এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকি হাওর। ১৯৯৮ সালে পরিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) হিসেবে হাকালুকি হাওরকে ঘোষণা করা হয়। এই হাওরকে মিঠাপানির মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র বলা হয়। ২০০১ সাল থেকে ২০১৪ হাওর উন্নয়নে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করলেও গত প্রায় ৫ বছর থেকে হাওরটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
পরিবেশ বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন হুইপ থাকাকালে করা সুপারিশে বাতিল হলো হাকালুকি হাওরের ২টি মৎস্য অভয়াশ্রম। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সায়রাত অধিশাখা হতে গত ২৭ জুন উপসচিব মো. তাজুল ইসলাম মিয়া ‘বাইয়া’, ‘উত্তর গজুয়া ও দক্ষিণ গজুয়া’ বিলকে জলমহাল অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন হতে প্রত্যাহার করা হয়। একই দিনে বিলগুলো ইজারা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
হাকালুকি হাওর তীরের বড়লেখা উপজেলার বাসিন্দা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু বিষয়কমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন মন্ত্রিত্ব পাওয়ার পর মানুষ আশায় ছিলেন হাওর উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ বিশেষ উন্নয়ন পরিকল্পনার। কিন্তু মানুষের সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে। উন্নয়ন তো দূরের কথা বরং উল্টো অভয়াশ্রম বাতিল হওয়ায় হুমকির মুখে পড়বে মৎস্য সম্পদসহ জীববৈচিত্র্য।
হাকালুকি হাওরে ২০১০ সালে ৫টি এবং ২০১১ সালে ১২ জলমহালকে অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ছাড়াও বেসরকারি সংস্থা এই অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের কাজ করে। ২০১১ সালে ১২টি জলমহালের মধ্যে শুরুতে ২টি জলমহালকে ইজারা দেয়া হয়। ফলে গত ৭-৮ বছর থেকে ১৫টি জলমহাল অভয়াশ্রম হিসেবে আছে।
এসব অভয়াশ্রমের কারণে হাকালুকি হাওরের বিপন্ন প্রজাতির মাছের বংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি মাছের উৎপাদনও বেড়েছে কয়েকগুণ। ফলে হাওরের মাছ লুটেরাদের লুলোপ দৃষ্টি পড়ে অভয়াশ্রমগুলোর প্রতি। ওইসব লুটেরাদের ইন্ধনে ২০১৮ সালে বড়লেখা উপজেলা জলমহাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় গত ১৪ জুন এবং মৌলভীবাজার জেলা জলমহাল কমিটির সভায় গত ১৪ আগস্ট হাকালুকি হাওরের অভয়াশ্রম ঘোষিত বাইয়া বিল ও উত্তর গজুয়া দক্ষিণ গজুয়া বদ্ধ বিল অভয়াশ্রমকে ইজারা প্রদানের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়। সর্বশেষ ২০১৯ সালেল ৮ মে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক তোফায়েল ইসলাম অভয়াশ্রম দুটিকে অভয়াশ্রম ঘোষণা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন হতে প্রত্যাহারের চ‚ড়ান্ত চিঠি দেন।
এদিকে মন্ত্রণালয়ে দুটি অভয়াশ্রম ইজারা দেয়ার সুপারিশের খবর জানতে পেরে ২০১৮ সালে ১০ অক্টোবর যধিষ্টিপুর বাদেদৈউলী ইসিএ ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মো. মরম আলী বিল দুটি ইজারা না দিয়ে অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের জন্য আবেদন করেন। এরপর ২৬ নভেম্বর তিনি জেলা প্রশাসক মৌলভীবাজারের কাছে অভয়াশ্রম দুটি রক্ষার জন্য আবেদন করেন।