগীতা করেছে। তবে আবার ধোঁয়া দেখা দেওয়ায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে ওই এলাকায় আবারও পানি ছিটানো শুরু করে তারা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স বাগেরহাট স্টেশনের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, ‘সোমবার সকাল থেকেই বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন স্থান থেকে কালো ধোঁয়া দেখা যাচ্ছিল। তবে তখন আগুন সেভাবে ছিল না। দুপুরের দিকে হঠাৎ হঠাৎ বিভিন্ন স্থানে আবারও দাউদাউ করে আগুন জ্বলে ওঠে।

এর কিছু সময় পর থেকে শরণখোলা ছাড়াও আমাদের মোরেলগঞ্জ ও সদরের ২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে। এখানে অবস্থা তুষের আগুনের মতো। জ্বলছে, নিভছে, আবার জ্বলছে। এখন নিয়ম হলো পানি দেওয়া। আমরা পর্যাপ্ত পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তবে বিপদটা হলো মাটির ওপর যে শুকনো পাতাগুলো আছে, এর নিচে সুড়ঙ্গপথের মতো। তল থেকে আগুন ছড়াচ্ছে।

সেভাবে দেখা না গেলেও ধোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুকনো পাতার মাঝে আগুন নিচ থেকে ছড়াচ্ছে। আগুনের খুব কাছাকাছি পানির উৎস না থাকায় ভোলা নদী থেকে ২৫টি পাইপ লাগিয়ে আগুনের ওই স্থানে পানি নিতে হচ্ছে।’

তদন্ত কমিটির প্রধান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) জয়নাল আবেদিন বলেন, আগুনে ৩০ ঘণ্টা ধরে জ্বলতে থাকা আগুনে বনের ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণে কাজ শুরু করেছি৷ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমরা কাজ শেষ করে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিব।

এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবনের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্চের ধানসাগর স্টেশনের টহল ফাঁড়ি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডে তিন শতাংশ বনভূমি পুড়ে যায়। এ নিয়ে গেল ২০ বছরে সুন্দরবনে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। সুন্দরবনে একের পর এক আগুন লাগার ঘটনায় ক্ষোভ ও হাতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীরা।

বন সংলগ্ন রসুলপুর গ্রামের মো. আফজাল হাওলাদার বলেন, সুন্দরবন আমাদের মায়ের মত আর বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ঢাল স্বরূপ । সুন্দরবন আমাদের আগলে রাখে পাশাপাশি সুন্দরবনের ওপর নির্ভর করে আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু সুন্দরবনে একের পর এক যে অগ্নিকাণ্ড ঘটছে, তা আমাদের দারুণভাবে দুশ্চিন্তার মধ্যে নিক্ষেপ করছে। এসব আগুনে শুধুমাত্র সুন্দরবনের গাছ পুড়ে ছাই হয় না, সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণীও হুমকিতে পড়ে। এতবার সুন্দরবনে আগুন লাগলেও আগুন লাগার কারণও আমাদের মত সাধারণ মানুষকে জানানো হয় না।”



এসময় সুন্দরবন রক্ষায় আগুনের বিষয়ে আরও বেশি সতর্ক হওয়ার দাবি জানান তারা।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, বাগেরহাটের উপ-সহকারী পরিচালক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, সবার প্রচেষ্টায় দাসের ভারানি এলাকায় দৃশ্যমান সব আগুন আমরা নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এখন আর কোথাও আগুন নেই। তবে ওই জায়গাটিতে শুকনো পাতার অনেক পুরু স্তূপ রয়েছে। যার ফলে কোথাও সুপ্ত আগন থাকতে পারে।

যেহেতু দৃশ্যমান কোনো আগুন নেই, তাই আমরা অভিযান সমাপ্ত করেছি। এরপরেও কোথাও যদি আগুন দেখা যায়, সেক্ষেত্রে বনবিভাগ আমাদের জানালে, আমরা আগামীকাল আবার পানি দেওয়ার ব্যবস্থা করব।

ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে গোলাম সরোয়ার আরও বলেন, আগুনে দাসের ভারানি এলাকার অন্তত তিন একর বনভূমি পুড়ে গেছে। ছোট গাছ, লতাপাতাসহ বেশকিছু বড় গাছ পুড়ে গেছে।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় আমরা আগুন নেভাতে সক্ষম হয়েছি। এরপরেও কোথাও কোনো সুপ্ত আগুন থাকলে, তা নেভানো হবে। প্রয়োজনে আবারও ফায়ার সার্ভিসের সহযোগিতা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে বনরক্ষীদের টহল জোরদার করা হয়েছে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের ২৪ নম্বর কম্পার্টমেন্টে আবারও আগুন দেখা যাচ্ছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আগুন সম্পূর্ণ নেভানো হয়েছে বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। তবে বিক্ষিপ্তভাবে বনের ওই অংশে ধোঁয়া দেখা যাওয়ায় আজ বুধবার সকালে বন বিভাগ ও শরণখোলা ফায়ার সার্ভিস আবার আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে।

সুন্দরবনে এ নিয়ে গত প্রায় দুই দশকে ২৩ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর আগের ২২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ‘৭১ একর’ বনভূমির নানা গাছ, গুল্ম-লতা পুড়ে গেছে। এসব অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা খতিয়ে দেখতে বিভিন্ন সময়ে বন বিভাগের গঠিত তদন্ত দল নাশকতা, অসচেতনতা, অবহেলায় ফেলে দেওয়া বিড়ি বা সিগারেটের আগুনকে প্রথমিক ভাবে দায়ী করেছে।

বনকে সুরক্ষা দিতে বন ব্যবহারকারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি, বন-সংলগ্ন মরে যাওয়া নদ-নদী খনন এবং সীমান্ত এলাকায় বেড়া ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণের সুপারিশ করেছিল তদন্ত কমিটিগুলো। তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়িত হয়নি উল্লেখ করে বন বিভাগ, স্থানীয় লোকজন ও পরিবেশবাদীরা বনজ সম্পদ সুরক্ষিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।



সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের নথি থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০০২ সালে সুন্দরবনের পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের কটকায় একবার, একই রেঞ্জের নাংলী ও মান্দারবাড়িয়ায় দুবার, ২০০৫ সালে পচাকোড়ালিয়া, ঘুটাবাড়িয়ার সুতার খাল এলাকায় দুবার, ২০০৬ সালে তেড়াবেকা, আমুরবুনিয়া, খুরাবাড়িয়া, পচাকোড়ালিয়া ও ধানসাগর এলাকায় পাঁচবার, ২০০৭ সালে পচাকোড়ালিয়া, নাংলি ও ডুমুরিয়ায় তিনবার, ২০১০ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১১ সালে নাংলীতে দুবার, ২০১৪ সালে গুলিশাখালীতে একবার, ২০১৬ সালে নাংলী, পচাকোড়ালিয়া ও তুলাতলায় তিনবার, ২০১৭ সালে মাদ্রাসারছিলায় একবার এবং সবশেষ চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি ধানসাগর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।

২২ বারের অগ্নিকাণ্ডে ৮১ একর জমির প্রায় ৬৬ শতাংশ বনজ সম্পদের (সুন্দরী গাছসহ বিভিন্ন লতা-গুল্ম) পুড়ে যায়, যার আর্থিক মূল্য ১৮ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩৩ টাকা বলে বন বিভাগ জানিয়েছে।

সর্বশেষ সুন্দরবনে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে গতকাল সন্ধ্যায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করেছে বন বিভাগ।

শরণখোলা রেঞ্জের এসিএফ মো. জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে গঠিত কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম ও শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা আবদুল মান্নান। কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কাছে (ডিএফও) প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

“Green Page” কে সহযোগিতার আহ্বান

সম্পর্কিত পোস্ট

Green Page | Only One Environment News Portal in Bangladesh
Bangladeshi News, International News, Environmental News, Bangla News, Latest News, Special News, Sports News, All Bangladesh Local News and Every Situation of the world are available in this Bangla News Website.

এই ওয়েবসাইটটি আপনার অভিজ্ঞতা উন্নত করতে কুকি ব্যবহার করে। আমরা ধরে নিচ্ছি যে আপনি এটির সাথে ঠিক আছেন, তবে আপনি ইচ্ছা করলেই স্কিপ করতে পারেন। গ্রহন বিস্তারিত